.
উম্মাহ ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে, এই হাদিসের অপব্যাখ্যার জবাবঃ “এবং বনু ইস্রাঈল ৭২ ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। তারা বললেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার উপরে টিকে থাকবে।” (সহীহ তিরমিযী হা/২১২৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২; সিলসিলাহ সহীহাহ হা/১৩৪৮; আলবানী, মিশকাত হা/১৭১)
.
এই হাদীছ সম্পর্কে আলেমদের ব্যক্তব্যঃ
.
1) হাকেম বর্ণিত ‘হাসান’ সনদে এসেছে, “আমি ও আমার সাহাবীগণ আজকের দিনে যার উপরে আছি।” (হাকেম হা/৪৪৪, ১/১২৯ পৃঃ)
.
2) খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে রাসূল (ছাঃ) বর্ণিত ‘আল-জামা‘আত’ অর্থ কি- একথা জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, “হক-এর অনুগামী দলই জামা‘আত, যদিও তুমি একাকী হও।” (ইবনু ‘আসাকির, তারীখু দিমাশক ১৩/৩২২ পৃষ্ঠা; আলবানী, মিশকাত ১/৬১ পৃষ্ঠা, হা/১৭৩-এর টীকা নং ৫) ।
.
3) মুক্তিপ্রাপ্ত ও সাহায্যপ্রাপ্ত দল সম্পর্কে ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হিঃ)- এর উস্তাদ আলী ইবনুল মাদীনী (১৬১-২৩৪হিঃ) দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, -“তারা হল ‘আহলুল হাদীছ’ জামা’আত । … তারা ব্যতীত মু’তাযিলা, রাফেযী (শী’আ), জাহ্মিয়া, মুরজিয়া ও আহলুর রায়-দের নিকট থেকে সুন্নাতের কিছুই আশা করতে পারি না।” (আবুবকর আল-খ্বতীব বাগদাদী, শারফু আসহাবিল হাদীস,
৩০ পৃষ্ঠা; আল-কামেল ইব্নে আদী, ১/১৩১ পৃঃ; আবূ মুহাম্মাদ আলীমুদ্দীন, মতবাদ ও সমাধান, ১৫ পৃঃ)
.
4) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ)-কে ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত হক-এর উপরে একটি দল টিকে থাকবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, -“তারা যদি ‘আহলেহাদীছ’ না হয়। তাহ’লে আমি জানি না তারা কারা ?” (তিরমিযী হা/২১৯২; মিশকাত হা/৬২৮৩-এর ব্যাখ্যা; ফাৎহুল বারী ১৩/৩০৬ পৃঃ, হা/৭৩১১-এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০- এর ব্যাখ্যা; শারফু আসহাবিল হাদীস পৃঃ ১৫।)
.
5) ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকিম (মৃঃ ৪০৫ হিঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এই মন্তব্য করে ভালোই করেছেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকার সেই বিজয়ী দলটি হল ‘আসহাবুল হাদিস’। (মা’রিফাতু উলূমুল হাদিস, পৃঃ ২)
এরপরে আরো অনেক মুজতাহিদগণই আহলেহাদীছদের সম্পর্কে বলেছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের কথা তুলে ধরছিঃ
ইয়াযীদ ইবনে হারূণ ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ফের্কায়ে নাজিয়া সম্পর্কে বলেন, “তারা যদি আহলেহাদীছ না হয়, তবে আমি জানি না তারা কারা’’। (তিরমিযী, মিশকাত হা/৬২৮৩-এর ব্যখ্যা; ফাৎহুল বারী ১৩/৩০৬ হা/৭৩১১- এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছহীহা হা/২৭০ –এর ব্যাখ্যা; শারফ ১৫)ক্বাযী আয়ায বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) একথা দ্বারা আহলে সুন্নাত এবং যারা আহলুল হাদীছ-এর মাযহাব অনুসরণ করেন, তাদেরকে বুঝিয়েছেন’। (ফৎহুল বারী ‘ইলম’ অধ্যায় ১/১৯৮ হা/৭১- এর ব্যাখ্যা ।)
ইমাম হাম্বল আরো বলেন, ‘আহলে হাদিসের চেয়ে উত্তম কোন দল আমার কাছে নেই । তারা হাদীছ ছাড়া অন্য কিছু চেনে না’। (আবু বকর আল-খতিব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদিস পৃঃ ২৭ ।)
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘যখন আমি কোন আহলে হাদীছকে দেখি তখন আমি যেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জীবন্ত দেখি’ (শারফু ২৬)
ইমাম আবু ইউসুফ রহ: তার দরজায়
একদিন আহলে হাদীসের সমাবেশ
দেখে বলেন:
"জমিনের উপরে আপনাদের চেয়ে উত্তম
কেউ নেই।"
[কিতাবুশ শার্ফালিল খতীব
বাগদাদী,পৃষ্ঠা ৫১]
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেনঃ ‘যার কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে, তার এটা জানার কথা যে, আহলে হাদীছগণই হলেন, মুসলিমদের মধ্যে রাসূল (সাঃ) এর বাণীসমূহের ও তার ইলমের অধিক সন্ধানী ও সে সবের অনুসরণের প্রতি অধিক আগ্রহশীল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে সর্বাধিক অধিক দূরে অবস্থানকারী, যার বিরোধিতা সে করে থাকে । ….মুসলিমদের মধ্যে তাদের অবস্থান এত মর্যাদাপূর্ণ, যেমন সকল জাতির মধ্যে মুসলিমদের অবস্থান মর্যাদাপূর্ণ’ । (ইবনু তাইমিয়া মিনহাজুস সুন্নাহ, ২/১৭৯ পৃঃ)
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আবু হানিফা, মালেক, শাফেঈ ও আহমাদের জন্মের বহু পূর্বে হতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের প্রাচীন একটি মাযহাব সুপরিচিত ছিল । সেটি হল সাহাবায়ে কেরামের মাযহাব, যারা তাদের নবীর কাছ থেকে সরাসরি ইলম হাছিল করেছিল’ । (আহমাদ ইবনু তাইমিয়া মিনহাজুস সুন্নাহ মিশরী ছাপা, ১/২৫৬ পৃঃ ।)
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) বলেন, “আহলেহাদীছগণ হলেন তাঁরাই, যারা মুহাম্মাদ (সাঃ) ব্যতীত নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির রায়কে প্রাধান্য দেয় না, যতই বড় তিনি হোক না কেন । তারা তাদের বিরোধী, যারা হাদিস ও তার প্রতি আমলের তোয়াক্কা করে না, তারা যেমন কেবল তাদের ইমামদের রায়কে প্রাধান্য দেয়- অথচ ইমামগণ এ থেকে নিষেধ করে গেছেন, তেমনি আহলেহাদীছগণ একমাত্র তাদের নবীর কথাকে প্রাধান্য দেন’।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘এই বর্ণনা থেকে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আহলে হাদিস হবে সাক্ষী স্বরূপ’। (সিলসিলা ছহীহাহ ১/৪৮২ পৃঃ ২/২৭০ এর ব্যাখ্যা)।
==============================
================
প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কোন মুসলিম যুবককে দেখলে খুশি হয়ে বলতেন, “রাসূল (সাঃ) এর অসিয়ত অনুযায়ী আমি তোমাকে মারহাবা জানাচ্ছি । রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে মজলিস প্রসস্থ করার ও তোমাদেরকে হাদীছ বুঝাবার নির্দেশ দিয়ে গেছেন । কারণ কেননা তোমরাই আমাদের পরবর্তি বংশধর ও পরবর্তি আহলুল হাদীছ”।
(আলবানী সিলসিলাহ সহীহাহ হা/২৮০, আবু বকর আল খতীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, (লাহোর রিপন প্রেসঃ তারিখ বিহীন) পৃঃ ১২, হাকেম সহীহ বলেছেন )।
.
খ্যাতনামা তাবেঈ ইমাম শা‘বী (২২-১০৪ হিঃ) সাহাবায়ে কেরামের জামা‘আতকে ‘আহলে হাদীছ’ বলতেন । যেমন একদা তিনি বলেন, ‘এখন যেসব ঘটছে তা আগে জানলে আমি কোন হাদিস বর্ণনা করতাম না, কেবল ঐ হাদিস ব্যতীত, যার উপরে ‘আহলুল হাদীছ’ অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম একমত হয়েছেন’ ।(শামসুদ্দিন যাহাবী, তাযকেরাতুল হুফফায (বৈরুতঃ দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ১/৮৩
0 Comments