[সুরা-সাবা, আয়াত-১০/১১, তফসীর]
---------------------------------------------------------
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম,
---------------------------------------------
'মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন-
---
"আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম।
(আমি আদেশ করেছিলাম) হে পর্বতমালা !
তোমরা দাঊদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর, আর পাখীদেরকেও (এ আদেশ করেছিলাম)।
আমি লোহাকে তার জন্য নরম করেছিলাম।"
-
"বলেছিলাম, পূর্ণ মাপের বর্ম নির্মাণ কর,
এবং সংযোজনকালে পরিমাণ ঠিক রেখো, আর তোমরা সবাই নেক কাজ কর।
তোমরা যা কিছু কর আমি তা দেখি।"
__________[সুরা-সাবা, আয়াত-১০/১১]________
~~~
১০-১১ নং আয়াতের সংক্ষেপকৃত তাফসীর :
---
মহান আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে,
তিঁনি তাঁর বান্দা ও রাসূল হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর পার্থিব ও পারলৌকিক রহমত নাযিল করেছিলেন।
তাকে তিঁনি নবুওয়াতও দান করেছিলেন,
রাজত্বও দিয়েছিলেন, সৈন্য-সামন্তও প্রদান করেছিলেন,
শক্তি সামর্থ্যও দিয়েছিলেন এবং আরো একটি মুজিযা দান করেছিলেন।
---
একদিকে হযরত দাউদ (আঃ) মিষ্টি সুরে আল্লাহর একত্ববাদের গান ধরেছেন,
আর অপরদিকে পক্ষীকুলের তন্ময়তা শুরু হয়ে গেছে।
পাহাড় পর্বত সুরে সুর মিলিয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা শুরু করে দিয়েছে।
পক্ষীকুল ডানা নাড়া-চাড়া দিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি সুরে আল্লাহর একত্ববাদের গীত গাইতে লেগেছে।
~~~
তাছাড়া তার উপর এ অনুগ্রহও ছিল যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে লৌহকে নরম করে দিয়েছিলেন।
ঐ লৌহকে ভাটিতে দিবার কোন প্রয়োজন হতো না বা
হাতুড়ী দিয়ে পিটবারও দরকার হতো না। পিটবার কাজ হাত দিয়েই হয়ে যেতো।
তাঁর হাতে লোহাকে সূতার মত মনে হতো। ঐ লোহা দিয়ে তিঁনি আল্লাহর নির্দেশক্রমে লৌহ-বর্ম তৈরী করতেন।
এমন কি একথাও বলা হয়ে থাকে যে,
তিঁনিই সর্বপ্রথম পৃথিবীতে লৌহ নির্মিত যুদ্ধ-পোশাক তৈরী করেছিলেন।
যেরা বা বর্ম তৈরীর পদ্ধতি স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা তাঁকে শিখিয়েছিলেন যে,
কড়া যেন ঠিকমত দেয়া হয়। ছোট বড় যেন না হয়। মাপ যেন অনুমান মত হয়। কড়াগুলো যেন শক্ত হয়।
~~~
ইবনে আসাকীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে,
হযরত দাউদ (আঃ) ছদ্মবেশে শহরে বের হতেন। লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন।
স্থানীয় ও বহিরাগত লোকদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতেন।
তিঁনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতেনঃ
“দাঊদ (আঃ) কেমন লোক?”
প্রত্যেককেই তিঁনি তাঁর প্রশংসা করতে শুনতেন। কারো নিকট হতে তিনি সংশোধনযোগ্য কোন অপরাধের কথা শুনতে পেতেন না।
---
একদা আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে তাঁর কাছে মানুষরূপে প্রেরণ করেন।
হযরত দাউদ (আঃ)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়ে গেল।
তিঁনি অন্যান্যদের কাছে যেসব প্রশ্ন করতেন তাঁকেও সেই ভাবে প্রশ্ন করলেন।
ফেরেশতা উত্তরে বললেনঃ
“দাউদ (আঃ) লোকটি তো ভাল,
কিন্তু একটি দোষ যদি তাঁর মধ্যে না থাকতো। তবে তিনি কামেল লোকে পরিণত হতেন।”
হযরত দাউদ (আঃ) অত্যন্ত আগ্রহের সাথে পুনরায় মানুষরূপী ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ
“ঐ দোষটি কি?”
ফেরেশতা জবাব দিলেনঃ
“তিঁনি নিজের বোঝা মুসলমানদের বায়তুল মালের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন।
তিঁনি স্বয়ং তা থেকে গ্রহণ করেন,
এবং তার পরিবারবর্গও তা হতে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।”
-
হযরত দাউদ (আঃ)-এর অন্তরে কথাটি দাগ কেটে দিল।
তিঁনি মনে মনে বললেনঃ
“লোকটি সঠিক কথাই বলেছেন।”
সাথে সাথে তিঁনি আল্লাহর দরবারে সিজদায় পড়ে গেলেন ও কেঁদে কেঁদে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলেন।
তিঁনি বলতে লাগলেনঃ
“হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে এমন একটি কাজ শিখিয়ে দিন যার দ্বারা আমি আমার পেট পূর্ণ করতে পারি।
কোন শিল্প বা কারিগরি বিদ্যা আমাকে শিখিয়ে দিন যার আয় আমার ও আমার পরিবারবর্গের জন্যে যথেষ্ট হয়।”
আল্লাহ্ তা'আলা তার প্রার্থনা কবুল করে নেন এবং তাঁকে একজন শিল্পী বানিয়ে দেন।
তাঁর প্রতি রহমত হিসেবে লোহাকে তিঁনি তার জন্যে নরম করে দেন।
দুনিয়ায় সর্বপ্রথম তিনিই যেরা বা লৌহ-বর্ম তৈরী করেছিলেন।
তিঁনি একটি বর্ম তৈরী করে তা বিক্রী করে দিতেন এবং বিক্রয়লব্ধ টাকা তিন ভাগ করতেন।
এক ভাগ নিজের ও পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের কাজে ব্যয় করতেন,
এক ভাগ দান করতেন এবং এক ভাগ জমা করে রেখে দিতেন,
যাতে দ্বিতীয় বর্ম তৈরী না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর বান্দাদেরকে তা থেকে দান-খয়রাত করতে পারেন।"
~~~
হযরত দাউদ (আঃ)-কে আল্লাহ্ তা'আলা সঙ্গীত শিক্ষা দিয়েছিলেন যা অতুলনীয় ছিল।
তিঁনি যখন আল্লাহর কালামের ঝংকার তুলতেন তখন মধুর কণ্ঠের সুর পশু-পাখী,
পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি সব কিছুকেই মাতিয়ে তুলতো।
তারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আল্লাহর কালাম শুনতে মশগুল হয়ে পড়তো।
~~~
আল্লাহ তাআলা নিজের এসব নিয়ামতের বর্ণনা দেয়ার পর নির্দেশ দিচ্ছেনঃ
এখন তোমাদেরও উচিত সৎকর্মে আত্মনিয়োগ করা এবং
আমার আদেশের বিপরীত কিছু না করা।
সবচেয়ে বড় কথা এই যে, যার এতগুলো ইহসান রয়েছে তার নির্দেশ কি পালিত হবে না?
তোমরা যা কিছু কর আমি ওর সম্যক দ্রষ্টা। তোমাদের সব আমল, ছোট হোক, বড় হোক, ভাল হোক বা মন্দই হোক, আমার কাছে প্রকাশমান।
তোমাদের কোন কিছুই আমার কাছে গোপন নেই।
_____________[তফসীর ইবনে কাসির]_________
0 Comments