আকাশটা কি সুন্দর নীল, দেখলে মনটা ভরে যায়। মাঠটা যেন সবুজ কার্পেট, আহা দেখলে কি ভালো লাগে। সন্তানের চেহারাটা যেন একগুচ্ছ প্রশান্তি, মনে হয় আমার আর কিছু না থাকলেই চলে।
এই একান্ত অনুভুতিগুলি কেবলই চোখের কল্যানে। কেমন হতো যদি আমার দুটি চোখ না থাকতো! এই সুন্দর পৃথিবী তখন মনে হতো কেবলই ঘুটঘুটে কালো, এক বিশাল অন্ধকার।
.
পৃথিবী এতো সুন্দর, কারন আমার এক জোড়া চোখ আছে। প্রিয়জনের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কারন চোখ তার চেহারার অভিব্যক্তিগুলো বলে দেয়। কালো গিলাফ সবুজ গম্বুজ আমাকে টানে, কারন আমার চোখ জোড়া তাতে ধন্য হবে।
.
মাওলা চোখ দিয়েছেন, সাথে দিয়েছেন চোখ সংযত রাখার আহকাম। চোখ মাসহাফের কালো অক্ষরগুলো পড়ে যাবে, তার জন্য নেকীর পর নেকী যোগ হবে। চোখ মায়ের চেহারায় দয়ার দৃষ্টি বুলাবে, লিখা হবে হজ্বের নেকী।
.
আবার এই চোখে হারামে আরাম খুঁজবে, তৈরি হতে থাকবে উত্তপ্ত গলিত সীসা।
এই চোখের সাথে অন্তরের আজব বন্ধন। চোখের সামান্য দৃষ্টিতে হৃদয়পটে অংকিত হয়ে যায় ছবি, আর তা জেগে থাকে দীর্ঘকাল। আর মাঝে মাঝে সেই ছবি জেগে উঠে মন করে অস্থির।
চোখ ভালো থাকবে, দিল ভালো থাকবে। চোখের দৃষ্টি নষ্ট হবে, দিল হয়ে পড়বে পংকিল, অপবিত্র।
এজন্য আল্লাহ তায়ালা চোখ নীচু রাখার হুকুম দিয়েছেন। পুরুষকেও, নারীকেও। আলাদা আলাদা সম্বোধনে। কারন এই চোখ একবার হারামে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বরবাদ করে ছাড়বে ভেতরের পুরো পৃথিবী।
.
আল্লাহ তায়ালার হুকুম এমন নয় প্রসারিত করে রাখো, পড়লে না হয় সরিয়ে নিও। বরং একদম নীচু করে রাখো, অপাত্রে পড়তেই দিও না। কারন মাওলা ভালো করেই জানেন, দৃষ্টি একবার পড়ে গেলে তা সংযত করতে পারে এমন বীরপুরুষ বড় অপ্রতুল।
.
প্রথমবারের দৃষ্টি মূহুর্তেই যখম করে অন্তর। এই ক্ষতের মলম তালাশে নফস দাবী করে আবার তাকানোর। দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষতকে আরও গভীর করে, প্রশস্ত করে। এই বার নফস চড়াও হয় আগের চেয়ে বেশি শক্তি নিয়ে। অসুস্থ অন্তর তার মুকাবিলা করতে পারে না। সে নিজেকে নফসের হাওয়ালা করে। নফসের লাগামহীন ঘোড়া তাকে নিয়ে কোথায় কোথায় যে ছুটতে থাকে তার ইয়ত্তা নেই। অসুস্থ অন্তর হয়ে পড়ে মুমূর্ষু। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ছাড়া তখন আর কোন গতি থাকে না।
হজরত হাফেজ্জ্বী হুজুর রহঃ। তাকে আমি দেখি নি। যারা দেখেছেন, তাদের মুখে শুনেছি এক লম্বা জীবন নজরের পবিত্রতা ধরে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টায় ঝুঁকে চলতে চলতে বাঁকা হয়ে গেছে তার ঘাড়। কুরআনের আয়াত তাকে নজর তুলে তাকালে যেন দিলোই না। এই হচ্ছে আল্লাহর বান্দা।
হজরত গঙ্গুহী রহঃ। দীর্ঘ সতের বছর এক পথ দিয়েই প্রতিদিন দরস দিতে যেতেন। নজরের হিফাজত করতে গিয়ে কোনদিনই দু'পাশে চোখ মেলে তাকান নি। এক লোক একদিন নিজের বাসা চেনাতে হজরতকে বললো, হজরত, আপনার চলার পথেই আমার বাসা। হজরতের 'কোথায়' প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সে কোনভাবেই হজরতকে চেনাতে সক্ষম হলো না। কিভাবে সে চেনাবে? তিনি যে এই দীর্ঘ সময়ে নজর নীচু করেই চলেছেন। কোনদিন খেয়াল করেন নি ডানে কি, আর বামে কি। অথচ তখন কি আর এখনকার মতো নগ্নতা ছিলো! আজ আমাদের এই যুগে যেখানে কোন দেয়াল, কোন বিলবোর্ড নগ্নতা থেকে খালি নেই, আমাদের কি করা উচিত!
.
নজরের হিফাজতের তারগীব শুনলেই আমরা বলি, ' কি করে সম্ভব!' আমরা ধরেই নিয়েছি আজ আর তা সম্ভব নয়। অসম্ভব ধরে নিয়ে আমরা সবাই এক সাথে মরতে বসেছি। পিতা-পুত্র এক সাথে। মা-মেয়ে এক সাথে। শিক্ষক-ছাত্র এক সাথে। কেউ কারোরটা দেখেও দেখে না। 'হায়া'র সংজ্ঞা আমরা ভুলে গেছি সেই কবে!
.
শায়খুল হাদীস রহঃ 'আপবীতি'তে বলেছেন, যৌবনের শুরুতেই এই রোগের উৎপত্তি। যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে এ রোগ চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়বে।বুড়ো বয়সেও এ থেকে নিস্তার নেই। তিনি বলেছেন, কত সম্ভাবনাময় লোক, কত মেধাবীজন কেবল এই এক রোগে মাহরুম হয়ে গেছে। তার যোগ্যতা কোন কাজেই আসে নি।
.
নজরের হিফাজতের সাথে অল্প মেহনত তাকে এগিয়ে নিবে বহুদূর। নজরের খেয়ানতের সাথে হাজার মেহনত কেবলই হতাশা।তাই শক্ত প্রতিজ্ঞা চাই। প্রকাশ্যেও, গোপনেও।
ছবি আর ভিডিও'র মোড়কে আজ অশ্লীলতার মহামারি। কিছু মানুষরূপী জানোয়ার পরিবেশকে করেছে বিষাক্ত। এদের আকর্ষণীয় চামড়ার আড়ালে এরা প্রচন্ড কুৎসিত। এদের প্রতি অন্তরে ঘৃণার প্লাবন চাই।
.
আমি কেন আমার সম্ভাবনাগুলো নষ্ট করবো। রবের লানত সংগে করে কখনো কি সফল হওয়া যায়!
নজরের হিফাজত করতে গেলে দিল ক্ষতবিক্ষত হবে। মাওলা এ যখমে দয়ার মলমের প্রলেপ দেবেন। রবের একান্ত সান্নিধ্যের অপার্থিব স্বাদ দান করবেন এই দুনিয়াতে। আর টেনে নিয়ে যাবেন বেলায়েতের চূড়ায।
.
একটা পবিত্র অন্তর নিয়ে যখন কাল কিয়ামতের মাঠে রবের সামনে দাঁড়াবো অভ্যর্থনা আসবে,
ادخلوها بسلام ذلك يوم الخلود.
ঢুকে পড়ো শান্তির সাথে, আজ এখানে অনন্ত জীবন।(সংগ্রহীত)
0 Comments