বিশ্ব আমীর হযরতজী মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ কান্ধলভী [দা.বা.]
অনুবাদ : সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ
শুরুর কথা...
যে মুহূর্তে করোনা ভাইরাস নামক আল্লাহর এক আযাবে সারা দুনিয়া কম্পিত, যে মুহূর্তে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমীর, শায়খুল ইসলাম, শায়খুল হাদীস হযরতজী মাওলানা সা’দ কান্ধলভী গোটা মানবজাতি ও মুসলিম উম্মাহকে একের পর এক দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে গত কয়েকদিনে হযরতজীর কয়েকটি বয়ানের সারাংশ সংক্ষিপ্তকারে তুলে ধরা হলো।
আজ মুসলমা দের সহীহ রাহবারির বড় অভাব।বিশ্বব্যাপি মুসলমান আজ নামাজ, তা’লীম, মসজিদ, মাদরাসা বন্ধ করে আযাব থেকে মুক্তি চাচ্ছে। এমনকি খানায়ে কাবা বায়তুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীসহ হাজার হাজার মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। লাখো মাদরায়ায় কুরআন-হাদীসের তা’লীম বন্ধ করে এই আযাব থেকে বাঁচার চেষ্টা চলছে। আজ হোক কাল হোক; আমাদের মৃত্যু আসবেই। এটাই বাস্তবতা এবং এটাই চূড়ান্ত সত্য। এই সত্যকে এড়িয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। করোনা’র কারণে আমরা যেভাবে স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছি, সেভাবে যদি আল্লাহর দিকে আমরা রুজু হতে পারতাম, কতই না ভালো হতো। করোনা’র ভয়ে যেভাবে আমরা খাদ্য গুদামজাত করছি; অন্তত পরকালের পাথেয় যদি সেভাবে জমানো শুরু করতাম, কতই না উত্তম হতো! আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও হতাশা বাসা বেঁধেছে। দুনিয়ার প্রায় প্রত্যেকে যে যেভাবে পারছে, বেঁচে থাকার শেষ উপায়টুকুকেও গ্রহণ করছে। অথচ চিরসত্য কথা এটাই যে, আমরা যতই মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা করি, মৃত্যু সঠিক সময়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হবে। আমরা কেন মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে চাই? আমরা কেন মৃত্যু নাম শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে যাই? কারণ, আমরা আমাদের মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য কোনো প্রস্তুতি নেইনি। আমরা দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত। দুনিয়ার আনন্দ-মজায় গাফিল হয়ে গেছি। ফলে আমরা মৃত্যুর নাম শুনলে ভয় পাই। মৃত্যুর আলোচনা শুনলে আতঙ্কিত হই ও বিরক্ত হই। ইচ্ছে করে স্কিপ করি।
অথচ আমাদের যদি মৃত্যুর প্রস্তুতি থাকতো, আমাদের যদি মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য তৈয়ারি থাকতো, আমাদের অন্তরে যদি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আকাঙ্খা থাকতো, তবে আমরা মৃত্যুকে উপহার ভেবে গ্রহণ করতাম। আমরা বড় বড় প্রাসাদ, অট্টালিকাকে ভালোবেসেছি, কিন্তু ভুলে গেছি কবরকে। আমরা নারীদের ভালোবেসে, জান্নাতের হুরদের ভুলে গিয়েছি। আমরা দুনিয়াকে ভালোবেসে জান্নাতকে ভুলে গিয়েছি। আমরা মাখলুকের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়েছি, আর আমাদের খালিক আল্লাহকে ভুলে গিয়েছি। এজন্য আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের তামান্না আমাদের অন্তরে নেই। অথচ যার অন্তরে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের তামান্না আছে, তার মত সুখী আর কেউ নেই। আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আকাক্সক্ষা বান্দার অন্তরের রোগসমূহ উপশম করে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আকাক্সক্ষা মানুষের দিল থেকে মাখলুকের ভয় বের করে দেয়। এটা অনেক বড় নেয়ামত। কারণ মাখলুকের ভয় মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে রাখে। আর মাখলুকের প্রতি নির্ভয়তা মানুষকে অনেক উঁচু মর্যাদায় পৌঁছে দেয়। আর এই জন্য প্রয়োজন ঈমান ও দাওয়াত ইলাল্লাহর মেহনত। ঈমান, আমল ও দুআকে যখন মুমিন বান্দা একত্রে জমা করে চলবে, তখন যে কোনো হালতে সে পেরেশান হবে না।
ঈমানী মেহনতের ফলে তার দিল ইতমিনান থাকবে। যে কোনো হালতের জন্য সে হাসি মুখে প্রস্তুত থাকবে। আল্লাহর দিকে, আমলের দিকে, মেহনতের দিকে দৌঁড়াবে। এই অবস্থায় যে কোনো পরিস্থিতি আসুক জীবন কিংবা মৃত্যুÑ তখন সে সফল। আলহামদুল্লিাহ! এই মুহূর্তে সারা দুনিয়ায় একটি জামাত এক আমীরের অধীনে এক মারকাজের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দ্বীনি দাওয়াতের কাজ করছে। তাদের মধ্যে নেই কোনো পেরেশানী, কিংবা হা-হুতাশ। আমীরের নির্দেশাবলির আলোকে তারা ঈমান ও আমলের মেহনতে নিজেদের মশগুল রাখছেন এবং পুরো মানবজাতির মুক্তি-কল্যাণের জন্য মেহনত ও ফিকির করছেন।
এই মুহূর্তে, আমীরুল মুমিনিন ফিত-তাবলীগ হযরতজী মুহাম্মদ সা’দ কান্ধলভী উম্মতের আমীর হিসেবে সহীহ রাহবারী দিয়েছেন। হযরতজী যে কথাগুলো আজ বলছেন, সারা দুনিয়ায় এই কথাগুলো বলার মানুষ আজ নেই। সারা দুনিয়ার আহলে হক উলামায়ে কেরামকে বারবার অনুরোধ করছেন, কোনো অবস্থায় যেন মসজিদের আমল বন্ধ না করা হয়। হযরতজীর সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি বয়ানের সার-সংক্ষেপ ও একটি চিঠি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। (অনুবাদক)
হযরতজী মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ কান্ধলভী [দা.বা.]-এর
গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা :
সমাধান কোন পথে?
বিপর্যয়ে মানুষ হালতের সমাধান জিজ্ঞেস করে। আজকাল মানুষ, অজিফা জিজ্ঞেস করে। এমন কোনো অজিফা বলে দিন, যেটা বসে বসে পড়লে হালাত দূর হয়ে যাবে। কেউ বলে, এই খতম করে নাও। কেউ বলে, ওই খতম করে নাও। আমিতো এটা ভাবি, যে হালত ফরজ ছুটে যাওয়ার কারণে এসেছে, সেটা কি কেবল অজিফা দিয়ে দূর হয়ে যাবে? আপনি একটু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করুন। হালত আসছে ফরজ ছাড়ার কারণে, আর তা ঠিক হয়ে যাবে শুধু কোনো অজিফা পড়ার মাধ্যমে? এটা কি চিন্তাশীলের কথা? পুরা রাত বসে বসে শুধু অজিফা পড়ে নিবে আর এই বিপর্যয় দূর হয়ে যাবে? কিছু পড়ে শুয়ে পড়লাম, আর উঠে ফজর পড়ে নিলাম। আর আল্লাহ এতেই হালাত পরিবর্তন করে দিবেন? যে ব্যক্তি এশার নামাজ ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, তার সারারাত নফল ইবাদতের নেকি মিলে। কেবল এসব আমলে হালত দূর হবে না। আযাবতো এসেছে এর চেয়ে বড় আমল ছেড়ে দেয়ার কারণে। মাশায়েখ-বুজুর্গের কাছে গিয়ে মানুষ আজ জিজ্ঞাসা করছে, হযরত! যে হালত চলছে মুসলমানের উপর, আমাকে কোনো অজিফা বলে দিন। প্রকৃতপক্ষে সবাইকে এটা বলা দরকার, হালাত আসছে সেই আমল ছুটে যাওয়ার কারণে, যার জন্য তুমি প্রেরিত হয়েছ। তুমি যাও, বের হয়ে পর তোমার ঘর থেকে আর মানুষকে দাওয়াত দিয়ে দ্বীনের উপর আনার জন্য মেহনত কর। গাফলতি থেকে মানবজাতিকে বের করে এনে আল্লাহর সাথে জুড়ে দাও। মাবুদ খুশি হয়ে যাবেন।
হালতে হযরতজী বলতেন...
আমি কি বলে বুঝাবো! তোমাদের বুঝে আসে কি না আসে! রাতে এটা ভাবছিলাম, ৪৬ সনে দেশ ভাগ হওয়ার ১ বছর পূর্বের কথা, ৪৬ সনে হযরতজী মাওলানা ইউসুফ [রহ.] বয়ানে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কছম খেয়ে বলছি, এখন অল্প পয়সা খরচ করে দেশের মধ্যে বের হয়ে যাও, আর না হয় সবকিছু রেখে দিয়ে দেশের বাইরে চলে যেতে হতে পারে। এটা ছিল ৪৬ এর বয়ান। কছম খেয়ে মজমার মধ্যে বলেছেন তিনি। তখন এক ব্যক্তি বেয়াদবী করেছে, দাঁড়িয়েছে মজমার মধ্যে, কে আমাদের বের করে দিবে? ৪৭সালে দেশ ভাগের সময় পুরা খান্দান, সব মাল, বস্তু, দোকান, ঘর, জমিনÑ সব ছেড়ে দিয়ে এমন অবস্থায় বের হয়েছে, কোনো জিনিস সাথে নিতে পারে নাই। বড় বড় হাবেলী, বড় বড় জমিদার সব ছেড়ে পালাল, মানুষ গ্রামকে গ্রাম ছেড়ে নিঃস্ব হয়ে হিজরত করল। এই কথা মনে পড়ছে গতকাল থেকে। তোমরা যদি নবীওয়ালা কাজকে এখনি কাজ না বানাও, তাহলে এই হালত থেকে বাঁচতে পারবে না।
উম্মতকে গাফলত থেকে বাঁচাও
এই সময়ে এটাই কথা। আমি তো নামাজ পড়ি, রোজা রাখিই। আরে, তোমার নামাজ রোজায় কি এই অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যাবে? তোমার নামাজ,-রোজা দিয়ে অবস্থা পরিবর্তন হবে না। তুমি অন্যদের নামাজ-রোজার উপর আনো, তো অবস্থা পাল্টাবে। আমি তোমাদের কুরআন-হাদীসের কথা সহজ সহজ করে বলছি। কুরআন-হাদীসে এটা দিয়ে ভরপুর। তোমাদের হালতে নিজের ব্যক্তিগত আমল দিয়ে হালত থেকে বের হতে পারবে না। তখনই তোমারা হালত থেকে বের হতে পারবে, যখন অন্যকে তোমরা গাফলত থেকে বের করবে। উম্মতকে গাফলত থেকে বাঁচাও, আল্লাহ হালতের সমাধান করে দিবেন।
অসুস্থ উম্মতের চিকিৎসা :
এজন্যই যখন পায়ের আঙ্গুলে জখম হয়, তো কেউ এটা বলে না যে, পায়ের আঙ্গুল অসুস্থ। বলে, অমুক ব্যক্তি অসুস্থ। অমুক ব্যক্তি অসুস্থ। কি, ভাই বলে না? অমুক ব্যক্তিটি অসুস্থ? আসলে পায়ের আঙ্গুলে রোগ হয়েছে। কিন্তু অসুস্থতার সম্পর্ক পুরা মানুষটার সাথেই করছে। বলছে মানুষটি অসুস্থ। আমার কথা বুঝে আসছে? হাদীসে এসেছে, সারা দুনিয়ার মুসলমান এক শরীরের মত। সারা দুনিয়ার কোনো কোণায় যদি মুসলমান বেদ্বীনিতে থাকে তাহলে মনে রেখ, তো সমস্ত মুসলমান অসুস্থ। যদি বেদ্বীনি কোনো এক দেশে কোনো এক কোণায় হয়, তো পুরো উম্মত অসুস্থ। এটা বলা হবে না যে, অমুক দেশের মুসলমান নামাজ ছেড়ে দিয়েছে। সারা শরীর সুস্থ, শুধু পায়ের আঙ্গুলে জখম। ডাক্তার বলে দিয়েছে, এই আঙ্গুলের চিকিৎসা যদি এখন না করা হয় বা এই আঙ্গুল যদি এখন কাটা না হয়, তাহলে এই রোগ বেড়ে যাবে। পরে পা কাটতে হতে পারে, এমনকি জীবনও শঙ্কাযুক্ত হতে পারে। কি ভাই? এমন হয় কি না? পুরা শরীর ঠিক রাখার জন্য সেই পায়ের আঙ্গুলের চিকিৎসা করতে হয়। তো আমরা ভেবে নিচ্ছি, অন্যরা নামাজ পড়ুক বা না পড়ুক, এতে আমার কি? ওর কবরে ও যাবে, আমার কবরে আমি যাব। কবরের লেনদেন তো পড়ে হবে, আগে দুনিয়াতে যে জাহান্নাম বানিয়ে রেখছে, এর কী হবে?
যমানার ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় :
হ্যাঁ? চিন্তা করার কথা। এক বেনামাজীর জন্য ৪০ ঘর পর্যন্ত সাহায্য আসে না, আর আপনার মহল্লায় ৪০ বেনামাজী, তো আল্লাহর সাহায্য কিভাবে আসবে? শুধু ইনফেরাদী আমলে মাসলাহ হাল হবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের সাহায্য তখনই করবেন, যখন তোমরা অন্যকে ঈমান ও আমলে ছালেহার উপর তৈরি করবে। ইনফেরাদী আমলে ইনফেরাদী দাওয়াতকে কাজ বানাও। আর না হয় কুরআনে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, উম্মত কোনোভাবেই যমানার ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে না, যতক্ষণ অন্যকে ঈমান ও আমলে ছলেহার উপর তৈরি না করবে। যদি নিজের অবস্থার পরিবর্তন করতে চাও , তাহলে ঘর ছেড়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হও। আল্লাহর পায়ে লুটিয়ে পড়।
তখনি অবস্থার পরিবর্তন হবে:
এখনি বের হও আল্লাহর রাস্তায়। আমল থেকে, আল্লাহ থেকে গাফেল অবহেলায় ডুবন্ত ও অবাধ্যতার পরিবেশে থেকে মানুষকে বের করে আমলের পরিবেশে আনার মেহনত কর। কারণ এর উপর আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত হালাতকে পরিবর্তন করে দিবেন। কারণ আল্লাহ তাআলা সাহায্য পাঠা সেই মুসলমানদের জন্য, যারা অন্যকে আমলের উপর আনার চেষ্টার মধ্যে লেগে থাকে। আর যদি অন্যকে আমলের উপর, হেদায়তের উপর আনার তৈয়ারি না করো, তাহলে নিজের ইবাদতের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
শুধু ইবাদতের দ্বারা আযাব দূর হবে না :
নিজের ইবাদতের মাধ্যমে মাসলাহর হাল করতে পারবে না। চাই যত আ’লা নামাজ পড়, আর যত আ’লা জিকির করো, হালাত কেবল তোমার আমল দ্বারা পরিবর্তন হবে না। হালাত শুধু ব্যক্তিগত আমল দিয়ে পরিবর্তন হবে না, যতক্ষণ দাওয়াতের উপর না আসবে। এজন্য দাওয়াত ও আমলকে একত্রে জমা কর। আল্লাহর কাজ না করার কারণে এটা আল্লাহ তাআলার পাকড়াও। এটা কোনো কথার কথা নয়, এটা কুরআন-হাদীস ভরপুর।
জিম্মাদারী পুরো উম্মতের :
আল্লাহ তাআলা নিজে কছম খেয়ে বলছেন কুরআনেÑ যদি অন্যকে আমলের উপর আনার তৈয়ারি না করো, আল্লাহর ফরজের উপর না আনো, তোমরা ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে না। আমরা এই চক্করে আছি, সেই হুকুম মানলেই মুসলমানের হালাত দূর হবে। এজন্য আজম করো, ইচ্ছা করো, নিজের সময়কে আলাদা করো, “উম্মতকে ঈমান ও আমলে ছলেহার উপর আনার জন্য”। জিম্মাদারী কেবল নিজের নয়, সারা উম্মতের। নিজের সময়কে আলাদা কর উম্মতকে ঈমান ও আমলে ছলেহার উপর আনার জন্য।
নকল হরকতেই সমাধান :
আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত এটা দেখেন, যে অন্যকে আমলের দিকে আনবে, তার কুরবানীকে সাধারণ উম্মতের অবস্থা থেকে বের হওয়ার কারণ বানিয়ে দেন। এই হলো কথা। এজন্য বলছি, হযরতজী মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস [রহ.]-এর অভ্যাস ছিল, যখন মুসলমানদের মধ্যে কোনোভাবে কোনো খারাপ অবস্থা আসতো, তো হযরত আল্লাহর রাস্তায় জামাত বের করতেন। এই নকল (সাহাবাদের অনুকরণে) ও হরকত (চলতে শুরু করা) বাড়িয়ে দিতেন।
ডুবে যাওয়া উম্মতকে বাঁচাও :
নিজের দ্বীনকে নিয়ে চলতে শুরু কর, উম্মতকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য। মানুষ এটা মনে করে নেয় যে, আমরা যদি মাল, বস্তু, ব্যবস্থাপনা হাছিল করে নেই, বুদ্ধি দিয়ে, কৌশল দিয়ে, যেভাবেই হোক একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করে এই বিপর্যয় থেকে উত্তরণে আমরা সফল হয়ে যাব। আর এতে করে যদি দুনিয়ার সামান্য কিছু হয়েও যায়, আখিরাতে এই হওয়ার সাথে তো এর কোনো সম্পর্কই নেই। এজন্য আমাদের দরকার, এই নকল (অনুকরণ) ও হরকত (চলতে শুরু করা) এর মাধ্যমে নিজের পরিবেশকে পাল্টানো। এই সময় এটাই দরকার। এতে করে ডুবে যাওয়া উম্মত আযাব থেকে বেঁচে যাবে।
মুক্তি ও নিরাপত্তার পথ :
এই উম্মতকে আল্লাহর দ্বীনের উপর আনো। এই সময় এটাই দরকার। কেন? কারণ যখন দিল ব্যথিত থাকে ও উম্মত কোনো হালাতের (অবস্থার) উপর থাকে, সবাই চায় কোনো নাজাতের (মুক্তির) রাস্তা যেন মিলে যায়। যখন অবস্থা আসে, তখন দিল নরম হয়। এই সুযোগে আমলের উপর আনা সহজ হয়। জি, হ্যাঁ। লোক জিজ্ঞেসা করে, কি করব এই অবস্থায়? এই অবস্থার মধ্যে আমলের দিকে আনা সহজ হয়। খায়েশের নকশা থেকে আমলের দিকে আনা মুশকিল হয়। কিন্তু কোনো হালত বা বিপদের সময় আমলের উপর আনা সহজ হয়। তখন দিল নরম থাকে। তাই আমি বলি, এটা হলো সুযোগ। মানুষকে দাওয়াত দিয়ে আমলের দিকে নিয়ে আসো, ফরজের উপর উঠাও, ফরজের উপর উঠানোর মেনতের উপর উঠাও। এটাই মুক্তির পথ।
হালত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে :
আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত দুনিয়াতে বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি আপন কুদরতের দ্বারা দিয়ে থাকেন। অধিকাংশ হালাত (খারাপ অবস্থা) ঈমানওলাদের ভেতর অনুতপ্ত ও অনুসূচনা আল্লাহ তাআলার নিকট বান্দাকে ফিরে আসার জন্য দিয়ে থাকেন। যদি এই হালাতকে দুনিয়াবি বিভিন্ন শেকেলের সাথে জুড়ে দেয়া হয়, তবে এই বিপর্যয় আল্লাহ তাআলার হুকুম পুরা করা বা আমলের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। প্রত্যেক যমানায় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ, মুসিবত, মহামারি আল্লাহ তাআলার কুদরত বা হুকুমের দ্বারা আসে। তখন এই হালতকে ঈমানের সাথে না মেলালে এই হালত তোমাদেরকে দ্বীন থেকে বিছিন্ন করে দিবে।
আল্লাহর নৈকট্যের সবক :
যদি এই সমস্ত হালাতের নেহেজ আল্লাহ তাআলার দিকে মানসুব করা যায়, তবে এই হালত তওবা, ইস্তেগফার ও আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসার জন্য সবক বনে যায়। আর এই সমস্ত হালাতকে যদি মাখলুকের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়, তবে এই সমস্ত বিপদ-আপদ আল্লাহ তাআলা থেকে দূরে সরে যাওয়ার; আমল থেকে দূরে সরে যাওয়ার বা দূরে সরানোর কারণ বা মাধ্যম বনে যায়। আর এই হালতকে আল্লাহর হুকুমের সাথে মিলালে এই বিপর্যয়ে আল্লাহর নিকট্য লাভ ও আমল বৃদ্ধির মাধ্যম হবে।
মানুষ ও জানোয়ারের মধ্যে পার্থক্য :
এটা তো জানোয়ারের মেজাজ; যদি তাকে মালিক লাঠি দেখায়, তো সে দূরে সরে যায়। ইনসান ও জানোয়ারের মধ্যে পার্থক্য এটাই। ইনসানকে যখন তার মালিক লাঠি দেখায়, তো সে আরো কাছে চলে আসে; আরো বেশি আনুগত্য প্রকাশ করে। আর জানোয়ার এমন বেআকল ও অবুঝ যে, যখনই তাকে মালিক লাঠি দেখায়, তখন সে মালিক থেকে পালাতে চেষ্টা করে; যদিও মালিক জানোয়ারকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই লাঠি দেখিয়ে থাকে।
আমল ছাড়লে আযাব বাড়বে :
এজন্য আল্লাহ তাআলা থেকে আসা যে কোনো মন্দ অবস্থায় মুসলমান যে কোনো আমলকে ছেড়ে দেয় বা বলে যে, এটা তো সুন্নত; ফরজ তো নয়। এমনিভাবে যে কোনো আমলকেই সে ছাড়ুক না কেন, এই মনে করে যে, এর দ্বারা আযাব বা হালাত দূর হয়ে যাবে, তবে তার এই আমল ছেড়ে দেওয়ার কারণে আযাব আরো নিকটে আসবে; আযাবকে সে দূর করতে পারবে না বরং আরো নিকটে নিয়ে আসবে; আযাব আরো বেড়ে যাবে। মুস্তাহাব আমলের দ্বারাও গুনাহ মাফ হয়। গুনাহ মাফ যত বেশি হবে, আযাব তত দূরবর্তী হবে।
সমাধান আল্লাহ থেকে হাল করা :
আমি বলছিলাম, যদি মুসলমান মাখলুক থেকে আসা মাসায়েলকে মাখলুকের চিন্তাধারা; উপায়-উপকরণ অবলম্বনের সাথে সম্পৃক্ত করে, তো এই সমস্ত শেকেল তাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করা থেকে, নেক আমল করা থেকে, তওবা-ইস্তেগফার করা থেকে আরো বেশি দূরে সরিয়ে দিবে। এটা যে কোনো ধরনের বাহানাতে করা হতে পারে। প্রথমতো সমাধান সেখান থেকেই করতে হবে, যেখান হতে এসেছে।
হালাতে তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ো না :
বাতিল মুসলমানের দিলের মধ্যে এই কথার ভয় ডুকিয়ে দিয়েছে, যদি তোমরা আপোসে মিলেমিশে থাকো, একত্রে আমল করো, তবে এই রোগ তোমাকেও আক্রান্ত করবে, সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে। উম্মতের যত ইজতেমায়ি আমল আছে; সমষ্টিগত আমলই ফেরেশতাদের নাজিল হওয়ার আসল কারণ। যদি মুসলমান ফরজ আদায় করার জন্য; তা’লীমের মজলিসে বসার জন্য জমায়েত না হয়, তবে ফেরেশতাদের ইজতেমায়ি নুযুলের সবক খতম হয়ে যাবে। তা’লীম সমষ্টিগত বন্ধ হলে রহমতের ফেরেস্তা আসা বন্ধ হয়ে যাবে। যেখানে কুরআন-হাদীসের তা’লীম হয়, সেখানে নুযুলে মালায়িকা কায়েম হয়। চারদিকে রহমত বেষ্টন করে। এতে আযাব খতম হয়ে যায়।
আল্লাহর কাছে আমল পেশ কর :
আর সমষ্টিগত তা’লীম, দাওয়াত, নামাজ ও আমল বন্ধ হলে আযাব আরো ব্যাপক হবে। যে কোনো হালাতের মোকাবেলা আসবাবের দ্বারা করার কারণে নেক আমলের পথে বাঁধা আসবে। হালতের সমাধানে আল্লাহর কাছে আমল পেশ করতে হবে। হালতের সময় যদি মুসলমান আল্লাহর দিকে রুজু হয়, তখন সে বেঁচে থাকলেও সফল আর মরে গেলেও সফল। এজন্য সর্বাবস্থায় আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া সবচেয়ে বড় সফলতা।
আমলের দ্বারাই সমাধান হবে :
যদি পরিস্থিতিকে জিজ্ঞেস করা হয়, এই পরিস্থিতিতে কী করা চাই? তো সে বলবে, আমল ছেড়ে দাও। কারণ তার কাছে আমলের কোনো গুরুত্ব নেই। অথবা বলবে, এই আমল তো সুন্নত; ফরজ তো নয়; কাজেই এই ছোট একটা আমল ছেড়ে দিলে অসুবিধা কি? যে আযাব আমল ছেড়ে দেওয়ার কারণে এসেছে, সেই আযাব আমল ছেড়ে দেওয়ার দ্বারা দূর হবে না বরং আমলের দিকে ফিরে আসার দ্বারা দূর হবে।
নামাজ ও তওবার দিকে দৌড় :
কায়েনাতের মধ্যে যে কোনো দূরাবস্থা ও মসিবত আসে, তার সমাধান সর্বাবস্থায় আল্লাহর নৈকট্যপূর্ণ আমলের দ্বারা করতে হবে। যদি বৃষ্টির কাইফিয়াত বদলে গিয়ে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়, তো এই উম্মতকে এর জন্য ইজতিমায়ি আমল দেওয়া হয়েছে। এমন নয় যে, বৃষ্টি হচ্ছে না; তো নিজ নিজ ঘরে গিয়ে সকলে দুআ কর, নফল পড় বরং ছোট-বড়, মহিলা-পুরুষ, জন্তু-জানোয়ার সবাইকে নিয়ে ময়দানে জমা হও; ইস্তিস্কার নামাজের জন্য। সবাই মিলে আমল কর। সবাই মিলে নামাজ পড়। আল্লাহর দিকে দৌড়াও। সবাই মিলে তওবা ইস্তেগফার আর রোনাজারী কর। এতে আযাব দূর হবে।
মসজিদকে আঁকড়ে থেকো :
আর আল্লাহ না করুন, যদি মুসলমান তদবির (সুরক্ষা পদ্ধতি) কে আমলের উপর প্রাধান্য দেয়, তবে আমি কসম খেয়ে বলতে পারি, এই সুরক্ষা পদ্ধতিসমূহ তোমাদেরকে মসজিদ থেকে দূরে সরিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। এতে আযাব কমে যাওয়ার চেয়ে তোমাদের বিপর্যয় বাড়াবে। এই সমস্ত সুরক্ষা পদ্ধতি মুসলমানদেরকে আল্লাহর নাফরমানী ও আল্লাহর ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধাচারণের দিকে নিয়ে যাবে।
আমাদের করণীয় :
এটাতো আল্লাহ তায়ালার ব্যবস্থাপনা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, সাহাবা [রাযি.]-এর আমল, খোলাফায়ে রাশেদীন [রাযি.]-এর পদ্ধতি, যখনই কোনো ধরনের বিপর্যয় বালা-মসিবত ও আযাব আসে, প্রত্যেকে মসজিদে একত্র হও। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা যে, মসজিদে একত্রিত হলে রোগ (সংক্রমণ) ছড়িয়ে পড়বে। এই ধারণা সম্পূর্ণ শরীয়ত ও ঈমানের পরিপন্থি।
মৃত্যুর জন্য উত্তম স্থান হল মসজিদ।
আমি বলি, যদি তোমার জ্ঞান-বুদ্ধি মোতাবেক এই ধারণা হয়েই যায় যে, মসজিদে আসার কারণে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাবে, তবে মৃত্যুর জন্য এর চেয়ে উত্তম জায়গা আর কোথাও হতে পারে না। সাহাবারা বলতেন, মৃত্যু যেন সিজদা দিতে দিতে হয়। মসজিদে হয়। আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দিতে দিতে হয়। জিহাদের ময়দানে শাহাদাতের হয়। মৃত্যু নির্ধারিত সঠিক সময়ে আসবেই। মৃত্যু থেকে ভয়ে আমল থেকে পালালে কি লাভ হবে! মৃত্যু আসুক ঈমানী মেহনত করতে করতে। তাহলে সেটি হবে সফলতার মৃত্যু। কল্যাণের মৃত্যু। মসজিদে এলে অসুস্থ হয়ে যাবে, এটি শয়তানের ওসওয়াসা ও ধোঁকা। এখন সব অমুসলিম বা মুসলিম ছদ্মবেশীরা বলে, এ ব্যাপারে আমরা জানি, তোমরা মৌলভীরা কী জানো? রোগ-বালাই-সংক্রমণ কিভাবে ভালো হয়, এসব তো ডাক্তার জানে! আসলে তোমরা কিছুই জানো না।হাকীকত জানে মৌলভীরাই!!
যে চিকিৎসকের কথা মানব :
ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেই চিকিৎসকের (ডাক্তার) রায় বা মতামত গ্রহণযোগ্য হতে পারে, যে নিজে মুত্তাকী, দ্বীনদার, তাকওয়ালা আর আমলের পাবন্দি করে। তবে সমষ্টিগতভাবে তার মতামতের উপর কোনো আমল ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।
এটি বিপরীতমুখী চিন্তা :
কিন্তু এই ধারণার ভিত্তিতে মসজিদ ছেড়ে দেয়া যে, মসজিদে আসার দ্বারা আযাব (ভাইরাস) ছড়াবে। তবে এই ধরনের মনোভাব আল্লাহ তায়ালার ব্যবস্থাপনা, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, সাহাবা [রাযি.]-এর আমল, খোলাফায়ে রাশেদীন [রাযি.]-এর পদ্ধতির সম্পূর্ণ বিপরীত মনোভাব। এই হালতে যদি মুসলমান ঈমান শিখা ও ঈমানী মেহনতকে কাজ না বানায়, তাহলে এই আযাব তোমাদেরকে সুরক্ষা পদ্ধতির নামে কুফরের দিকে নিয়ে যাবে। যে রোগাক্রান্ত, সে ঘরে নামাজ পরে নিবে। অসুস্থ ব্যক্তির ব্যাপারে এটিই হাদীসের নিদের্শনা। বাকিরা সমষ্টিগত আমল ছাড়বে না।
হক্কানী আলেমদের করণীয় :
সারা দুনিয়ার উলামায়ে হকের করণীয় হলো মসজিদকে আবাদ রাখা। মসজিদ আবাদীর মেহনতকে জারি রাখা। আল্লাহ তায়ালা জাযায়ে খায়ের দান করুন উলামায়ে হকদের, যারা এই কথার উপর দৃঢ় আছেন যে, কোনো হালতে মসজিদকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্ন বা চেষ্টা না করা।
রোজার এহতেমাম করা চাই :
রোজার এহতেমাম করি আর ইস্তিগফারের খুব আমল করি। ব্যাস, এটাই এক রাস্তা সমস্ত বালা থেকে বাঁচার।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলো :
আর হ্যাঁ, এহতিয়াত (সতর্কতামূলক কার্যক্রম) ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের উপদেশ মেনে চলা ইয়াকীন, শরীয়ত ও তাওয়াক্কুলের বিলকুল খেলাফ বা পরিপন্থি নয়। বরং সতর্কতা ও উপদেশ না মানার কারণে যদি লোকসান আসে, এজন্য আপনি নিজে দায়ী থাকবেন। তবে সতর্কতা কিংবা রাষ্ট্রীয় কানুন ও উপদেশ ততক্ষণ পর্যন্ত মানা যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোন আমল নষ্ট বা ছুটে না যায়। অন্যথায় আল্লাহ তার মদদ ও সাহায্যকে তুলে নিবেন। যদি কোনো আমল নষ্ট হয়, তবে সেই উপদেশ আমরা ডাক্তারের হাওয়ালা করে দিব।
রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে চলবো না :
আমি তাগিদের সাথে বলছি, রাষ্ট্র ও ডাক্তারের হেদায়েত ও উপদেশ বেশক আমরা মেনে চলবো, এটা আমাদের সকলের জিম্মাদারি এবং পুরা দুনিয়ার এর উপর আমল করা চাই। কানুন মেনে চলা; ডাক্তারের উপদেশ মেনে চলা- এটা আমাদের দাওয়াত ও তাবলীগের বুনিয়াদি উসূল। দুনিয়ার কোনো কানুন ও পুলিশ প্রশাসনের কোনো নির্দেশনার খিলাফ কাজ করা দাওয়াত ও তাবলীগের মেজাজ ও উসূলের বিলকুল খেলাফ।
তবে সর্তকতায় আমল ছাড়া যাবে না :
সতর্কতামূলক কার্যক্রমের চক্করে পড়ে যদি কোনো আমল ছুটে যায়, তবে আল্লাহ তাআলার মদদ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। কেননা আল্লাহ’র ওয়াদা কোনো দুনিয়াবি সবক বা তরিকার সাথে নেই। তদবিরের সম্পর্ক হলো সতর্কতা আর আমলের সম্পর্ক ইয়াকীনের সাথে; তদবির ইয়াকীনি নয়; কিন্তু আমল ইয়াকীনি- এই বিষয়ে সকলে খেয়াল রাখি।
তাহাজ্জুদ, জিকির ও দুআর এহতেমাম কর :
রাতে তাহাজ্জুত পড়ে আল্লাহ’র কাছে দুআ করি। বিমারি থেকে বাঁচার জন্য অযথা আলোচনা না করে জিকিরের খুব এহতেমাম করি। প্রত্যেকে নফল রোজা, নামাজ, তাহাজ্জুত, রাতের কিয়াম ও দুআর এহতেমাম করি আর কোনো আমল যেন ছুটে না যায় বা ছেড়ে না দেই।
এখন আমল বাড়ানোর সময় :
কেননা এটা আমল ছেড়ে দেয়ার সময় নয়। এই কথা স্মরণ রাখি যে, শয়তান আমাদের জবান থেকে এমন সব কথা বের করে দেয়, যার কারণে আল্লাহ’র তরফ থেকে আসা আযাবকে নিয়ে হাসি-মজাক হয়, যার কারণে আল্লাহ তাআলা আযাবকে আরো বাড়িয়ে দেন; পূর্বে বহু কওমের সাথে আল্লাহ এই ব্যবহার করেছেন।
আযাব আসে তওবা করানোর জন্য :
আযাব আসে আমাদেরকে তওবার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যখন কোনো কওম বা জাতির উপর এরূপ আযাব এসেছে আর তারা তাওবা-এস্তেগফার বা কৃত গুনাহের উপর লজ্জিত হয়নি আর আযাবকে দেখে হাসি-মজাক করেছে, তো আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এজন্য এখন সময় হলো কেবল দাওয়াত, দুআ-ইস্তেগফার ও আমলের। দাওয়াত ও আমলকে একত্রে নিয়ে চলব। দাওয়াত ও আমলকে বাড়িয়ে দিব, আল্লাহ হালতে উপকার পৌঁছাবেন ইনশাআল্লাহ।
বিপর্যয়ের কারণ :
মুসলমানদের চিন্তাগ্রস্ত বিপর্যয় ও ব্যর্থতার মূল কারণ হলো, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন আসবাব (উসিলা বা মাধ্যম) গ্রহণ করে আর সেই আসবাবের মাধ্যমে সফলতার দুআ করে। অথচ দুআয় আসবাবের অংশগ্রহণের দ্বারা দুআ গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
দুআ কবুলের শর্ত :
ইবাদত ও দাওয়াতের মেহনতকে আল্লাহ তায়ালা দুআ কবুল হওয়ার শর্ত করেছেন। অথচ মুসলমান দুআ কবুল হওয়াার শর্ত হিসেবে আসবাব (উসিলা বা মাধ্যম) অবলম্বন করে।
আযাব থেকে উত্তরণের পথ :
আর কোনো আযাব থেকে বাঁচার জন্য তদবির (সুরক্ষা পদ্ধতি) অবলম্বন করে তকদীরের উপর ভরসা করার কথা বলে। মূলত তদবির (সুরক্ষা পদ্ধতি) অবলম্বন করে তকদীরের উপর ভরসা করার যৌক্তিকতা কী?
বস্তুত তকদীরের উপর তো সেই ভরসা করল, যে তদবিরের (সুরক্ষা পদ্ধতি) চেয়ে আল্লাহর ইতাআত, ইবাদত ও মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাকে প্রাধান্য দেয় এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
মাসনুন দুআ সবচেয়ে শক্তিশালী :
নিত্য-নতুন সমস্যা সৃষ্টি হলে আমাদের করণীয় কী? নতুন নতুন সমস্যায় নতুন নতুন ফর্মূলাকে আঁকড়ে ধরব? নাকি রাসূলের বাতানো ফর্মূলাতে সমস্যার সমাধান করবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত দুআর চেয়ে শক্তিশালী পদ্ধতি আর কি হতে পারে? নিত্য-নতুন পদ্ধতি মানুষকে মাসনুন দুআ থেকে বঞ্চিত করছে। মাসনুন দুআ পড়, মাসনুন দুআ তোমাদেরকে আযাব থেকে মুক্তি দিবে, যদি দুআর সাথে দাওয়াত ও ইয়াকীনকে জমা করো।
সমাধান রাসূলের ত্বরীকায় :
রাসূলের শিখানো আমলের মধ্যেই সকল সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান। হযরতজী ইউসুফ [রহ.] বলতেন, মাসনুন দুআ কবুলের পদ্ধতিই হলো দাওয়াতের দ্বারা ইয়াকীনকে বানাও। আমি তোমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছি, ‘নতুন নতুন সমস্যার সমাধানে নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার নয়। বরং যে সমস্যা যখন হবে তখনি এই সমস্যার সমাধানে রাসূলের দেখানো পথই এখতিয়ার করা চাই। এই অবস্থায়, রাসূলের তরিকা যদি অনুসরণ না করে অন্যদের বাতানো তরিকায় চলো, তবে রাসূলের তরিকার এনকার করা হলো। অথবা বুঝানো হলো, এই তরিকায় সকল সমস্যার সমাধান নেই। অথচ দুনিয়াতে এমন কোনো সমস্যা নেই যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে আসেননি। এমন কোনো বিষয় নেই যে, উম্মতের উপর আসবে আর নবীজী শিক্ষা দেননি। তাই বলছি, ছোট ছোট মাসনুন দুআর ভেতরে যে উপকার, তা বড় বড় অজিফাতেও নেই। এসব মাসনুন দুআর সাথে ঈমান ও ইয়াকীনের সম্পর্ক। কেউ বলেন, এই নতুন সমস্যায় রাসূলের কি নির্দেশনা আছে? কেন? যেখানে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইস্তেঞ্জার সময়ে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন, সেখানে এই অবস্থা এলে কী দুআ করতে হবে তা বলেননি, এটি হতেই পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল অবস্থায় উম্মতকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। এই মুহূর্তে জরুরি হলো দাওয়াত ও আমলের সাথে সাথে মাসনুন দুআর এহতেমাম করা।
দুআর প্রতি ইয়াকীন হওয়া চাই :
আজ বড় আযাবের বিষয় হলো, দুআ করা হয়, কিন্তু দুআর প্রতি ইয়াকীন খতম হয়ে গেছে। দুআর শব্দ আছে কিন্তু ইয়াকীন বিদায় হয়ে গেছে। সাহাবায়ে কেরাম এই হালতে এই দুআর দ্বারা বাস্তবতার খেলাফ কিভাবে সমস্যার সমাধান করেছেন আল্লাহর সাহায্য নিয়ে, এর আলোচনাও নেই, ইয়াকীনও নেই। ফলে দুআ করা হয় আসবাবের সাথে। আজ বিভিন্ন হালতে দুআ শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে কিন্তু এর ইয়াকীন শিখানো হচ্ছে না। দাওয়াত না থাকায় এই দুআর ইয়াকীন ও উপকার হাসিল হচ্ছে না। তাই এই হালতে ইয়াকীনের সাথে মাসনুন দুআর এহতেমাম কর। আল্লাহ তায়ালা মুহূর্তের মধ্যে হালতকে বদলে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
সীরাতই হলো সমাধানের মূল :
হালত আসলে দেখতে হবে, এই অবস্থায় সাহাবাদের আমাল কি ছিল? সাহাবায়ে কেরাম এই মুহূর্তে রাসূলের নির্দেশ কী করেছিলেন, এটিই কেয়ামত পর্যন্ত নমুনা। শয়তান ধোঁকা দেয়, নতুন নতুন নানান সুরক্ষা পদ্ধতি সামনে এনে আমল থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তখন মেহনত কমিয়ে দেয়। বরং সাহাবাদের মামূল ছিল, তারা বিপদের সময় আল্লাহর দিকে দৌড়াতেন। আমল ও মেহনতকে বাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহর সাহয্যকে নিজেদের পক্ষে আনার ফায়সালা করাতেন। এই হালতে ছোট থেকে ছোট আমল ছেড়ে দিলে আজাব বাড়বে, তাই এখন মেহনতকে কাজ বানাও।
দুই জিনিস থেকে বঞ্চিত হবো :
এই বিপর্যয়ে কল্যাণের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ করা সবচেয়ে জরুরি। হাদীসে পাকে এসেছে, মুসলমান যদি সত্যের পথে আহ্বান করা ও গোনাহ থেকে ফিরানোর মেহনত না করে, তাহলে তাদের বুজুর্গ ব্যক্তিরা দুআ করবেন কিন্তু কবুল হবে না। যে আযাব খারাবীর কারণে এসেছে, সেই আযাব থেকে বাঁচতে খারাবীর মধ্যে ডুবে থাকলে আযাব বাড়বে। তাই মানুষকে দাওয়াত দিয়ে ভালোর পথে নিয়ে আসার এখনি বড় সুযোগ। মানুষকে খারাবি থেকে বাঁধা না দেয়া সবচেয়ে বড় খারাবী, আর লোকদের কল্যাণের দিকে না লাগানো সবচেয়ে বড় গোনাহ। এসব ছেড়ে দিলে উম্মত দুটি বিষয় থেকে বঞ্চিত হবে।
(১) দুআ কবুল হবে না।
(২) অহির বরকত থেকে বঞ্চিত হবে। অহির ধারক-বাহকদের কাছ থেকে দ্বীনের সহীহ রাহবারী আসবে না। বিপর্যয়ে কি করণীয়, তারা বুঝে উঠতে পারবেন না।
এই মুহূর্তে তিন কাজ কর :
আল্লাহর আযাবকে দূর করার জন্য দাওয়াত ও আমলকে একত্রে নিয়ে চলো। মসজিদ থেকে না ভাগো। মসজিদের আমলকে আঁকড়ে থাকো। এই সময় তিন কাজ করো। মহামারি এলে তিন কাজ করার কথা এসেছে।
(১) সর্ব সাধারণের সাথে চলো।
(২) জামাতকে আঁকড়ে থাকো।
(৩) মসজিদে থাকাকে জরুরি মনে করো।
বাচঁতে হলে এমন ঈমান চাই :
রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে হযরত আবু দরদা [রাযি.] একটি দুআ শিখেছিলেন। তার এই মাসনুন দুআর প্রতি তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ও ইয়াকীন ছিল। তোমার দেখা, তোমার বলা ভুল হতে পারে, তবে আমার রাসূলের শিখানো সুরক্ষা পদ্ধতিতে কোনো ভুল হতে পারে না। তিনি মসজিদে বসা ছিলেন, একবার এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বললো, আবু দারদা! আপনার বাড়িটি আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি না দেখেই দৃঢ়তার সাথে বললেন, না পুড়েনি। এরপর আরো দু’ব্যক্তি পর পর একই খবর নিয়ে এলো। তিনিও একই জবাব দিলেন পূর্ণ ইয়াকীনের সাথে। চতুর্থ এক ব্যক্তি এসে বললো, আগুন লেগেছিল; কিন্তু আপনার ঘর পর্যন্ত এসে তা নিভে যায়। একথা শুনে তিনি বলেন, আমি জেনেছি, আল্লাহ অবশ্যই তা করেন না। তখন লোকটি বললো, ওহে আবু দারদা! আপনি যে না দেখেই বললেন, ‘আমার ঘর পুড়েনি’ এটি কিভাবে বললেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে কিছু বাক্য শিখেছি, কেউ সেগুলো সকালে পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো বিপদে সে পতিত হয় না । তারপর তিনি সেই বাক্যগুলো উচ্চারণ করেন।
আজ উম্মত আযাব থেকে বাঁচতে হলে আবু দারদার ইয়াকীনের উপর উঠতে হবে, নতুবা বাঁচার কোনো পথ পাবে না। এই আযাব তোমাদেরকে কুফর পর্যন্ত নিয়ে যাবে। রাসূলের তরীকা ছেড়ে তোমারা কাফেরদের তরিকার উপর উঠাবে। তাই ইয়াকীনকে মজবুত করো এবং আল্লাহর সুরক্ষায় থাকো।
পত্রিকা ও মিডিয়া পরিহার করো :
এই মুহূর্তে ঈমান ও আমলে সালেহার মেহনতকে বাড়াও। সময়কে হেফাজত কর। মানুষকে মসজিদ আবাদীর সাথে ঈমানী মেহনতে জুড়াও। এর দ্বারা আযাব দূর হবে। লা-ইয়া’নি বিষয় থেকে বাঁচো। পত্রিকা পড়ো না। মিডিয়া থেকে দূরে থাকো। এসব গুজব ও ধারণা আজ উম্মতের ইয়াকীন নষ্ট কওে দিচ্ছে। এর দ্বারা নিরাশা পয়দা হয়। মানুষ হতাশ হয়ে যায়। তখন ঈমান ও আমল দুর্বল হয়ে পড়ে।
২৪ ঘণ্টা মসজিদ আবাদ রাখুন :
মসজিদকে ২৪ ঘণ্টা আবাদ রাখুন। রাত-দিন আমল চালু রাখুন। হযরতজী মাওলানা ইউসুফ [রহ.] বলতেন, আল্লাহর রাস্তার মেহনত, নকল ও হরকতে কমি করলে যে আযাব কয়েক বছর পরে আসার কথা ছিল, তা এক মাসেই এসে পড়বে। দাওয়াতের মেহনতের দ্বারা মসজিদকে আবাদ রাখা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় আমল। মসজিদের আমল ছেড়ে দিলে বা মসজিদ আবাদের মেহনত বাদ দিলে সেই হাদীসকে অস্বীকার করা হবে। হাদীসে পাকে এসেছেÑ আল্লাহর আযাব ওই কওমের উপর থেকে তুলে নেন, যেখানে মসজিদ আবাদ করা হয়। মসজিদ আবাদ করার দ্বারা চারদিকে রহমত ছড়িয়ে পড়ে।
আমলের দ্বারাই পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে :
সারা দুনিয়ার মুসলমান আজ আল্লাহর প্রতি বদগুমান হয়ে গেছে। আর বদগুমানের নকশা হলো মাধ্যম কে ইয়াকীন হিসেবে বেছে নেয়া। ফলে আমলের স্থান থেকে সরে যাচ্ছে মুসলমান। আল্লাহ চান, বান্দা সকল আসবাবের মোকাবেলায় আমলকে সামনে রাখবে। বান্দা আমলকে সকল পদ্ধতির আগে রাখবে, তখন আল্লাহর সাহায্য আগে বাড়বে। উম্মত আজ এটাই বলছে, এটি করলে এমন হবে! সেটি করলে এমন হবে। তুমি বলো, এই আমল করলে এটি হবে! এই আমল করলে এমন হবে।
যা এই আযাব থেকে বাঁচাবে :
এমন কোনো রোগ নেই, যার শেফা আল্লাহ রাখেননি। আল্লাহর কাছে আমল পেশ করো, তিনি তোমাকে শেফা দান করবেন। রোগ-বালাই-এর সম্পর্ক কোনো জিনিসের সাথে নয়, এটি আল্লাহর হুকুম। কোনো রোগ আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্যের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারে না। এটাকে ইয়াকীন করা যাবে না, কারো সংস্পর্শে গেলেই রোগ হয়ে যাবে। যেই ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যার তাসবিহাত ও আল্লাহর জিকির আদায় করবে এবং খাস করে ইসমে আজমের জিকির ‘আল্লাহ আল্লাহ’ জপতে থাকবে, আমি ইয়াকীনের সাথে বলছি, সে এই ‘করোনা ভাইরাস’ নামক রোগ থেকে মুক্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ। যে এর এহতেমাম করবে না, সে এই রোগে আক্রান্ত হোক বা না হোক, সে পেরেশানীতে থাকবে। যে জিকিরে থাকবে, সে এতমিনানে থাকবে। আর যে জিকির থেকে মাহরূম থাকবে, সে পেরেশানগ্রস্ত থাকবে। এতো বেশি জিকির করো, লোকে যেন তোমাকে পাগল বলে। এত বেশি আসবাবকে অস্বীকার করো, গায়রুল্লাহকে এনকার করো আর আল্লাহর জাতের কথা বলো, যেন লোকে তোমাকে পাগল বলে। যার ইয়াকীন কালেমা ‘লা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহ’ এর উপর থাকবে, সে চিন্তামুক্ত থাকবে।
আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করা :
যার ইয়াকীন দুর্বল, সে এই হালতে সীমাহীন পেরেশানগ্রস্ত হবে। এজন্য কালেমা ‘লা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহ’ এর দাওয়াত নিয়ে ছুটতে হবে। সাহাবায়ে কেরাম যখন এই কালেমাকে নিয়ে রোম-পারস্যসহ তৎকালীন পৃথিবীর ক্ষমতাবানদের দরবারে গিয়েছেন, সাহাবাদের কালেমার আওয়াজেই তাদের মসনদ রাজ-প্রাসাদ কাঁপতে শুরু করেছে। আজ আমরা বাতিলের দেখানো আশঙ্কা দেখেই শঙ্কিত হয়ে যাই, কাঁপতে থাকি। কারণ সাহাবায়ে কেরামের দিলের ভেতর আল্লাহর জাতের তা’ছির ছিল। এই যমানায় মুসলমান বাতিলের আওয়াজ দ্বারাই কাঁপতে থাকে। আর সেই যমানায় সাহাবাদের আওয়াজে বাতিল কাঁপতো। ঈমানী মেহনতের দ্বারা ঈমানকে তাজা না রাখলে দাজ্জাল যখন আসবে, তখন পরিস্থিতি র্বতমান হালত থেকে লক্ষ গুণ বেশি ভয়াবহ হবে। সে নিত্য-নতুন পদ্ধতি পেশ করে বলবে, আমাকে মানো, তাহলে তুমি নিরাপদে থাকবে। মুসলমান যদি কালেমার মেহনত করে, ঈমানকে তাজা না রাখে, তাহলে দাজ্জাল ও দাজ্জালের মিডিয়া এবং তার শক্তির পিছনে তখন দৌড়াবে।
বড় বিপর্যয় কী :
আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়, যা ঈমানের খেলাফ, বাতিলের সৃষ্টি ও জাহালতের দিকে ঝুঁকে যাওয়া। এই মুহূর্তে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে এই বিপর্যয় থেকে উম্মতকে বের করে আনা সবচেয়ে বড় কাজ। যিনি খালেক, কাদীরে মতলক, তার উপর ইয়াকীন নেই। ইয়াকীন হচ্ছে এর খেলাফ তদবীরের উপর। সুরক্ষা পদ্ধতিকে যতটা ইয়াকীন করছি, আমল থেকে হবে এর ইয়াকীন আসছে না। সর্তকতার প্রয়োজন কিন্তু এটি যেন ইয়াকীনকে বিগড়ে না দেয়। সবসময় ওজুর হালতে থাকো আর আমলকে বাড়াও। আল্লাহর প্রতি ইয়াকীনকে ঠিক রাখো। আল্লাহই হেফাজত করবেন।
মোসাফার দ্বারা গুনাহ মাফ হয় :
সুরক্ষা যেন ঈমান ধ্বংসের কারণ না হয়। মুসাফা করলেই সংক্রমিত হবে, এটি ঈমানের খেলাফ কথা। আল্লাহ তাআলা চাইলে হবে আর না চাইলে হবে না। বরং মুসাফাহার মতো আমলের দ্বারা হালত দূর হবে। হ্যাঁ! তবে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি হলে তুমি সতর্ক থাকতে পারো। কিন্তু এই ইয়াকীন কখনো করা যাবে না, মুসাফা করলেই আমি অসুস্থ হয়ে যাবো। এই হালতে আল্লাহ দেখছেন, আমার প্রতি বান্দার কি ধারণা। মুসাফাহর দ্বারা পরস্পরের ভালোবাসা তৈরি হয়। আল্লাহ তাআলা সেখানে আযাব দেন না, যেখানে মুসলমান একে অপরকে আল্লাহর জন্য মহব্বত করে। শেষ রাতে রোনাজারী আর মসজিদ আবাদ রাখে, সেখানে গজব দূর হয় আর রহমত বর্ষণ হয়।
অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করুন :
অসুস্থতার কারণে ভয় পাওয়া ঈমানের আলামত নয়। বরং অসুস্থতা গুনাহ মাফের কারণ। মুমিনের মর্যাদা বৃদ্ধির উসিলা। অসুস্থ ব্যক্তির খেদমত মাগফেরাতের কারণ। মুমিনের নাজাতের উসিলা। সবচেয়ে বড় আযাব ও ধ্বংস আল্লাহর সাথে বদগুমানী। অসুস্থ ব্যক্তির খেদমত করলেই আমি মরে যাবো। ফলে এই বিপদের মুহূর্তে মানুষ আপনজনদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এর চেয়ে বড় জুলুম আর কি হতে পারে? র্সতকতার সাথেই অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করুন। সারাদিন রহমতের ফেরেস্তা আপনার জন্য দুআ করবে। অসুস্থ হলে সেবা করবে।
মৃতকে দাফন করো সুন্নত তরিকায় :
মৃত ব্যক্তিকে শরিয়ত ও সুন্নত অনুযায়ী মহব্বতের সাথে কাফন-দাফন করুন। এটি অনেক বড় আমল। এখন আল্লাহর সাথে ইয়াকীন ঠিক করার সবচেয়ে বড় সময়।
আল্লাহর হুকুম পালনে ব্যর্থতা নেই :
কায়েনাতের নেজাম আল্লাহর নেজাম নয়। আল্লাহ মুসলমানের জন্য আহকামের নেজাম কায়েম করেছেন। আর দুনিয়ার নেজাম কাফেরদের জন্য। তারা এর থেকে নানা রকম সুরক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার করে। কখনো সফল হয়, আবার কখনো ব্যর্থ হয়। আর আহকামাত পুরা করার মধ্যে সবসময় সফলতা। কখনো ব্যর্থতা বা পরাজয় নেই।
চিঠিতে রাহবারী :
(হযরতজী সারা দুনিয়ার সাথীদের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন, নিম্নে তা তুলে ধরা হলো)
আল্লাহ পাক কোরআন ও সীরাতে নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে উম্মতে মুসলিমার প্রত্যেক অবস্থা ও যেকোনো হালতের মধ্যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
সমাধান আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন :
মানবজীবনের এমন কোনো অঙ্গন নেই, যেখানে আল্লাহ তায়ালা কোনো দিক-নির্দেশনা দেননি। চাই সেই বিপদ বা হালত ব্যক্তিগত হোক কিংবা সমষ্টিগত। তা উৎপত্তির কারণ ও সমাধান আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন। যে বিপদই মানুষের সামনে আসে, এটা তাদের আমলের পরিণতি। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘ভূপৃষ্ঠে যে বিপদই আসে, তা তোমাদের হাতের কামাই।’
কেন হালত আসে?
মূলত হালত হচ্ছে মানুষের আমলের বদলার বিমূর্ত প্রকাশ/বাহ্যিক রূপ। মানুষের পক্ষ থেকে যেমন অবস্থা প্রকাশ পায়, আল্লাহর পক্ষ থেকে সেরকম হালত আসে। এজন্য প্রত্যেক কাজের একটি বিশেষ নতীজা রয়েছে। যেমন যাকাত না দেওয়ার কারণে মানুষের মাল-সম্পদের উপর বিভিন্ন হালত ও লোকসান আসে। এমনিভাবে যখন পৃথিবীতে যিনা (ব্যাবিচারী) ব্যাপক হয়ে যায়, তখন ব্যাপক আকারে ভূমিকম্প হতে থাকে। তাই হযরত আবু হুরায়েরা [রাযি.]-এর সামনে একজন বলছিল, জালিম ব্যক্তি কেবল নিজের ক্ষতি করে। আবু হুরায়রা [রাযি.] বলেন, আল্লাহর কসম! শুধু তার বিপদ নয় বরং তার জুলুমের মন্দ প্রতিক্রিয়ায় পাখিরা তাদের ঘরে ক্ষুধার কষ্টে শুকিয়ে মারা যায়। (বাইহাকি শরিফ) আল্লাহ পাকও ইরশাদ করেন, ‘জলে স্থলে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা মানুষের হাতের কামাই’।
গুনাহের উপর অনুতপ্ত হওয়া :
এজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজের গুনাহের উপর অনুতপ্ত হওয়া ও তওবা করা।
যেমন নূহ [আ.] তার কওমকে বলেছিলেন, তোমরা আল্লাহর দিকে রুজু হও এবং তার কাছে মাফ চাও। তিনি তোমাদের হালত দুরস্ত করে দিবেন এবং তোমাদের সন্তানাদি ও বাগানে বরকত ঢেলে দিবেন। এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সূরা নূহতে পাওয়া যায়।
সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো :
বর্তমান সময়ে উম্মতের বড় গুনাহ হচ্ছে, তারা তাদের ফরজ দায়িত্বের ব্যাপারে সীমাহীন অবহেলা করছে এবং নবীওয়ালা আলমী মেহনতের ব্যাপারে অলসতা করছে। যার দ্বারা সমস্ত ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত জিন্দা হবে। সুতরাং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে আমরা সবাই অনুতপ্ত হই ও ইস্তেগফার করি এবং এই নিয়তে করি যে, ভবিষ্যতে সেই কাজকে নিজের জিন্দেগীর মাকসদ বানাব, যা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জিন্দিগির মাকসদ ছিল।
আমাদের দায়িত্ব :
এ ব্যাপারে হযরতজী মাওলানা ইউসুফ সাহেব [রহ.] বলতেন, যখন তোমরা এ রকমের নিয়ত করবে, এই জীবনে যা ভাগ্যে আছে, তাতো হয়েই যাবে। আর যদি মৃত্যু এসে যায়, আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামতের দিন তোমাদের নিয়ত হিসেবে তোমাদের হাশর দান করবেন। এজন্য সাধ্য মোতাবেক নিজের জান ও মালকে এই মহান মেহনতের জন্য ব্যয় করা হবে খতমে নবুয়েতের সঠিক মূল্যায়ন। এই মেহনতের মধ্যে বিশুদ্ধ নিয়ত ও সঠিক জযবার সাথে ফিরে উম্মতের প্রত্যেক তবকাকে মুতমাঈন করা আমাদের জিম্মাদারী।
কানুন মেনে মাশওয়ারা করে কাজ করাা :
অতএব রাষ্ট্রীয় বিধি-নিষেধ খেয়াল করে যতটুকু সম্ভব, আমরা মেহনত করতে থাকি। আমাদের কোনো আমল দ্বারা যেন রাষ্ট্রীয় আইনের মোকাবেলা না হয়ে যায়। সুতরাং এই বিষয়গুলো সামনে রেখে পরস্পর মাশওয়ারা করে আমরা কাজ করতে থাকি।
এহতেমামের সাথে ও পূর্ণাঙ্গ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য ও পুরো উম্মতের জন্য দুআ করি। এখলাস ও এই মেহনতের বাসিরাত কামনা করে এহতেমামের সাথে এ দুআ করি, আল্লাহ তায়ালা যেন পুরো দুনিয়াতে আমান, নিরাপত্তা ও সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করে দেন।
২২ শে মার্চ ২০২০ খ্রীষ্টাব্দ। অনুবাদ : সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ
#সংগৃহীত
0 Comments