Ad

আল কোরআনের ১১৪ সূরার ১০০০ আয়াত, তাফসিরে ইবনে কাছির, সিহাহ সিত্তাহ ও বিবিধ হাদিসে হানাফী মাযহাবের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ (পর্ব-২৬৩)

 



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৮ নং আয়াতের অনুবাদ-

৮। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিধান সমূহ পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠাকারী ও ন্যায়ের সঙ্গে সাক্ষ্য দানকারী হয়ে যাও। কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ন্যায় বিচার করবে না। তোমরা ন্যায় বিচার কর এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী। আর আল্লাহকে তোমরা অধিকতর ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ ওয়াকিফ হাল। 


সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৮ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির

৮।নোমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে একটি দান দিয়ে রেখেছিলেন, তখন আমার মা ওমরাহ বিনতে রাওয়াহা (রা.) বলেন, আমি এ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারি না যে পর্যন্ত রাসূলুল্লাহকে (সা.) এর উপর সাক্ষী বানানো হয়। এ কথা শুনে আমার পিতা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে হাযির হয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার পিতাকে জিজ্ঞাস করেন , তোমার অন্য সন্তানদেরকেও কি এরূপ দান দিয়ে রেখেছো? আমার পিতা উত্তরে বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং স্বীয় সন্তানদের মাঝে ইনসাফ কায়েম কর। যাও আমি কোন অত্যাচারের উপর সাক্ষী হতে পারি না। আমার পিতা তখন আমার থেকে ঐ দান ফিরিয়ে নেন।


* বিধান প্রতিষ্ঠা, ন্যায় বিচার তথা ইনসাফ আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) পছন্দ। সেজন্য আব্বাসীয় খেলাফতের প্রধান বিচারপতি কাজী আবু ইউসুফ (র.) সকল বিষয়ে ইসলামী বিধিবিধান চূড়ান্ত করেন। কারণ বিধিবিধান চূড়ান্ত না হলে বিচারের রায় বাধাগ্রস্থ্য হয়।তাতে ন্যায় বিচারে বিঘ্ন ঘটে। 


ইমাম আবু ইউসুফের (র.) চূড়ান্ত করা ইসলামী বিধিবিধান অনুমোদন করেন আব্বাসীয় খলিফাগণ। ইসলামী বিধিবিধান চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কাজী আবু ইউসুফ (র.) ইমাম আবু হানিফার (র.) মতামতকে গুরুত্ব প্রদান করেন। ইসলামের চূড়ান্ত এসব বিধিবিধানের আলোকে যে মাযহাব গঠিত হয় সেটাকে হানাফী মাযহাব বলে। কোরআন ও হাদিস হনাফী মাযহাবের প্রধান মুজতাহিদ ইমাম আবু হানিফা (র.) ও তাঁর গুষ্ঠিকে সঠিক সাব্যস্ত করে। 


# কোরআন ও হাদিস হানাফী ইমাম আবু হানিফাকে (র.) সঠিক সাব্যস্ত করে।


সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩। আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। 


* রাসূলের (সা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবেঈ। সাহাবায়ে কোরামের (রা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবে তাবেঈ। সাহাবা যুগের পর তাদের অনুসারী হতে হবে এ কথা আল্লাহ স্পষ্ট করেই বললেন। 


সহিহ মুসলিম, ৬৩৩৯ নং ও ৬৩৪০ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৬৩৩৯।হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। যদি দীন আসমানের দূরবর্তী সুরাইয়া নক্ষত্ররাজির কাছে থাকত, তবে পারস্যের যে কোন ব্যক্তি তা’ নিয়ে আসত; অথবা তিনি বলেছেন, কোন পারসিক সন্তান তা’ অর্জন করত।


সহিহ মুসলিম, ৬৩৪০ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৬৩৪০। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবি করিমের (সা.) নিকট বসা ছিলাম। তখন তাঁর উপর সূরা জুমুয়া অবতীর্ণ হল। যখন তিনি এ আয়াত পড়লেন, ‘ওয়া আখারিনা মিনহু লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম - আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি’ তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এরা কারা?  নবি করিম (সা.) তার কোন জবাব দিলেন না। এমন কি সে একবার অথবা দু’ বার কিংবা তিনবার তাঁকে জিজ্ঞাস করল। রাবী বলেন, তখন আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রা.) ছিলেন। রাবী বলেন, নবি করিম (সা.) তাঁর হাত সালমানের (রা.) উপর রাখলেন, এরপর বললেন, যদি ঈমান সূরাইয়া তারকার কাছে থাকত তাহলে অবশ্যই তার গোত্রের লোকেরা সেখান পর্যন্ত পৌঁছত।


* হাদিসে বলা তাবেঈ হলেন ইমাম আবু হানিফা (র.) কারণ তিনি ছাড়া হযরত সালমানের (রা.) এলাকার অনারব লোক আর কোন মুজতাহিদ তাবেঈ নেই। সংগত কারণে তাবেঈ হিসেবে তিনি অবশ্যই সঠিক।


# কোরআন ও হাদিস হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু ইউসুফকে (র.)সঠিক সাব্যস্ত করে।


সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩। আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। 


* রাসূলের (সা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবেঈ। সাহাবায়ে কোরামের (রা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবে তাবেঈ। সাহাবা যুগের পর তাদের অনুসারী হতে হবে এ কথা আল্লাহ স্পষ্ট করেই বললেন। 


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৩০ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

২৩০। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার থেকে একটি হাদিস শুনে অতঃপর তা’ অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয় আল্লাহ তাকে হাস্যোজ্জল ও আনন্দময় করে দেবেন। কেননা এমন কতক ফিকাহ বাহক রয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে ফকীহ নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী অধিকতর জ্ঞানী হয়ে থাকে। 


* মহানবির (সা.) পক্ষ থেকে দু’জন ফকিহ তাঁর হাদিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত।তাঁদের একজন ফিকাহ শিক্ষাদানকারী এবং অন্যজন উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী, যিনি তাঁর ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ে অধিকতর জ্ঞানী। ইতিহাসে এমন শুধু একটি জুটি আছে, তাঁরা হলেন ইমাম আবু হানিফা (র.) ও তাঁর শিক্ষার্থী ইমাম আবু ইউসুফ (র.) যিনি তাঁর ফিকাহ শিক্ষাদানকারী ইমাম আবু হানিফার চেয়ে উক্ত বিষয়ের অধিকতর জ্ঞানী ছিলেন। কারণ ইমাম আবু ইউসুফের (র.) খেলাফতের প্রধান বিচার পতির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার খেলাফতের প্রধান বিচারপতির যোগ্যতা থাকলেও তাঁর খেলাফতের প্রধান বিচারপতির অভিজ্ঞতা ছিল না। আবার ইমাম আবু ইউসুফের (র.) জ্ঞানের সাথে ইমাম আবু হানিফার (র.) জ্ঞান যোগ হয়ে ইমাম আবু ইউসুফের (র.) জ্ঞান বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফের (র.) জ্ঞান ইমাম আবু হানিফার (র.) সাথে যোগ না হওযায় ইমাম আবু হানিফা (র.) থেকে ইমাম আবু ইউসুফের (র.) জ্ঞান বেশী ছিল। সংগত কারণে তাবে তাবেঈ হিসেবে ইমাম আবু ইউসুফ (র.) অবশ্যই সঠিক।


# কোরআন ও হাদিস হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা আব্বাসীয় খলিফাগণকে সঠিক সাব্যস্ত করে।


সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি  বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানব জাতির ইমাম বানাব; সে বলেছিল আমার বংশধরগণ হতেও; তিনি বলেছিলেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালেমদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।


* উম্মতের সর্ববৃহৎ দল হানাফী মান্যতায় ৫৩ জন আব্বাসীয় খলিফা হযরত ইব্রাহীমের বংশীয় মুসলিমদের বিশ্ব ইমাম হিসাবে সঠিক ছিলেন। হানাফী অমান্যতায় এ তালিকা থেকে তিনজন খলিফা বাদ পড়েছেন। তাদের অমান্যতার কারণ তারা জালিম ছিলেন। 


সহিহ আল বোখারী, ৩২৪৭ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়) অনুবাদ-

৩২৪৭।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি করিম (সা.) বলেছেন, এ দায়িত্ব (মুসলিম নেতৃত্বের) চিরকাল কুরাইশদের হাতেই থাকবে। যতদিন তাদের দু’জন লোক অবশিষ্ট থাকবে। 


* উম্মতের সর্ববৃহৎ দল হানাফী মান্যতায় ৫৩ জন আব্বাসীয় খলিফা কুরাইশ বংশীয় মুসলিমদের বিশ্ব আমির হিসাবে সঠিক ছিলেন।


সহিহ আল বোখারী, ৩৪৪২ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৪৪২। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। যখন অভাব অনটন দেখা দিত তখন ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের উছিলায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন হে মাবুদ! আমরা আমাদের নবির (সা.) উছিলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করতাম যে, তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর তখন প্রবল বর্ষণ করতে। এখন আমরা আমাদের নবির চাচা আব্বাসের (রা.) উছিলায় প্রার্থনা করছি। তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। তখন ভারী বর্ষণ শুরু হত।


* উছিলায় হযরত আব্বাস (রা.) ছিলেন মহানবির (সা.) ধারাবাহিক ব্যক্তি এবং তাঁর বংশের খলিফাগণ ছিলেন মহানবির (সা.) ধারাবাহিক ইসলামী নেতা। 


সহিহ তিরমিযী, ৩৭০১ নং হাদিসের [ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৩৭০১। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আল আব্বাসকে (রা.) বললেন, আগামী সোমবার আপনি আমার কাছে আসবেন এবং আপনার সন্তানদেরকেও সাথে নিয়ে আসবেন। আমি আপনার জন্য এবং আপনার সন্তানদের জন্য একটি দোয়া করব, যার দরুন আল্লাহ আপনাকেও উপকৃত করবেন এবং আপনার সন্তানদেরও। সকালে তিনি গেলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে গেলাম। তিনি আমাদের গায়ে একখানা চাদর জড়িয়ে দিলেন, এরপর বলেন, হে আল্লাহ আল আব্বাস ও তাঁর সন্তানদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয়দিক থেকে এমনভাবে মাফ করে দিন, যার পর তাদের আন কোন অপরাধ বাকি না থাকে। হে আল্লাহ তাঁকে তাঁর সন্তানদের অধিকার পূরণের তৌফিক দিন।


রাযীন এ বাক্যটি অতিরিক্ত বলেছেন, খেলাফত এবং রাজত্ব তার সন্তানদের মধ্যে বহাল রাখ - মেশকাত ৫৮৯৮ নং হাদিস।


* আব্বাসীয়গণ মহানবির (সা.) দোয়ায় খলিফা হওয়ায় তারা মুসলিম বিশ্ব আমির হিসেবে সঠিক ছিলেন।  


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৪১ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

১৪১। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে প্রিয় বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন যেমন প্রিয় বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন ইব্রাহীমকে (আ.)। কিযামতের দিন জান্নাতে আমার ও ইব্রাহীমের আসন সমানা-সামনি হবে। আর আব্বাস (রা.) আমাদের দুই বন্ধুর মাঝখানে একজন মুমিন হিসেবে অবস্থান করবেন।


মেশকাত ৫৮৯৭ নং হাদিসের (সাহাবীদের ফজিলত ও মর্যাদা  অধ্যায়) অনুবাদ-

৫৮৯৭। হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)ইরশাদ করেন, আব্বাস (রা.) আমার সঙ্গে জড়িত এবং আমি তার সাথে জড়িত।


* সংগত কারণে আব্বাসীয় খলিফাগণের ৫৩ জন যারা মুসলিম বিশ্বের আমির সাব্যস্ত তাদের সাথে মহানবি (সা.) জড়িত। মহানবি (সা.) যাদের সাথে জড়িত তারা অবশ্যই সঠিক ছিলেন। 


# হানাফী মাযহাবে কোরআন ও হাদিস সাব্যস্ত সঠিক লোক ৫৫ জন। অহানাফী কোন দলে কোরআন ও হাদিস সাব্যস্ত কোন সঠিক লোক নেই। তথাপি হানাফীরা সঠিক না হয়ে তারা সঠিক হয় কেমন করে?


দূর্ভাগ্যজনকভাবে কতিপয় লোক হানাফী মাযহাবের সাথে মতভেদ করে যাদের সঠিকতার কোন প্রমাণ নেই। অথচ ইসলামে মতভেদ হারাম। যে সব লোক এসব মতভেদকারীর অনুসারী হয়ে মুসলিমদেরকে বহু দলে বিভক্ত করে মুসলিমদের চরম ক্ষতি সাধন করেছে, তাদের নিকট বিনীত অনুরোধ দয়াকরে তোমরা যাদের অনুসারী হয়েছো তাদের সঠিকতার প্রমাণ হাজির কর। নতুবা তওবা করে হানাফী হও নতুবা জাহান্নামের জন্য প্রস্তুত থাক।


সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।


# সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় আসেন। যোহরের নামাজের পর তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আহলে কিতাব তাদের ধর্মের ব্যাপারে মতানৈক্য সৃষ্টি করে ৭২ দল হয়ে গেছে। আর আমার এ উম্মতের ৭৩ দল হয়ে যাবে।অর্থাৎ সবাই প্রবৃত্তির অধীন হয়ে পড়বে।কিন্তু আরো একটি দল রয়েছে এবং আমার উম্মতের মাঝে এমন লোকও হবে যাদের শিরায় শিরায় কূপ্রবৃত্তি এমনভাবে প্রবেশ করবে যেমন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শিরায় শিরায় বিষক্রিয়া পৌঁছে যায়। হে আরববাসী! তোমরাই যদি তোমাদের নবি (সা.) কর্তৃক আনিত জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত না থাক, তবে অন্যান্য লোক তো আরও অনেক দূরে সরে পড়বে। 


সূরাঃ ৬ আনআম, আয়াত নং ১৫৯ এর অনুবাদ-

১৫৯। যারা দীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়। তাদের ব্যবস্থ্যা করার দায়িত্ব আল্লাহর।আল্লাহ তাদেরকে তাদের কাজ সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন।


সূরাঃ ১০ ইউনুস, ১৯ নং আয়াতের অনুবাদ-

১৯। মানুষ ছিল একই উম্মত। পরে উহারা মতভেদ সৃষ্টি করে।তোমার প্রতিপালকের পূর্ব-ঘোষণা না থাকলে তারা যে বিষয়ে মতভেদ ঘটায় তার মিমাংসাতো হয়েই যেত।


সূরাঃ ২৩ মুমিনূন, ৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

৫৩। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।


সূরাঃ ৩০ রূম, ৩২ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩২। যারা নিজেদের দীনে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল।


সূরাঃ ৪৩ যুখরুফ, ৬৫ নং আয়াতের অনুবাদ-

৬৫। অতঃপর তাদের বিভিন্ন দল মতানৈক্য সৃষ্টি করলো, সুতরাং সুতরাং যালিমদের জন্য দূর্ভোগ ভয়ংকর শাস্তির দিনে।


সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১১৫ এর অনুবাদ-

১১৫। কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্যপথ অনুসরন করে, তবে সে যে দিকে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর উহা কত মন্দ আবাস।


* এখন মুমিনদের পথ হানাফীদের পথ যারা সে পথ ছেড়ে অন্যপথে যায় তারা সে পথে জাহান্নামের পথেই যায়।


সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতি সঞ্চার করেছেন, ফলে তাঁর দয়ায় তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে।তোমরাতো অগ্নি কুন্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ উহা হতে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃতকরেন যাতে তোমরা সৎপথ পেতে পার।


# সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির

বেশ কয়েকটি হাদিসে এমন বর্ণিত  রয়েছে- একতার সময় মানুষ ভুল ও অন্যায় থেকে রক্ষা পায়। আবার অনেক হাদিসে মতানৈক্য থেকে ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে, কিন্তু এতদ সত্ত্বেও উম্মতের মধ্যে মতপার্থক্য ও অনৈক্যের সৃষ্টি হয়ে গেছে এবং তাদের মধ্যে তেয়াত্তরটি দল হয়েগেছে, যাদের মধ্যে একটি দল মাত্র জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। এরা ঐসব লোক যারা এমন বস্তুর উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যার উপর স্বয়ং রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ (রা.) প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। 


* যেহেতু হানাফী মাযহাব সঠিক প্রমাণ করা যায় এবং যেহেতু অহানাফী কোন দল সঠিক প্রমাণ করা যায় না, সেহেতু হানাফীদের সাথে একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরা ফরজ।


সূরাঃ ৬ আনআম, আয়াত নং ১৫৩ এর অনুবাদ-

১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও।


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ১১ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

১১। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবি করিমের (সা.) কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি প্রথমে একটি সরল রেখা টানলেন এবং তার ডান দিকে দুটো সরল রেখা টানলেন এবং বাঁ দিকেও দুটো সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি রেখার মধ্যবর্তী স্থানে হাত রেখে বললেন, এটা আল্লাহর রাস্তা। এরপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, ‘আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে’।  -(সূরা আল আনআমঃ ১৫৩)


* যেহেতু হানাফীদের পথকে সঠিক প্রমাণ করা যা্য় সেহেতু এখন ইসলামের অভিন্ন পথ হানাফীদের পথ। আর বিভিন্ন পথ হলো ১। অমুসলিমদের পথ ২। মোনাফেকদের পথ ৩। খারেজীদের পথ ৪। শিয়াদের পথ।


# অমুসলিম


সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ৮৫ নং আয়াতের অনুবাদ-

৮৫। আর যে কেহ ইসলাম ছাড়া অন্য দীন তালাশ করে, তার কাছ থেকে তা’ কখনই গৃহীত হবে না।আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শামিল হবে।


# মোনাফেক


সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০১। মরুবসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে জান না। আমরা তাদের সম্পর্কে জানি।আমারা সিগ্র তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব। এরপর তারা মহা শাস্তির দিকে যাত্রা করবে।


# খারেজী


সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৪১০৫ নং হাদিসের (হত্যা বৈধ হওয়া সম্পর্কে অধ্যায়) অনুবাদ-

৪১০৫। হযরত শরীক ইবনে শিহাব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার আকাঙ্খা ছিল যে, আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) কোন সাহাবীর সাথে সাক্ষাত করবো এবং খারেজীদের ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাস করবো। ঘটনা চক্রে ঈদের দিন আবু বরযা আসলামীকে (রা.) তাঁর কয়েকজন সাথীর সাথে দেখলাম। আমি জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কি খারেজীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহর (সা.) নিকট কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি নিজের কানে শুনেছি, চক্ষে দেখেছি। একদা রাসূলুল্লাহর (সা.) নিকট কিছু মাল আসে। তিনি তাঁর ডান দিকের এবং বাম দিকের লোকদের মধ্যে বন্টন করে দেন এবং যারা তাঁর পিছনে ছিল, তিনি তাদেরকে কিছুই দিলেন না। তখন তাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে মোহাম্মদ (সা.) আপনি ইনসাফের সাথে বন্টন করেননি। সে ছিল কাল রং বিশিষ্ট। মুড়ানো মাথা এবং সাদা কাপড় পরিহিত। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) অতিশয় রাগান্বিত হয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমরা কাউকে আমার পর আমার থেকে অধিক ইনসাফকারী দেখতে পাবে না। অতঃপর তিনি বললেন, শেষ যুগে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব হবে, মনে হয় ঐ ব্যক্তি ঐ সকল লোকের মধ্যে হবে। তারা কোরআন তেলাওয়াত করবে, কিন্তু কোরআন তাদের গলার নীচে ঢুকবে না।তারা ইসলাম হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার হতে বের হয়ে যায়। তাদের চিহ্ন হলো তাদের মাথা মুড়ানো থাকবে। তারা এভাবে প্রকাশ পেতে থাকবে এবং তাদের শেষ দলটি দাজ্জালের সাথে বের হবে। যদি তোমরা তাদের পাও, তবে তাদেরকে হত্যা করবে। কেননা, তারা সৃষ্টির মধ্যে সবচাইতে অধম।


* খারেজীরা হযরত আলীর (রা.) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তাঁকে হত্যা করে। তারা তাদের কোন সন্তানের নাম আলী রাখে না।   


# শিয়া   


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ১১২ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

১১২। হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন হে ওসমান (রা.)! আল্লাহ তা’আলা একদিন তোমাকে এ কাজের (খিলাফতের) দায়িত্ব অর্পণ করবেন। তখন মুনাফিকরা ষড়যন্ত্র করবে, যেন আল্লাহ প্রদত্ত জামা (খিলাফতের দায়িত্ব) তোমার থেকে খুলে ফেলতে পারে, যা আল্লাহ তোমাকে পরিয়েছেন। তুমি কখনো তা’ খুলে দেবে না। তিনি এ বাক্যটি তিন বার বললেন।


* শিয়ারা হযরত ওসমানের (রা.) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তাঁকে হত্যা করে। শিয়ারা তাদের সন্তানের নাম আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আয়েশা রাখে না।


# মুসলিমদের চিরন্তন সঠিক পাঁচটি দল হানাফী। তারা হলেন ১। ইমামগণের সর্ববৃহৎ দল  ২। আলেমগণের সর্ববৃহৎ দল  ৩। মুজাহিদগণের সর্ববৃহৎ দল  ৪। হাজীগণের সর্ববৃহৎ দল   ও ৫। উমরা আদায়কারীগণের সর্ববৃহৎ দল।


# ইমাম


সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি  বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানব জাতির ইমাম বানাব; সে বলেছিল আমার বংশধরগণ হতেও; তিনি বলেছিলেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালেমদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।


সূরাঃ ২৫ ফুরকান, ৭৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

৭৪। আর যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতি পালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর যারা হবে আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য ইমাম কর।


সহিহ আবুদাউদ, ৬০১ নং হাদিসের (নামায অধ্যায়) অনুবাদ-

৬০১। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ায় চড়েন। তিনি তার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ায় তাঁর শরীরের ডান দিকে আঘাত পান। এমতাবস্থায় তিনি বসে নামাজে ইমামতি করেন এবং আমরাও তাঁর পেছনে বসে নামাজ পড়ি। নামাজ শেষে মহানবি (সা.) বলেন, ইমামকে এ জন্যই নিযুক্ত করা হয়, যেন তার অনুসরন করা হয়। সুতরাং  ইমাম যখন দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে তখন তোমরাও দাঁড়াবে। এরপর ইমাম যখন রুকু করবে তখন তোমারও রুকু করবে এবং ইমাম যখন মাথা উঠাবে তখন তোমরাও মাথা উঠাবে। এরপর ইমাম যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা বলবে ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’। ইমাম যখন বসে নামাজ পড়বে তখন তোরাও বসে নামাজ পড়বে।  


সহিহ তিরমিযী, ১৯৮ নং হাদিসের (নামাজ অধ্যায়) অনুবাদ-

১৯৮। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইমাম হচ্ছে যামিন এবং মোয়াজ্জিন হলো আমানতদার। হে আল্লাহ! ইমামকে সৎপথ দেখাও এবং মুয়াযযিনকে ক্ষমা কর। 


* ইমাম তালিকায় মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ.) থাকায়, মুমিনগণ মুত্ত্তকীগণের ইমাম হওয়ার প্রার্থনা করায়, মহানবি (সা.) ইমামগণের অনুসারী হতে বলায় এবং তিনি তাদের সৎপথের দোয়া করায় তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।


# আলেম


সূরাঃ ১৬ নাহল, ৪৩ ও ৪৪ নং আয়তের অনুবাদ

৪৩।তোমার পূর্বে আমরা পুরুষ ভিন্ন (বার্তা বাহক) প্রেরণ করিনি। আমরা তাদের প্রতি ওহি প্রেরণ করেছিলাম।অতএব আহলে যিকরকে জিজ্ঞাস কর, যদি তোমরা না জান। 


* আলেমগণকে আহলে যিকির বলে। কোন কিছু না জানলে তাঁদের কাছ থেকে জানা ফরজ। 


সূরাঃ ৩৫ ফাতির, ২৮ নং আয়াতের অনুবাদ-

২৮। এভাবে রং বেরং- এর মানুষ, জন্তু ও আন’আম রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই তাঁকে ভয় করে।নিশ্চয়্ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল।


* আলেমরা আল্লাহকে ভয় করে বলে তাঁরা আল্লাহর বিষয়ে সত্যকথা বলে।


সহিহ আবু দাউদ, ৩৬০২ নং হাদিসের (জ্ঞান-বিজ্ঞান অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৬০২। কাছীর ইবনে কায়েস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি দামেশকের মসজিদে আবু দারদার (রা.) কাছে বসে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলে, হে আবু দারদা (রা.) আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) শহর মদীনা থেকে আপনার কাছে একটা হাদিস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি আপনি উক্ত হাদিসটি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। এছাড়া আর কোন কারণে আমি এখানে আসিনি। তখন আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোন পথ অতিক্রম করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথ অতিক্রম করান। আর ফেরেশতারা ত্বলেবে এলেম বা জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেন এবং আলেমের জন্য আসমান ও জমিনের সব কিছুই ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানিতে বসবাসকারী মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আবেদের উপর আলেমের ফজিলত এরূপ যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদের ফজিলত সকল তারকা রাজির উপর।  আর আলেমগণ হলেন নবিদের ওয়ারিছ এবং নবিগণ দীনার ও দিরহাম মীরাছ হিসেবে রেখে যান না; বরং তাঁরা রেখে যান ইলম।কাজেই যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করল সে প্রচুর সম্পদের মালিক হলো।  


* কোন কিছু না জানলে আল্লাহ আলেমগণের নিকট থেকে সেই জিনিস জেনে নেওয়া ফরজ করায়, আলেমগণ আল্লাহকে ভয় করেন বলে এবং আলেমগণ নবিগণের ওয়ারিশ হওয়ায় তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।


# মুজাহিদ


সূরাঃ ২২ হাজ্জ, ৭৮ নং আয়াতের অনুবাদ

৭৮।আর জিহাদ কর আল্লাহর পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে (জিহাদের জন্য) মনোনীত করেছেন।তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত বা জাতি।তিনি পূর্বে তোমাদের ‘মুসলিম’ নাম করণ করেছেন। আর এতে (এ কোরআনেও তোমাদের ‘মুসলিম’ নাম করণ করা হয়েছে) যেন রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যি হন এবং তোমরা স্বাক্ষী হও মানব জাতির জন্য। অতএব তোমরা সালাত বা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহর সাথে যুক্ত থাক। তিনি তোমাদের অভিভাবক। কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি।


সহিহ আল বোখারী, ২৬৮৮ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অনুবাদ-

২৬৮৮। হযরত আবু সাঈদ (রা.)কর্তৃক বর্ণিত।। নবি করিম (সা.) বলেছেন, এমন এক যামানা আসবে যখন একদল লোক আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে থাকবে। তাদেরকে জিজ্ঞাস করা হবে তোমাদের সঙ্গে কি নবি করিমের (সা.) কোন সাহাবা (রা.) আছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। এরপর এমন এক সময় আসবে,তাদেরকে জিজ্ঞাস করা হবে, নবি করিমের (সা.) সাহাবায়ে কেরামের (রা.) সাহচর্য লাভ করেছেন, এমন লোক কি তোমাদের সঙ্গে আছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। সুতরাং তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। এরপর আরো একটি যুগ এমন আসবে, তখনও তাদেরকে জিজ্ঞাস করা হবে, তোমাদের সাথে এমন কোন ব্যক্তি আছেন কি? যিনি নবি করিমের (সা.) সাহাবাদের (রা.) সহচরদের (র.)সাহচর্য লাভ করেছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। সুতরাং তাদেরকেও বিজয় দান করা হবে। 


* যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এবং আল্লাহ যাদেরকে বিজয় দান করেন তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।


# হাজী ও উমরা আদায়কারী


সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ৯৬ নং আয়াতের অনুবাদ-

৯৬। নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর, যা মানব জাতির জন্য প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তাতো মক্কায়। উহা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য হেদায়াত। 


সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১২৫ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অুনবাদ-

৩১২৫। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর প্রতিনিধি তিন শ্রেণীর, যোদ্ধা, হাজী এবং উমরাহ আদায়কারী।


* কাবার হেদায়াত তারা পায় যারা হেদাযাতের জন্য সেখানে আসে। তাদের হাজী ও উমরাহ আদায়কারী আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।


# মুসলিমদের উপরোক্ত পাঁচটি দল যখন যে দলের সাথে ছিল তখন সে দল সঠিক ছিল। এখন তারা যে দলের সাথে আছে তারা এখন সঠিক আছে। ভবিষ্যতে তারা যাদের সাথে থাকবে তারা তখন সঠিক থাকবে। তেরশ বছরের বেশী সময় ধরে তারা হানাফীদের সাথে আছে বিধায় এসময় তারা সঠিক আছে। ভবিষ্যতে তারা ইমাম মাহদীর (আ.) দলের সাথে থাকবে তখন ইমাম মাহদীর (আ.) দল সঠিক থাকবে। তখন আবার যারা হানাফীতে পড়ে থাকবে তারা তখন সঠিক থাকবে না। 


সহিহ তিরমিযী, ২১১৩ নং  হাদিসের (কলহ ও বিপর্যয় অধ্যায়) অনুবাদ-

২১১৩। হযরত ইবনে ওমর(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ আমার উম্মতকে অথবা মোহাম্মাদের (সা.) উম্মতকে কখনো গোমরাহীর উপর একত্র করবেন না। আর জামায়াতের উপর আল্লাহর হাত বিস্তৃত। যে ব্যক্তি মুসলিম সমাজ থেকে পৃথক হয়ে গেছে সে পৃথকভাবেই জাহান্নামে যাবে। 


* সারা বিশ্বে মুসলিম সমাজ হানাফী সমাজ। মুসলিমদের অন্য কোন দল সারা বিশ্বে নেই। তারা সারা বিশ্বে মুসলিম সমাজ হবে কেমন করে? সংগত কারণে যারা হানাফী মুসলিম সমাজ থেকে থেকে পৃথক হয়ে গেছে, তারা পৃথকভাবেই জাহান্নামে যাবে।

Post a Comment

0 Comments