(১) ফযর ও আসরের সালাত সঠিক সময়ে আদায় করাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘‘যে ব্যক্তি দুইটি ঠান্ডা সময়ের (অর্থাৎ, ফযর ও আসর) সালাতের হেফাজত করবে, সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সহীহ বুখারীঃ ৫৭৪, সহীহ মুসলিমঃ ১৪৭০। এই দুইটি সময়ে ব্যস্ততা বা ঘুমের কারণে অনেকেই উদাসীন হয়ে সালাত কাযা করে ফেলে। একারণে এই দুইটি সালাত হেফাজত করার বিশেষ ফযীলত হিসেবে সে জান্নাতে যাবে।
(২) ইশা ও ফযরের সালাত জামাতের সহিত আদায় করাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইশা সালাতের জামাতে হাযির হবে, তার জন্য অর্ধেক রাত পর্যন্ত কিয়াম (নফল সালাত আদায়) করার সমান নেকী হবে। আর যে ব্যক্তি ইশা সহ ফজর সালাত জামাতের সহিত আদায় করবে, তার জন্য সারারাত ধরে কিয়াম করার সমান নেকী হবে।” সহীহ মুসলিমঃ ৬৫৬, তিরমিযীঃ ২২১, আবু দাউদঃ ৫৫৫, আহমাদ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিকদের নিকট সর্বাধিক কঠিন ও ভারী সালাত হচ্ছে ইশা ও ফজরের সালাত। এই দুই সালাত আদায়ের মধ্যে কি পরিমান কল্যাণ ও সওয়াব রয়েছে, যদি তারা সে সম্পর্কে জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা এই দুই সালাতের (জামাতে) অংশগ্রহণ করত।” সহীহ বুখারীঃ ৬৫৭, সহীহ মুসলিমঃ ৬৫১।
(৩) ফযরের সালাত আদায় করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়ঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফযরের সালাত আদায় করলো, সে আল্লাহর জিম্মায় বা দায়িত্বে চলে গেলো।” সহীহ মুসলিমঃ ১৫২৫, তিরমিযীঃ ২২২, ইবনু মাজাহঃ ৩৯৪৫।
(৪) কষ্টের সময় সুন্দরভাবে ওযু করার ফযীলতঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “গুনাহর কাফফারার জন্য আমল হচ্ছেঃ (ক) (জামআ’তে) সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা, (খ) জামআ’তের জন্য পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যাওয়া, (গ) কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে ওযু করা। যে ব্যক্তি এই আমলগুলো করবে, তার জীবন হবে কল্যাণময়, আর মৃত্যুও হবে কল্যাণময়। আর (এই আমলগুলোর বিনিময়ে সে তার গুনাহ থেকে এমনভাবে পবিত্র হবে) যেই দিন তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন, গুনাহর ক্ষেত্রে তার অবস্থাও হবে ঠিক সেই দিনের মত (নিষ্পাপ)।” জামি তিরমিযীঃ ৪/১৭৩-১৭৪; হাদীস নং-৩২৩৪। ইমাম তিরমিযী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটিকে ‘হাসান গরীব’ বলেছেন। মুহা’ম্মদ নাসিরউদ্দীন আলবানী (রহিঃ) হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
(৫) ফযর সালাত কাযা করলে সেই দিনে বরকত কমে যাবে, একারণে মনে বিষণ্ণতা ও অনুতাপ সৃষ্টি হবেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ ঘুমাতে যায়, শয়তান তখন তার মাথায় তিনটা গিঁট লাগিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিঁট লাগানোর সময় সে বলে, “এখনো অনেক রাত্র বাকী আছে” অথাৎ তুমি শুয়ে থাক। যখন সে জেগে উঠে, সে যদি আল্লাহর যিকর করে (অর্থাৎ আল্লাহকে স্মরণ করে), তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। অতঃপর সে যদি ওযু করে, তাহলে আরো একটি গিঁট খুলে যায়। আর সে যদি সালাত আদায় করে, তাহলে সবগুলো গিঁট খুলে যায় এবং তার সকালটা হয় আনন্দ ও উদ্দীপনার সহিত। আর সে যদি (ঘুম থেকে না উঠে, আল্লাহকে স্মরণ না করে, ওযু না করে এবং ফযরের নামায না পড়ে), তাহলে তার সকালটা হয় ক্লান্ত ও বিষাদময়।” সহীহ বুখারীঃ ১১৪২, সহীহ মুসলিমঃ ৭৭৬, নাসায়ীঃ ১৬১০।
(৬) ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমিয়ে থেকে ফরয সালাত কাযা করলে তার শাস্তির বিবরণঃ একবার এক স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে কয়েকটি পাপের শাস্তি দেখানো হয়। উল্লেখ্য, নবী-রাসুলদের সব স্বপ্ন ওয়াহী, অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য স্বপ্ন। একদিন সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আজ রাতে আমার কাছে দুইজন আগন্তুক এসেছিল। তারা আমাকে বললো, আমাদের সাথে চলুন। আমি তাদের সাথে গেলাম। আমরা এমন এক লোকের কাছে পৌঁছলাম, যে চিত হয়ে শুয়ে ছিলো। অপর এক ব্যক্তি পাথর নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে শুয়ে থাকা ব্যক্তির মাথায় আঘাত করছে এবং থেঁতলে দিচ্ছে। যখন সে পাথর নিক্ষেপ করছে তা গড়িয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। লোকটি গিয়ে পাথরটি পুনরায় তুলে নিচ্ছে। এবং তা নিয়ে ফিরে আসার সাথে সাথেই লোকটির মাথা পুনরায় পূর্বের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। সে আবার লোকটির কাছে ফিরে আসছে এবং তাকে পূর্বের মতো শাস্তি দিচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার সংগী দুইজনকে জিজ্ঞাস করলামঃ সুবহা’ন-আল্লাহ! এরা কারা? তারা পরবর্তীতে উত্তর দেন, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যারা কুরআন মুখস্থ করে তা পরিত্যাগ করে এবং ফরয নামায না পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে।” সহীহ বুখারী, রিয়াদুস সালেহীনঃ ১৫৪৬।
#########
আমিন মুনশি : হাদিস শরিফে এসেছে- (১) ফজরের নামাজে দাঁড়ানো, সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সমান। ‘যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো।’ (মুসলিম শরিফ)
(২) ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।’ (মুসলিম)
(৩) ফজরের নামায কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দিবে-
‘যারা রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদেরকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও।’ (আবু দাউদ)
(৪) সরাসরি জান্নাত প্রাপ্তি-
‘যে ব্যক্তি দুই শীতল (নামাজ) পড়বে, জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর দুই শীতল (নামাজ) হলো ফজর ও আসর।’ (বুখারী)
(৫) রিজিকে বরকত আসবে-
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন, সকালবেলার ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাঁধা দেয়। কেননা তখন রিজিক বন্টন করা হয়।
(৬) ফজরের নামাজ পড়লে, দুনিয়া আখেরাতের সেরা বস্তু অর্জিত হয়ে যাবে-
‘ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (তিরিমিযি)
(৭) সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে-
‘তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফিরিশতাদেরকে প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদেরকে কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদেরকে নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনো তারা নামাজরত ছিল।’ (বুখারি)
(৮) ফজরের নামাজ দিয়ে দিনটা শুরু করলে, পুরো দিনের কার্যক্রমের একটা বরকতম সূচনা হবে-
‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্যে, তার সকাল বেলায় বরকত দান করুন।’ (তিরমিযী)
#########
নামাজ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় নবী হযরম মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার নামাজের জামাতে হাযির হবে, তার জন্য অর্ধ-রাত পর্যন্ত কিয়াম করার (অর্থাৎ নামাজে দাঁড়িয়ে থাকা) নেকি হবে। আর যে এশাসহ ফজরের নামাজ জামাতে পড়বে, তার জন্য সারা রাতব্যাপী কিয়াম করার সমান নেকি হবে।” (মুসলিম শরীফ)। অপর একটি হাদিসে রাসুল সা. বলেন, “যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত কিয়াম (ইবাদত) করল। আর যে ফজরের নামাজ জামাতসহ আদায় করল, সে যেন সারা রাত নামাজ পড়ল।” (মুসলিম শরীফ) উমার ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় অযীফা (দৈনিক যথা নিয়মে তাহাজ্জুদের নামাজ) অথবা তার কিছু অংশ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, অতঃপর যদি সে ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য তা এমনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, যেন সে তা রাতেই পড়েছে। (মুসলিম শরীফ)। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত।” (বুখারি)। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যদি লোকে এশা ও ফজরের নামাজের ফজিলত জানতে পারত, তাহলে তাদেরকে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা অবশ্যই ঐ নামাজদ্বয়ে আসত।”(বুখারি) আবু যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।” (মুসলিম) জাবের ইবনে সামরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. যখন ফজরের নামাজ সমাপ্ত করতেন তখন ভালোভাবে সূর্যোদয় না হওয়া অবধি নামাজ পড়ার জায়গাতেই দুই বা গুটিয়ে (বাবু হয়ে) বসে থাকতেন।’ (মুসলিম)।
#হে অাল্লাহ তুমি অামাদেরকে সুন্দর ভাবে ভালো অামলগুলো করার তাওফিক দিন।
0 Comments