Ad

গিবত থেকে বাঁচতে ১০টি বিষয় মাথায় রাখবো। ইনশাআল্লাহ, গিবত থেকে বাঁচতে পারবো।


islamic post
islamic post


(১) প্রয়োজন ব্যতীত একটি কথাও না বলা:
গিবত থেকে বাঁচার সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো, প্রয়োজন ব্যতীত একটি কথাও না বলা। আমরা যখন জবানকে লাগামহীন করে দিই, তখনই গিবতে জড়িয়ে পড়ি—ইচ্ছাকৃত হোক বা অবচেতন মনে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, সে যেন ভালো কথা বলে নতুবা চুপ থাকে।’’
[ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬১৩৬]
ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, ‘‘কল্যাণলাভের বিচারে যদি কথা বলা বা না বলা উভয়ই সমান হয়, তবে সেক্ষেত্রে নিরব থাকাই সুন্নাত। কেননা, স্বাভাবিক জায়েয কথাবার্তাও ক্ষেত্রবিশেষে মানুষকে মাকরুহ বা হারামের দিকে ধাবিত করার আশঙ্কা রাখে; বরং অভ্যাসবশত অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুলের আশঙ্কাই প্রবল।’’
[জবানের হেফাজত, পৃষ্ঠা: ২৮]
(২) ভেবেচিন্তে কথা বলা:
ইমাম শাফিয়ি (রাহ.) বলেন, ‘‘মানুষ যখন কথা বলতে চায়, তখন তার উচিত আগে ভেবে নেওয়া। যদি (কথা বলা) স্পষ্টত কল্যাণকর (মনে) হয়, তাহলে বলবে; আর যদি সন্দেহ হয়, তাহলে স্পষ্ট কল্যাণ না দেখা পর্যন্ত কথা বলবে না।’’
[জবানের হেফাজত, পৃষ্ঠা: ২৮]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘সে (মানুষ) যা-ই উচ্চারণ করে, তা (লিখে রাখার জন্য) তার কাছে রয়েছে সতর্ক প্রহরী।’’
[সুরা কাফ, আয়াত: ১৮]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জিহ্বা ধরে বলেন, ‘‘একে সংযত রাখো।...মানুষকে তো তার জিহ্বার ফসলের (অপব্যবহারের) কারণেই অধোমুখী করে জা*হা*ন্না*মে নিক্ষেপ করা হবে!’’
[ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৬১৬; হাদিসটি সহিহ]
(৩) অপছন্দের লোকগুলোকে আমরা আমাদের কষ্টার্জিত নেকিগুলো দিয়ে দিচ্ছি?
গিবতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিস্ময়কর আইরনিটা কি জানেন? আমরা যে লোকগুলোকে অপছন্দ করি, সাধারণত তাদেরই গিবত করি; অথচ এর বিনিময়ে তারা আমাদের নেকিগুলো নিয়ে যাচ্ছে! আফসোস! আমরা যদি উপলব্ধি করতাম!
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যদি কেউ (গিবত, গালি বা অপমান করে) কারো মর্যাদা নষ্ট করে অথবা অন্য কোনোভাবে কারো প্রতি জু*লু*ম করে থাকে, তবে সে যেন কিয়ামতের পূর্বে আজই তার থেকে মুক্তি নিয়ে নেয়। কারণ সেই দিন কোনো দিনার-দিরহাম (অর্থের বিনিময়) থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে, তবে তার জু*লু*মে*র পরিমাণ অনুসারে নেক আমল নিয়ে নেওয়া হবে (এবং ম*জ*লু*ম*কে এর দ্বারা বদলা দেওয়া হবে)। আর যদি তার নেক আমল না থাকে, তবে তার সাথির (যার অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে) পা*প নিয়ে তার কাঁধে চাপানো হবে।’’
[ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২৪৪৯]
প্রখ্যাত তাবে তাবিয়ি ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক (রাহ.) বলেন, ‘‘আমি যদি কারো গিবতে লিপ্ত হতাম, তাহলে আমার পিতা-মাতারই গিবত করতাম। কেননা তারা দুজনই আমার নেকি পাওয়ার অধিক হকদার।’’
[ইমাম ইবনু বাত্তাল, শারহু সাহিহিল বুখারি: ৯/২৪৫]
(৪) গিবতের প্র্যকটিস যেভাবে হয়:
গিবতের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবক হলো, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্য এবং সারাউন্ডিংস—যাদের সাথে তার ওঠাবসা। কারণ আমি দেখেছি, একজন মানুষ যখন গিবতকারীদের সাথে ওঠাবসা করে, তখন চাইলেও সে গিবত থেকে দূরে থাকতে পারে না। গিবত এক মজার জিনিস। আলোচনা জমানোর জন্য গিবতের চেয়ে লোভনীয় কিছু হতেই পারে না। এজন্য কোনোভাবেই এদেরকে গিবতের সুযোগ দেওয়া যাবে না। গিবত শুরু হওয়া মাত্রই এদের বাধা দিতে হবে। তাহলে এরা আপনাকে এটুকু সম্মান দিতে বাধ্য হবে যে, আপনার সামনে অন্তত গিবত করবে না।
(৫) গিবতকারীর গিবত থেকে আপনি নিজেও নিরাপদ নন; এটা মাথায় রেখে তাকে বাধা দিন।
একজন বিজ্ঞ মানুষ বলেছিলেন, ‘‘যে তোমার কাছে অন্যদের নিন্দা করে, সে তোমার নিন্দাও অন্যদের কাছে করবে।’’ সুতরাং গিবতের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি হওয়া উচিত। গিবতকারীকে কোনোভাবেই সঙ্গ দেওয়া যাবে না।
(৬) লজ্জা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলতে হবে।
আমরা অনেক সময় গিবতকারীকে বাধা দিতে সংকোচবোধ করি। ভাবি, সে মাইন্ড করবে বা সম্পর্ক খারাপ করবে। অথচ এটি একটি ভুল ধারণা। আমরা যদি নম্রভাবে গিবতকারীকে বাধা দিই এবং গিবতের ভয়াবহতা তুলে ধরি, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে মেনে নেবে বা চুপ হয়ে যাবে। আর চুপ না হলেও মনে মনে আপনার এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানাবে। আমার পরিচিত এক ভাই প্রায়ই গিবতে লিপ্ত হয়ে পড়েন। অথচ তিনি আমার কাছে ঠিকই এমন এক ভাইয়ের প্রশংসা করেছেন, যিনি তাকে গিবত করতে চাইলেই বাধা প্রদান করেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টিতেও (মানুষকে অখুশী করে হলেও) আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের মোকাবেলায় তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি তালাশ করে, আল্লাহ তাকে মানুষের দায়িত্বে ছেড়ে দেন।’’
[ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৪১৪; হাদিসটি সহিহ]
(৭) কারও ব্যাপারে যদি মন্দ কিছু বলতেই হয়, তাহলে তার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করবেন না। যেমন: আপনার এক কাজিন, দেখতে বেশ ভদ্র, কিন্তু এক মেয়ের সাথে যি*না*য় লিপ্ত। কেউ তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা করে না। তো, আপনি আমার সাথে বলছেন যে, ‘‘ভাই, মানুষ চেনা এত সহজ না। আমি একজনকে চিনি, যে সমাজে ভালো ও ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত, কিন্তু যি*না করে।’’ এই যে, আমাকে কথাগুলো বলেছেন, এতে কিন্তু আপনি গিবত করেননি। কারণ আমি সেই লোকটিকে চিনি নাই। আর যদি বলতেন, ‘‘আমার এক চাচাতো ভাই উপরে ফিটফাট, কিন্তু যি*না করে’’, তাহলে গিবত হতে পারতো। কারণ আমি হয়তো তখন অনুমান করে নিতে পারতাম যে, কার কথা বলা হচ্ছে। আর যদি সরাসরি নাম নিয়ে বলতো, তাহলে তো নিঃসন্দেহে গিবত হতো।
(৮) গিবত থেকে দূরে থাকা এবং গিবতের আলোচনা প্রতিহত করার পুরস্কার মাথায় রাখা:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গিবত প্রতিরোধ করে, তাকে জা*হান্না*ম থেকে মুক্ত করা আল্লাহর দায়িত্ব।’’
[ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৭৬৫০; শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ২৮৪৭; হাদিসটি সহিহ]
(৯) নিজের দোষগুলোর প্রতি লক্ষ করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; এবং প্ৰত্যেকের উচিত চিন্তা করা যে, সে আগামীকালের জন্য অগ্রিম কী পাঠিয়েছে!’’
[সুরা হাশর, আয়াত: ১৮]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ কেউ অন্যের চোখে থাকা সামান্য খড়কুটোও দেখতে পায়, অথচ নিজের চোখে থাকা বৃক্ষটাও ভুলে যায় (চোখে পড়ে না)।’’
[ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৫৭৬১; শায়খ আলবানি, সহিহুল জামি’: ৮০১৩; হাদিসটি সহিহ]
(১০) গিবতের ভয়াবহতা জানা:
নবি সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘মিরাজের রাতে আমি এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখগুলো তামার তৈরি আর তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আঁ*চ*ড় মারছিলো। আমি বললাম, হে জিবরিল! এরা কারা?’’ তিনি বললেন, ‘‘এরা সেসব লোক, যারা মানুষের গোশত খেতো (গিবত করতো) এবং তাদের মানসম্মানে আ*ঘা*ত হানতো।’’
[ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৪৮৭৮; হাদিসটি সহিহ]
#গিবতে_সর্বনাশ (ষষ্ঠ পর্ব)
আগের পর্বগুলোর লিংক কমেন্টে দেওয়া হলো।
সংগৃহীত।
(Nusus)

Post a Comment

0 Comments