আল্লাহর সাথে পার্সোনাল রিলেশানশীপ বিল্ড আপ করার মত শান্তি - দ্বিতীয় কিছুতে থাকতে পারে, এমন কিছু এখন পর্যন্ত দুনিয়ার জমীনে সৃষ্টি হয় নি। আপনার যেকোন সমস্যা - হোক তা সামান্য লবণ, জুতার ফিতা, পাবলিক স্পিকিং থেকে শুরু করে বিশাল বিজনেসে হাত দেওয়া ইত্যাদির মত কাজে আল্লাহর সাথে কথা বলার অভ্যাস যত বাড়াবেন নিজের ভেতর শান্তি কাজ করবে।
আমাদের যাবতীয় কষ্টের সূচনা হয় মানুষের উপর অযথা আশা ভরসার কারণে। মানুষের দোষ দিয়ে লাভও নেই। কারণ যেই আল্লাহ আমাকে আপনাকে সৃজন করেছেন তিনিই কুর'আনে বলেছেন মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ। যেই আল্লাহ আমাদের দেহে রূহ দিয়েছেন, ছোট থেকে এখন পর্যন্ত বেড়ে উঠতে সাহায্য করেই চলেছেন তাঁর জন্য কয়বার "আলহামদুলিল্লাহ" বলেছি? বলুন তো দেখি? তবে? সেখানে আমরা কিভাবে আরেকজন মানুষের কাছে আমাদের কাজের প্রশংসা দাবি করতে পারি? আমাদের কাজের ন্যায্য মূল্যায়ন দাবি করতে পারি?
যখন হাঁটতে চলতে আল্লাহর সাথে নিজের আনন্দ, কষ্ট শেয়ার করতে পারবেন সেই সময়ের মত মধুর সময় আর হয় না। শুধু কষ্ট না কিন্তু আনন্দের সময়গুলোও শেয়ার করবেন আল্লাহর সাথে। আল্লাহ কিন্তু আমাদের একদম মনের খবরও রাখেন। আপনি ভেবে দেখুন - কঠিন কোন কাজে হাত দিচ্ছেন, আপনার সাথে সকল রাজার মহারাজা সাথে আছেন। যিনি চাইলে পুরো দুনিয়া তোলপাড় করে দিতে পারেন, যাঁর ইশারায় সব পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে সেই আল্লাহ সুবওয়ানাহু তা'আলা আপনার সাথে আছেন, আপনার গার্জিয়ান হিসেবে। আপনার সেইফ হাউজ হিসেবে। আলহামদুলিল্লাহ।
তবে আল্লাহর সাথে অনেকে "চান্স" নিতে চায়। আগেই বলেছি, আল্লাহর সাথে কথা বলাটা হবে সবসময়ের জন্যে। কেবল খারাপ সময়ের জন্যে না। "মা" নাকি সন্তানের চেহারা দেখেই বুঝে যান তার মনের ভিতর কি চলছে। আর আল্লাহ - যিনি সেই দুনিয়ার আলো দেখার আগেই আমাদের দেখভাল করেছেন। এখনো করছেন। তিনি আমাদের মনের অবস্থা জানবেন না - তাই কি হয়?
"আর যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়, শুয়ে বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তা থেকে মুক্ত করে দেই, সে কষ্ট যখন চলে যায় তখন মনে হয় কখনো কোন কষ্টেরই সম্মুখীন হয়ে যেন আমাকে ডাকেইনি। এমনিভাবে মনঃপুত হয়েছে নির্ভয় লোকদের যা তারা করেছে।"
(সুরা ইউনুস : আয়াত ১২)
দেখুন একদম আমাদের বাস্তব অবস্থা। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। আল্লাহর উপস্থিতিটা হতে হবে সবসময়ের জন্য।
দুনিয়ার সব মানুষ আমাকে ভুল বুঝতে পারে, আমি সঠিক হলেও জোর করে মিথ্যা আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে, কাউকে বেশি বিশ্বাস করলে সেও একদিন সেই বিশ্বাস ভেঙ্গে দিতে পারে, কারো জন্যে জান প্রাণ এক করে "স্যাক্রিফাইস" করলে সেও কোন একদিন বেঁকে বসতে পারে। অনেকে বলে পৃথিবী নাকি "গিভ এন্ড টেইক" নীতিতে চলে। নাহ! সবসময় চলে না। সে কারণে মানুষ দু:খ পায়, বুকে কষ্টের বোঝা চাপে, দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কারণ? কারণ সে যা দিয়েছিল বিনিময়ে তেমন কিছু আশা করেছিল। তবে পায় নি। এজন্যে।
অথচ আল্লাহ হলেন এগুলোর সম্পুর্ণ বিপরীত। প্রথম কথা হল, আল্লাহ আমাদের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ নিয়ামত দিয়ে যাচ্ছেন তার কিছু বিনিময় দেওয়া সমগ্র মানব - জিন জাতি এক হলেও দেওয়া সম্ভব না। উপরন্তু আল্লাহ এমন মহান যে তিনি শেষ রাতে প্রথম আকাশে চলে আসেন, নিজে সেধেই জিজ্ঞাসা করেন কোন বান্দার কি লাগবে। যদিও তখন অধিকাংশ মানুষই ঘুমের ঘোরে বিভোর। আল্লাহর কাছে চাইলেই বরং আল্লাহ খুশি হন। আমরা চাইতে জানি না - দোষ আমাদের। সাথে সাথে না পেলে অস্থির হয়ে যাই - দুয়া করা ছেড়ে দিই, দোষ আমাদের। আল্লাহ দুয়া কবুল করবেনই। এখানে না পেলেও তা পরকালের জন্যে জমা হয়ে থাকবে।
তবে কেন আমরা আল্লাহর কাছেই দুয়া করছি না? আমাদের বুকফাটা কষ্টের কথাগুলো, লজ্জার কথাগুলো, ব্যাথার কথাগুলো, শুকিয়ে যাওয়া চোখের পানিগুলো কেন আল্লাহর জন্যে নিবেদন করছি না? যেই কথা কেউ শুনবে না, কারো শোনার সময়ও নেই - সেই কথাগুলো আল্লাহ শোনার জন্যে অপেক্ষা করছেন। প্রথম পদক্ষেপটা বান্দার নিজেকেই যে নিতে হয়।
#সংগৃহীত
0 Comments