Ad

আল কোরআনের ১১৪ সূরার ১০০০ আয়াত, তাফসিরে ইবনে কাছির, সিহাহ সিত্তাহ ও বিবিধ হাদিসে হানাফী মাযহাবের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ (পর্ব-১৫৫)

 




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১৩২ নং আয়াতের অনুবাদ-

১৩২। আর তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর, আশা করা যায় তোমাদের উপর রহমত করা হবে।

# সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১৩২ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির

১৩২। আল্লাহ, তাঁর ও রাসূলের আনুগত্যের আদেশ দিয়ে এর উপর রহমত দানের অঙ্গিকার করেছেন।

* আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) আনুগত্য হবে কোরআন ও হাদিস মানলে।

সূরাঃ ২, বাকারা। ১০৬ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০৬। আমরা কোন আয়াত মানসুখ বা রহিত করলে অথবা ভুলে যেতে দিলে তা’হতে উত্তম বা তার সমতুল্য কোন আয়াত আমরা প্রদান করে থাকি।তুমি কি জান না যে আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।

সহিহ মুসলিম, ৬৬৯ নং হাদিসের (কিতাবুল হায়েয) অনুবাদ-

৬৬৯। হযরত আবুল আলা ইবনে শিখখীর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কোন কোন হাদিস একটি আরেকটিকে মানসুখ বা রহিত করে, যেমন কোরআনের কোন কোন আয়াত কোন কোন আয়াতকে মানসুখ বা রহিত করে।

* আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) আনুগত্য হবে কোরআন ও হাদিসের মানসুখ বিধান বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিস মানলে।

সূরাঃ ১৬ নাহল, ৪৩ ও ৪৪ নং আয়তের অনুবাদ

৪৩।তোমার পূর্বে আমরা পুরুষ ভিন্ন (বার্তা বাহক) প্রেরণ করিনি। আমরা তাদের প্রতি ওহি প্রেরণ করেছিলাম।অতএব আহলে যিকরকে জিজ্ঞাস কর, যদি তোমরা না জান।

* আলেমগণকে আহলে যিকির বলে। কোন কিছু না জানলে তাঁদের কাছ থেকে জানা ফরজ। কোরআন ও হাদিসের কোন বিধান মানসুখ ও কোন বিধান মানসুখ নয় তা’ আলেমগণ থেকে জেনে নিতে হবে। কিন্তু আলেমগণের ভিতর ১। মোনাফেক ২। অহংকারী ৩। রিয়াকার ৪। মিথ্যাবাদী থাকে।

# মোনাফেক

সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০১। মরুবসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে জান না। আমরা তাদের সম্পর্কে জানি।আমারা সিগ্র তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব। এরপর তারা মহা শাস্তির দিকে যাত্রা করবে।

* মোনাফেক শাস্তিযোগ্য অপরাধী। আলেম মোনাফেক হলে তার কাছ থেকে কোন কিছু জানার দরকার নেই।

# অহংকারী

সূরাঃ ২ বাকারা, ৩৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩৪। আর যখন আমি ফেরেশতাগণকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিশ ছাড়া সবাই সিজদা করেছিল; সে অমান্য করল ও অহংকার করল।সুতরাং সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়েগেল।

* অহংকারী শয়তানের দলের লোক। আলেম অহংকারী হলে তার কাছ থেকে কোন কিছু জানার দরকার নেই।

# রিয়াকার

সূরাঃ ১০৭ মাউন, ৪ নং থেকে ৭ নং আয়াতের অনুবাদ-

৪। অতঃপর দূর্ভোগ সে সালাত আদায়কারীদের

৫। যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন

৬। যারা রিয়া করে বা লোকদেখানোর জন্য তা’ করে।

* রিয়াকারের ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। আলেম রিয়াকার হলে তার কাছ থেকে কোন কিছু জানার দরকার নেই।

# মিথ্যাবাদী

সূরাঃ ৮৩ মুতাফফিফীন, ১০ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০। সেই দিন দুর্ভোগ হবে মিথ্যাবাদীদের।

* মিথ্যাবাদীদের জন্য দুর্ভোগ। আলেম মিথ্যাবাদী হলে তার কাছ থেকে কোন কিছু জানার দরকার নেই।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।

* আলেম মহানবির (সা.) একদল উম্মত। তাদের সর্ববৃহৎ দল হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়া বিষয়ে মহানবি (সা.) নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। ১। মোনাফেক ২। অহংকারী ৩। রিয়াকার ও ৪। মিথ্যাবাদী থেকে আত্মরক্ষা করতে কতিপয় আলেম নয়, বরং আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

সহিহ তিরমিযী, ১৯৮ নং হাদিসের (নামাজ অধ্যায়) অনুবাদ-

১৯৮। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইমাম হচ্ছে যামিন এবং মোয়াজ্জিন হলো আমানতদার। হে আল্লাহ! ইমামকে সৎপথ দেখাও এবং মুয়াযযিনকে ক্ষমা কর।

* মহানবি (সা.) ইমামগণের সৎপথের দোয়া করায় ইমাম আলেমগণকে আলেম সাব্যস্ত করা যায়। কিন্তু তাঁদের মাঝেও ১। মোনাফেক ২। অহংকারী ৩। রিয়াকার ও ৪। মিথ্যাবাদী থাকতে পারে বিধায় ইমাম আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। তাহলেই কেবল সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১৩২ নং আয়াতের মান্যতা সঠিক থাকবে।

ইমাম আলেমগণের সর্ববৃহৎ দল হানাফী বিধায় হানাফী ছাড়া অন্য কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকা হারাম।

সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ।

৩। আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।

* রাসূলের (সা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবেঈ। সাহাবায়ে কোরামের (রা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবে তাবেঈ। সাহাবায়ে কেরামের (রা.) পর তাঁরা মাননীয়। তাঁদের সর্ববৃহৎ দল হানাফী বিধায় হানাফী ছাড়া অন্য কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকা হারাম। একজন তাবেঈ ও একজন তাবে তাবেঈর অনুসারী হতে চাইলে তাবেঈ ইমাম আবু হানিফা (র.) ও তাবে তাবেঈ ইমাম আবু ইউসুফের অনুসারী হতে হবে। কারণ কোরআন ও হাদিস হানাফী ইমাম আবু হানিফা (র.) ও আবু ইউসুফকে (র.) সঠিক সাব্যস্ত করে।

সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩। আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।

* রাসূলের (সা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবেঈ। সাহাবায়ে কোরামের সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবে তাবেঈ। তাদের অনুসারী হতে হবে। তবে মতভেদ ক্ষেত্রে তাদের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

সহিহ মুসলিম, ৬৩৩৯ নং ও ৬৩৪০ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৬৩৩৯।হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। যদি দীন আসমানের দূরবর্তী সুরাইয়া নক্ষত্ররাজির কাছে থাকত, তবে পারস্যের যে কোন ব্যক্তি তা’ নিয়ে আসত; অথবা তিনি বলেছেন, কোন পারসিক সন্তান তা’ অর্জন করত।

সহিহ মুসলিম, ৬৩৪০ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৬৩৪০। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবি করিমের (সা.) নিকট বসা ছিলাম। তখন তাঁর উপর সূরা জুমুয়া অবতীর্ণ হল। যখন তিনি এ আয়াত পড়লেন, ‘ওয়া আখারিনা মিনহু লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম - আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি’ তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এরা কারা? নবি করিম (সা.) তার কোন জবাব দিলেন না। এমন কি সে একবার অথবা দু’ বার কিংবা তিনবার তাঁকে জিজ্ঞাস করল। রাবী বলেন, তখন আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রা.) ছিলেন। রাবী বলেন, নবি করিম (সা.) তাঁর হাত সালমানের (রা.) উপর রাখলেন, এরপর বললেন, যদি ঈমান সূরাইয়া তারকার কাছে থাকত তাহলে অবশ্যই তার গোত্রের লোকেরা সেখান পর্যন্ত পৌঁছত।

* হাদিসে বলা তাবেঈ হলেন ইমাম আবু হানিফা (র.) কারণ তিনি ছাড়া হযরত সালমানের (রা.) গোত্রের লোক আর কোন মুজতাহিদ তাবেঈ নেই। সংগত কারণে তাবেঈ হিসেবে তাঁর অনুসারী হতে হবে।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৩০ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

২৩০। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার থেকে একটি হাদিস শুনে অতঃপর তা’ অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয় আল্লাহ তাকে হাস্যোজ্জল ও আনন্দময় করে দেবেন। কেননা এমন কতক ফিকাহ বাহক রয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে ফকীহ নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী অধিকতর জ্ঞানী হয়ে থাকে।

* মহানবির (সা.) পক্ষ থেকে দু’জন ফকিহ তাঁর হাদিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত।তাঁদের একজন ফিকাহ শিক্ষাদানকারী এবং অন্যজন উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী, যিনি তাঁর ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ে অধিকতর জ্ঞানী। ইতিহাসে এমন শুধু একটি জুটি আছে, তাঁরা হলেন ইমাম আবু হানিফা (র.) ও তাঁর শিক্ষার্থী ইমাম আবু ইউসুফ (র.) যিনি তাঁর ফিকাহ শিক্ষাদানকারী ইমাম আবু হানিফার চেয়ে উক্ত বিষয়ের অধিকতর জ্ঞানী ছিলেন। কারণ ইমাম আবু ইউসুফের (র.) খেলাফতের প্রধান বিচার পতির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার খেলাফতের প্রধান বিচারপতির যোগ্যতা থাকলেও তাঁর খেলাফতের প্রধান বিচারপতির অভিজ্ঞতা ছিল না। সংগত কারণে তাবে তাবেঈ হিসেবে ইমাম আবু ইউসুফের (র.) অনুসারী হতে হবে।

কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র.) ও ইমাম আবু ইউসুফর (র.) মতভেদে আলেমগণের মিমাংসা মানতে হবে।

সূরাঃ ২১ আম্বিয়া, ৭৮ নং ও ৭৯ নং আয়াতের অনুবাদ-

৭৮। আর স্মরণ কর দাউদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করতেছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে, তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের মেষ; আমরা প্রত্যক্ষ করতেছিলাম তাদের বিচার।

৭৯। আর আমরা এ বিষয়ে সুলায়মানকে মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমরা দিয়ে ছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আমরা পর্বত ও পাখীদেরকে অধীন করে দিয়েছিলাম, উহারা দাউদের সঙ্গে আমাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো; আমরাই ছিলাম এ সমস্তের কর্তা।

সহিহ আল বোখারী, ৩১৮১ নং হাদিসের (আম্বিয়া কেরাম অধ্যায়) অনুবাদ-

৩১৮১। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছেন, ‘আমারও অন্যান্য মানুষের উদাহরণ হলো এরূপ, যেমন এক ব্যক্তি অগ্নি প্রজ্বলিত করল, তাতে ঝাঁকে ঝাঁকে কীট ও পতঙ্গ পড়তে লাগল। রসূলুল্লাহ (সা.) প্রসঙ্গত বললেন, দুজন মহিলা ছিল, তাদের দু’টি শিশু সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের শিশু সন্তানটিকে নিয়েগেল। তখন একে অপরকে বলল তোমার শিশুকে নিয়েছে।দ্বিতীয় মহিলা বলল, বাঘে নিয়েছে তোমার শিশু।তখন উভয় মহিলা দাউদের (আ.) নিকট বিচার প্রার্থী হল। হযরত দাউদ (আ.) অধিক বয়স্ক মহিলার পক্ষে রায় দিলেন। মহিলা দ্বয় বের হয়ে সুলায়মানের (আ.) নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিল। তারা তাঁকে মামলার রায় শুনাল। তখন তিনি বললেন, তুমি একটি ছোরা নিয়ে আস আমি শিশুটিকে দ্বিখন্ডিত করে উভয়ের মধ্যে বন্টন করে দেব।বয়ঃকনিষ্ঠা মহিলা বলে উঠল, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। এরূপ করবেন না। শিশুটি তারই। তখন তিনি বয়ঃকনিষ্ঠা মহিলার পক্ষে রায় প্রদান করলেন। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম ছুরি অর্থে ‘সিক্কিনুন’ শব্দ আমি আজই শুনলাম। আমরাতো ছুরিকে ‘মুদিয়াতুন’ বলতাম।

* মতভেদে মিমাংসা মানা আল্লাহর রীতি। এখন ইমাম আলেম ছাড়া অন্য কোন মিমাংসাকারী নেই বিধায় তাঁদের সর্ববৃহৎ দলের মিমাংসা মানা ফরজ। ইমাম আলেমগণের সর্ববৃহৎ দল হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়েছেন বিধায় আব্বাসীয় খলিফাগণ হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়েছেন।

# আব্বাসীয় সংক্রান্ত হাদিস

সহিহ আল বোখারী, ৩৪৪২ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৪৪২। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। যখন অভাব অনটন দেখা দিত তখন ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের উছিলায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন হে মাবুদ! আমরা আমাদের নবির (সা.) উছিলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করতাম যে, তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর তখন প্রবল বর্ষণ করতে। এখন আমরা আমাদের নবির চাচা আব্বাসের (রা.) উছিলায় প্রার্থনা করছি। তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। তখন ভারী বর্ষণ শুরু হত।

* উছিলায় হযরত আব্বাস (রা.) ছিলেন মহানবির (সা.) ধারাবাহিক ব্যক্তি এবং তাঁর বংশের খলিফাগণ ছিলেন মহানবির (সা.) ধারাবাহিক ইসলামী নেতা।

সহিহ তিরমিযী, ৩৭০১ নং হাদিসের [ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৩৭০১। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আল আব্বাসকে (রা.) বললেন, আগামী সোমবার আপনি আমার কাছে আসবেন এবং আপনার সন্তানদেরকেও সাথে নিয়ে আসবেন। আমি আপনার জন্য এবং আপনার সন্তানদের জন্য একটি দোয়া করব, যার দরুন আল্লাহ আপনাকেও উপকৃত করবেন এবং আপনার সন্তানদেরও। সকালে তিনি গেলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে গেলাম। তিনি আমাদের গায়ে একখানা চাদর জড়িয়ে দিলেন, এরপর বলেন, হে আল্লাহ আল আব্বাস ও তাঁর সন্তানদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয়দিক থেকে এমনভাবে মাফ করে দিন, যার পর তাদের আন কোন অপরাধ বাকি না থাকে। হে আল্লাহ তাঁকে তাঁর সন্তানদের অধিকার পূরণের তৌফিক দিন।

রাযীন এ বাক্যটি অতিরিক্ত বলেছেন, খেলাফত এবং রাজত্ব তার সন্তানদের মধ্যে বহাল রাখ – মেশকাত ৫৮৯৮ নং হাদিস।

* আব্বাসীয়গণ  মহানবির(সা.)  দোয়ায় খলিফা  হওয়ায়  তাদের অনুসরনে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হওয়া অবশ্যই সঠিক।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৪১ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

১৪১। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে প্রিয় বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন যেমন প্রিয় বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন ইব্রাহীমকে (আ.)। কিযামতের দিন জান্নাতে আমার ও ইব্রাহীমের আসন সমানা-সামনি হবে। আর আব্বাস (রা.) আমাদের দুই বন্ধুর মাঝখানে একজন মুমিন হিসেবে অবস্থান করবেন।

মেশকাত ৫৮৯৭ নং হাদিসের (সাহাবীদের ফজিলত ও মর্যাদা অধ্যায়) অনুবাদ-

৫৮৯৭। হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)ইরশাদ করেন, আব্বাস (রা.) আমার সঙ্গে জড়িত এবং আমি তার সাথে জড়িত।

* সংগত কারণে আব্বাসীয় খলিফাগণের সাথে মহানবি (সা.) জড়িত। মহানবি (সা.) যাদের সাথে জড়িত তারা অবশ্যই হেদাযাত প্রাপ্ত।

আব্বাসীয় খলিফাগণের ৫৩ জন মুসলিম বিশ্বের আমির ছিলেন। তাঁদের আমির হওয়ার প্রমাণ-

সহিহ আল বোখারী, ৩২৪৭ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়) অনুবাদ-

৩২৪৭।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি করিম (সা.) বলেছেন, এ দায়িত্ব (মুসলিম নেতৃত্বের) চিরকাল কুরাইশদের হাতেই থাকবে। যতদিন তাদের দু’জন লোক অবশিষ্ট থাকবে।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।

* মতভেদ নেই এমন কোন আমির নেই। সংগত কারণে আমির হলেন সেই কুরাইশ উম্মতের সর্ববৃহৎ দল যাঁকে আমির মানে।এমন আমির ৬২ জন। তারা হলেন-হযরত আবু বকর (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত ওসমান (রা.), হযরত আলী (রা.), হযরত ইমাম হাসান (রা.), হযরত মুয়াবিয়া (রা.), হযরত ইমাম হোসেন (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.),হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (র.) এবং আল-মামুন, আল-মুতাসিম ও আল ওযাসিক ছাড়া ৫৩ জন আব্বাসীয় খলিফা। এদের কোন একজনকে আমিরের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না।৫৩ জন আব্বাসীয় খলিফা আমিরগণের সর্ববৃহৎ দল্।

# আমির

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-

৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের মধ্যে আমির।কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে বিরোধ দেখাদিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসুলের নিকট। ওটা উত্তম এবং পরিনামে ভাল।

সহিহ মুসলিম, ৪৬১৪ নং হাদিসের (কিতাবুল ইমারাহ) অনুবাদ-

৪৬১৪। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবি করিম (সা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে ব্যক্তি আমিরের আনুগত্য করে সে আমারই আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমিরের অবাধ্যতা করল সে আমারই অবাধ্যতা করল।

সহিহ মুসলিম, ৪৪৫৬ নং হাদিসের (কিতাবুল জিহাদ) অনুবাদ-

৪৪৫৬। হযরত ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার আমিরের মধ্যে এমন কোন ব্যাপার দেখে, যা সে অপছন্দকরে তবে সে যেন ধৈর্য্য অবলম্বন করে। কেননা, যে লোক জামায়াত থেকে কিঞ্চিত পরিমাণ সরে গেল এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল সে জাহেলিয়াতের মুত্যুই বরণ করল।

* আমির হিসাবে ৫৩ জন আব্বাসীয় খলিফার অনুসরনে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হওয়া ফরজ এবং হনাফী মাযহাব থেকে আলাদা থাকা হারাম।

Post a Comment

0 Comments