সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ১১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১১। হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে, তা’ স্মরণ কর। যখন এক সম্প্রদায় এ চিন্তায় ছিল যে তোমাদের দিকে তাদের হাত উত্তোলন করবে, তখন আল্লাহ তাদের হাতকে তোমাদের দিক থেকে সংযত করে দিলেন। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহর উপর তোমাদের সর্বদা ভরসা করা উচিত।
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ১১ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির
১১।হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ইহুদীরা মহানবি (সা.) ও তাঁর সাহাবীদেরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে খাদ্যে বিষ মিশিয়ে তাঁদেরকে দাওয়াত করে। তখন মহান আল্লাহ এ সংবাদ রাসূলুল্লাহকে (সা.) জানিয়ে দেন। আর তাতে করে তিনি এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বেঁচে যান।
* আল্লাহর উপর ভরসার ফল কল্যাণের চাবীকাঠি। আল্লাহ সে চাবীকাঠি মহানবির (সা.) হাতে তুলে দিয়েছেন। সেই চাবীকাঠি দিয়ে তিনি অন্ধকারের বন্ধ দুয়ার খুলে মাত্র ২৩ বছরে একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারপর তাঁর উম্মত সেই সাম্রাজ্য দেড় কোটি বর্গ কিলোমিটার ছড়িয়েছে। আর তাঁর হানাফী উম্মত এখন ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৩৭ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-
২৩৭। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই কতক লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে নিশ্চয়ই কতক লোক আছে, যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। আর সেই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যার হাতে আল্লাহ কল্যাণের চাবি রেখেছেন।আর ধ্বংস তার জন্য যার উভয় হাতে আল্লাহ অকণ্যাণের চাবি রেখেছেন।
* আব্বাসীয় হানাফী খলিফাগণ ও অটোমান হানাফী সুলতানগণ বারশত বছর মুসলিমদের জন্য কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দার রুদ্ধকারী ছিল। তখন তারা ছিল বিশ্ব নিয়ন্ত্রক। তখন মুসলিমদের উপর অমুসলিমরা চড়াও হতে ভয় পেত। হানাফী বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হওয়ার পরেই অমুসলিমরা মুসলিমদের উপর চড়াও হতে শুরু করে। এমনকি পরাশক্তি রাশিয়া হানাফী ঘাটি আফগানদেরকে হামলাকরে বসে। অবশেষে তারা আফগান হানাফীদের সাথে বাজেভাবে হেরেগেছে। পরাশক্তি আমেরিকাও আফগানদেরকে হামলা করে অবশেষে তাদের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। হানাফীরা আবার বিশ্ব নিয়ন্ত্রকের আসনে উপবিষ্ট হতে পারলে তা’ মুসলিমদের জন্য যথেষ্ট কল্যাণকর হবে। হানাফীরা ছাড়া মুসলিমদের আর কোন দল কখনো মুসলিমদের জন্য হানাফীদের মত কল্যাণকর সাব্যস্ত হয়নি।সংগত কারণে তারা মুসলিমদের সঠিক দল সাব্যস্ত হতে পারে না।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৭৭৬ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অনুবাদ-
২৭৭৬। আনাস ইবনে মালেকের (রা.) খালা এবং মহানবির (সা.) দুধ খালা উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! কে আপনাকে হাসালো? তিনি বললেন, আমার উম্মতের কতক লোককে আমার নিকট এমন অবস্থায় পেশ করা হয়েছে যে, তারা এই সমূদ্রের উপর সওয়ার হয়েছে, যেমনভাবে বাদশাহ সিংহাসনে আরোহন করে। উম্মু হারাম বললেন, তিনি তাঁরজন্য দোয়া করলেন। এরপর পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর প্রথম বারের ন্যায় জাগ্রত হলেন। তারপর উম্মু হারাম (রা.) অনুরূপ বললেন, রাসূলও (সা.) প্রথমবারের অনুরূপ জবাব দিলেন। উম্মু হারাম (রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। আনাস (রা.) বলেন, অতঃপর তিনি তাঁর স্বামী উবাদা ইবনে সামিতের (রা.) সাথে বের হলেন জিহাদ করার জন্য, যখন মুসলিমগণ মু’আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের সাথে সর্ব প্রথম নৌযুদ্ধে রওয়ানা করে। অতঃপর তারা জিহাদ থেকে ফিরে এসে সিরিয়ায় অবতরণ করলেন তখন সওয়ার হওয়ার জন্য তাঁর কাছে একটা জন্তুযান আনা হলো। জন্তুযানটি তাকে ফেলে দিল। এতেই তিনি ইন্তিকাল করলেন।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৭৭৮ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অনুবাদ-
২৭৭৮। হযরত আবু উমামা (রা.)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি যে, নৌ-পথের যুদ্ধের একজন শহীদ স্থলপথে দুইজন শহীদের সমান, আর নৌ যুদ্ধে যার মাথা ঘুরবে সে সেই ব্যক্তির মত স্থলপথে যে নিহত হয়। আর দুই ঢেউয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব অতিক্রমকারী আল্লাহর আনুগত্যে পৃথিবী সফরকারীর সমান। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে সকলের জান কবয করার দায়িত্ব প্রদান করেছেন, নৌ যুদ্ধের শহীদের জান ব্যতীত। কেননা আল্লাহ নিজেই তাদের রুহ নিয়ে নেন। স্থলপথের শহীদের সকল গুনাহ তিনি ক্ষমা করে দেন ঋণ ব্যতীত, আর নৌ যুদ্ধের শহীদের সকল গুনাহ এবং ঋণও তিনি ক্ষমা করে দেন।
* নৌ-যুদ্ধে শত শত বছর সমূদ্রে রাজত্ব করেছে অটোমান হানাফীরা। সংগত কারণে তারা আল্লাহর বিশেষ বান্দা হিসেবে সাব্যস্ত।
সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১৭৭ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অুনবাদ-
৩১৭৭। হযরত আবু হুরায়রা (রা.)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে হিন্দুস্থানের যুদ্ধের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি তা’ পেলে তাতে আমার জান মাল উৎসর্গ করব। আর আমি যদি নিহত হই তবে মর্যাদাবান শহীদ বলে গণ্য হব, আর যদি প্রত্যাবর্তন করি, তাহলে আমি আবু হুরায়রা হব আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত।
সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১৭৮ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অুনবাদ-
৩১৭৮। হযরত রাসূলুল্লাহর (সা.)গোলাম সাওবান (রা.)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন আমার উম্মতের দু’টি দল, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জাহান্নাম হতে নাজাত দান করেছেন, একদল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদ করবে আর একদল যারা ঈসা ইবনে মরিয়মের সাথে থাকবে।
* তরাইনের দ্বিতীয় ও পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ হয়েছে আফগান হানাফী ও ভারতীয় হিন্দুদের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধ। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে আফগান হানাফীদের সহায়ক ছিল মোগল হানাফীরা।যা মোগল ও আফগান হানাফীদেরকে মহানবির (সা.) উম্মত সাব্যস্ত করে। ভারতে সামনে হিন্দুদের সাথে যুদ্ধ হলেও তাও হানাফীদের সাথেই হবে। সংগত কারণে সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১৭৭ নং হাদিস ও সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১৭৮ নং হাদিস দ্বারা অহানাফী কোন দলকে সঠিক সাব্যস্ত করার কোন সুযোগ নেই।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪০৮৪ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-
৪০৮৪। হযরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের একটি খনিজ সম্পদের নিকট তিনজন নিহত হবেন। তাদের প্রত্যেকেই হবেন খলিফার পুত্র। এরপর সেই ধনাগার তাদের কেউ পাবেন না। প্রাচ্য দেশ থেকে কালো পতাকা উড্ডীন করা হবে । তারা তোমাদের এমনভাবে হত্যা করবে, যেমনটি ইতিপূর্বে কোন জাতি করেনি। অতঃপর তিনি আরো কিছু উল্লেখ করেছিলেন, যা আমার মনে নেই। আর তিনি এও বললেন, যখন তোমরা তাঁকে দেখতে পাবে, তখন তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করবে, যদিও তোমাদের বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। কেননা তিনি আল্লাহর খলিফা মাহদী।
* নবির (সা.) দেশের বহু লোক মুসলিমদের সঠিক দল হানাফী থেকে আলাদা থাকার অপরাধে অপরাধী। সেজন্যই মাহদী (আ.) বাহিনী তাদেরকে পাইকারী হত্যা করবে। এটা তাদের ইহকালিন শাস্তি। পরকালে এসব বদ লোকদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে জাহান্নাম। কারণ এদের কারণে আরো বহু লোক প্রতারিত হয়ে দীনের সঠিক পথ ছেড়ে বেঠিক পথে চলে।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-
৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।
* যেহেতু মতভেদ হলে মহানবি (সা.)উম্মতের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে বলেছেন সেহেতু তাঁর উম্মতের সর্ববৃহৎ দল পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না, এ বিষযে স্বয়ং মহানবি (সা.) নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। সংগত কারণে মহানবির (সা.) উম্মতের সর্ববৃহৎ দল হানাফী দল হিসাবে ১০০% হেদায়াত প্রাপ্ত দল সাব্যস্ত হয।তবে ব্যক্তিগতভাবে যে ইবাদতে অমনোযোগী তার সে দায় তার ব্যক্তিগত।
সহিহ আবু দাউদ, ৪২০৬ নং হাদিসের (ফিতনা-ফ্যাসাদ অধ্যায়) অনুবাদ-
৪২০৬। হযরত আবু মালেক আশয়ারী (র.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তিন ধরনের ফিতনা থেকে বাঁচিয়েছেন। যথাঃ ১। তোমাদের নবি তোমাদের জন্য বদদোয়া করবেন না, যাতে তোমরা এক সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে।২। বাতিলের অনুসারীরা কখনোই হকের অনুসারীদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। এবং ৩। তোমরা সবাই একসাথে পথভ্রষ্ট হবে না।
* হানাফীদের গঠিত হওয়ার পর থেকে তেরশ বছরের বেশী সময় ধরে অহানাফীরা হানাফীদের উপর জয়ী হতে পারেনি। সংগতকারণে সহিহ আবু দাউদ, ৪২০৬ নং হাদিস হানাফীদেরকে হক এবং অহানাফীদেরকে বাতিল সাব্যস্ত করে।
সহিহ বোখারী ৩৮ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-
৩৮।হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত। নবি করিম (সা.) বলেছেন, দ্বীন সহজ। যে কেউ দীনের কাজে অধিক কড়াকড়ি করে, তাকেই দীন পরাজিত করে। সুতরাং তোমরা মধ্যমাবস্থা অবলম্বন কর এবং (দীনের) নিকটবর্তী হও আর প্রফুল্ল থাক, আর সকালে, বিকালে ও রাতের কিছু অংশে সাহায্য প্রার্থনা কর।
* দীনের কাজে হানাফীরা চিরকাল মধ্যম পন্থি। অহানাফীদের সব দল চরম পন্থি। ইবাদীরা কবিরা গুণাহ বিষয়ে চরমপন্থি। শিয়ারা হযরত আলীর (রা.) পক্ষপাতিত্বে চরমপন্থি। আহলে কোরআন, হাদিস না মানায় চরমপন্থি। আহলে হাদিস, সহিহ হাদিস মানতে গিযে কোন কোন ক্ষেত্রে এর নাসেখ-মানসুখও মানতে নারাজ।শাফেঈ, হাম্বলী ও মালেকী মাযহাবের লোকেরা তাদের ইমাম গণ হানাফীদের সাথে সঠিক মতভেদ করলো কিনা তা’ যাচাই না করেই তাদের ইমামদের অনুসারী হয়ে হানাফীদের থেকে আলাদা রয়েছে। অথচ হানাফীদের সাথে তাদের ইমামদের করা প্রতিটি মতভেদ ১০০% ভুল প্রমাণ করা যায়। কিন্তু হানাফীরা তাদের প্রধান ইমাম আবু হানিফারও (র.) কতিপয় মতের উপর আমল করে না সেসব মতে তাঁর ভুল হওয়ার কারণে। সংগত কারণে হানাফী ছাড়া মুসলিমদের আর কোন দলকে মধ্যমপন্থী ও সঠিক সাব্যস্ত করা যায় না।
সহিহ বোখারী ৬৯ নং হাদিসের (ইলম অধ্যায়) অনুবাদ-
৬৯। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। হযরত নবি করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সহজ পথ অবলম্বন কর, কঠিন করে তুলবে না এবং সুখবর দাও। বিরক্তি-অস্বস্তি সৃষ্টি করবে না।
* হাদীসে দ্বীন সহজ বলা হয়েছে। হানাফী মাযহাব পালনের জন্য খুব সহজ। সংগত কারণে শুধুমাত্র হানাফী মাযহাব দীন। হানাফী মাযহাব ছাড়া অন্য কিছু দীন নয়।
হানাফী মাযহাব সারা বিশ্বের জন্য সহজ। কারণ হানাফী মাযহাবের সহায়ক আলেম সমাজ রয়েছে বিশ্বের সকল ভৌগলিক এলাকায়। বাংলাদেশের একজন ভিখারীর পক্ষ্যে পাসপোর্ট ভিসা করে, উড়ো জাহাজে চড়ে মক্কা-মদীনায় গিয়ে সেখানকার আলেম থেকে ওজুর নিয়ম শিখে নামাজ পড়া সম্ভব নয়। যারা মক্কা-মদীনার আলেম মানতে বলে তারা আগে সারা বিশ্বের সকল মসজিদে ইমাম হিসেবে মক্কা-মদীনার আলেম নিয়োগ প্রদান করুক। তারপর লোকদেরকে মক্কা-মদীনার আলেম মানতে বলুক।
বাতাস ছাড়া জীবন বাঁচেনা সেজন্য বিশ্বের সকল স্থানে বাতাস আছে। সঠিক নিয়মে ইবাদত করে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলেও সঠিক নিয়মে ইবাদত করার সহায়ক আলেম সমাজ প্রয়োজন। সেজন্য সঠিক নিয়মে ইবাদত করার সহায়ক হানাফী আলেম বিশ্বের সকল স্থানে আছে। এর থেকে এটা পরিস্কার বাতাসের ব্যবস্থাপক যে আল্লাহ, হানাফী মাযহাবের ব্যবস্থাপকও সেই আল্লাহ। আর আল্লাহ যে হানাফী মাযহাবের ব্যবস্থাপক সেই হানাফী মাযহাব সঠিক না হওয়ার সংগত কোন কারণ নেই।
# হানাফী মাযহাব না কমে বেড়েই চলছে।
সহিহ আল বোখারী ৪৯ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-
৪৯। হযরত ওবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাকে আবু সুফিয়ান ইবনে হরবের বরাত দিয়ে বলেছে, বাদশা হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে বলেন, আমি জিজ্ঞাস করলাম, তারা সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি বললে, তারা বাড়ছে। ঈমানের বিষয়টি পূর্ণতা লাভের সময় পর্যন্ত এরূপই হয়ে থাকে। আমি আরও জিজ্ঞাস করলাম, কেউ কি তাঁর ধর্মে প্রবেশের পর তাঁর প্রতি বিরাগ হয়ে তা’ পরিত্যাগ করছে? তুমি বললে, না। ঈমানে দীপ্তি ও সজীবতা হৃদয়ের সাথে মিশে গেলে এরূপই হয়ে থাকে। তাঁর প্রতি কেউ অসন্তুষ্ট হয় না।
* মুসলিমদের মধ্যে শুধুমাত্র হানাফী সংখ্যায় বেড়ে এরমধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ক্রমাগত বেড়ে এখন মোট মুসলিমের প্রায় ৮০% হানাফী্। অহানাফীদের অনেক দল এর মধ্যে বিলুপ্ত হযেছে। আহলুল হাদিসের অনুসারীরা ১০০% থেকে কমে ১% এর কম হয়ে গেছে। এদলটি বিলুপ্তির পথে রয়েছ্। কিন্তু হানাফী কখনো না কমে সব সময় বেড়েই চলছে। সংগত কারণে সহিহ আল বোখারী ৪৯ নং হাদিস হানাফীদেরকে ১০০% সঠিক সাব্যস্ত করে।
সহিহ আল বোখারী ৫৯ নং হাদিসের (ইলম অধ্যায়) অনুবাদ-
৫৯।হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন একটি বৃক্ষ আছে যার পাতা ঝরে পড়ে না আর তা’ হলো মুসলমানদের দৃষ্টান্ত। তোমরা বলত, সেটা কি গাছ? সাহাবীরা বনের বৃক্ষরাজি নিয়ে ভাবনায় লিপ্ত হলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমার মনে হলো, ওটা খেজুর গাছ। কিন্তু আমি তা’ বলতে লজ্জা বোধ করলাম। সাহাবীরা বলেন, তা’ কি গাছ, আপনিই বলে দিন। তিনি বললেন, সেটা খেজুর গাছ।
* মুসলিমের দৃষ্টান্ত পাতা না ঝরা খেজুর গাছের মত। তো পাতা না ঝরা এ দৃষ্টান্ত হানাফী মাযহাবে বিদ্যমান। কারণ শুরু থেকে অদ্যাবধি তেরশ বছরের বেশী সময ধরে হানাফরিা মুসলিমদের মাঝে তাদের দুই তৃতীয়াংশের বেশী সংখ্যা গরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। সংগত কারণে সহিহ আল বোখারী ৫৯ নং হাদিস শুধুমাত্র হানাফীদেরকে সঠিক এবং অহানাফী সকল মুসলিম দলকে পথভ্রষ্ট সাব্যস্ত করে।
সহিহ বোখারী ৪৯৯ নং হাদিসের (সালাতের ওয়াক্ত সমূহ অধ্যায়) অনুবাদ-
৪৯৯। হযরত যুহুরী (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দামেশকে আনাস ইবনে মালেকের (রা.) নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি যা যা দেখেছি তার মধ্যে এ নামাযই আজ পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু এখন নামাজও নষ্ট হতে চলেছে।
* হযরত আনাসের (রা.) কান্না হানাফী আলেমদের অনুপ্রেরণা। সঠিক সময়ে তারা সঠিক কাজ করায় হানাফীতে ইসলাম এখনো সঠিক আছে। নতুবা মুসলিমদের আফসুস করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকতো না।
সহিহ আল বোখারী, ৩৩৭৭ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়) অনুবাদ-
৩৩৭৭। হযরত উমাইর ইবনে হানী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি মুয়াবিয়া (রা.) হতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমি নবি করিমকে (সা.) বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের মধ্যে সকল যুগে এমন একটি দল থাকবে যারা আল্লাহর দীনের উপর মজবুত থাকবে। যারা তাদের বিরুদ্ধাচারণ করবে এবং তাদের অপমান করবে তারা তাদের কোনরূপ ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।এমন কি কেয়ামত পর্যন্ত তারা সেই অবস্থায় থাকবে।
* হানাফী বিরোধীরা কখনই হানাফীদের কোন ক্ষতি করতে পারেনি। কোন কালেই মুসলিমদের মাঝে তাদের শতকরা হারের ঘাটতি তৈরী হয়নি। পক্ষান্তরে আহলে হাদিস নামক দলটি ১০০% থেকে ১% এর কম হয়ে হাদিস অনুযায়ী তাদের ভন্ডামী প্রমাণ করেছে।
সূরাঃ ১১০ নাসর, ১ নং থেকে ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে।
২। আর তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবে।
৩। তখন তুমি তোমার রবের হামদ এর তাসবিহ পাঠ করবে, আর তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই তিনি তো তওবা কবুলকারী।
* মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসার পর মহানবি (সা.) মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখেছেন।হানাফী মাযহাব গঠিত হওয়ার পর থেকে মহানবির (সা.) উম্মতগণ দেখছে বিশ্ব জুড়ে মুসলিমদের জন্য আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসার পর মানুষ দলে দলে হানাফী মাযহাবে প্রবেশ করছে। সংগত কারণে হানাফী মাযহাব গঠিত হওয়ার পর থেকে হানাফী মাযহাব আল্লাহর দীন সাব্যস্ত হয়।
সহিহ আল বোখারী, ৩৩৩৫ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়) অনুবাদ-
৩৩৩৫।হযরত আবু সাঈদ (রা.) নবি করিম(সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। নবি করিম (সা.) বলেছেন লোকদের সামনে এমন এক সময় আসবে যে তারা যুদ্ধ করবে। তখন তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে নবি করিমের (সা.) সাহচর্য লাভ করেছে (সাহাবা)? তারা বলবে হ্যাঁ। তখন তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। তারপর তারা যুদ্ধ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যারা নবি করিমের (সা.) সাহাবাদের (রা.) সাহচর্য লাভ করেছে (তাবেঈ)? তারা বলবে, হ্যাঁ। তখন তাদেরকে জয় যুক্ত করা হবে।
* হাদিস অনুযায়ী হানাফী ইমাম আবু হানিফা (র.) সাহাবাদের (রা.) সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর দল হানাফী আব্বাসীয় খেলাফতের অধিনে জয়যুক্ত ছিল, তারা অটোমান সুলতানদের অধিনে জয়যুক্ত ছিল, তারা মধ্য এশিয়দের অধিনে জয়যুক্ত ছিল, তারা মোগলদের অধিনে জয়যুক্ত ছিল, আফগানদের অধিনে জয়যুক্ত ছিল এবং তারা এখনো আফগানদের অধিনে জযযুক্ত আছে। মুসলিমদের অধিকাংশ রাষ্ট্রও হানাফীদের। সংগত কারণে হাদিস অনুযায়ী হানাফী মাযহাব ইসলাম সাব্যস্ত হয়। আর এ ক্ষেত্রে অহানাফীদের অবস্থান হিসাবযোগ্য নয় বিধায় তারা পথভ্রষ্ট সাব্যস্ত হয়।
সহিহ আল বোখারী, ৬৮০৪ নং হাদিসের (কিতাবুল ইয়তেসাম) অনুবাদ-
৬৮০৪। হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবি করিম(সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবি করিম (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদা নাহকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত ও জয়যুক্ত থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহর নির্দেশ (কেয়ামত) আসবে, সে সময়ও তারা জয়যুক্ত থাকবে।
* গঠিত হওয়ার পর থেকে হানাফীরা মুসলিমদের অন্যসব দলের উপর জয়যুক্ত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে। এমকি কেয়ামত পর্যন্ত তারা জয়যুক্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকবে। সংগত কারণে হানাফী বিরোধীরা হানাফী বিরোধীতায় বেকার পরিশ্রম করে সময়ের অপচয় করে শয়তানের ভাই প্রমাণিত হচ্ছে।
সহিহ আল বোখারী, ৬৫৭৮ নং হাদিসের (কিতাবুল ফিতান)-
৬৫৭৮। হযরত যুবায়ের ইবনে আদী (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবনে মালেকের নিকট আগমন করে আমাদের উপর হাজ্জাজের পক্ষহতে যা হচ্ছে সে সম্পর্কে অভিযোগ করলাম। তিনি বললেন, তোমরা ধৈর্য অবলম্বন কর। কেননা তোমাদের পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগ হতেও নিকৃষ্ট হবে। যখন পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের রবের সাথে মিলিত হও। আমি নবি করিমকে (সা.) এ কথা বলতে শুনেছি।
* হাদিস অনুযায়ী হানাফীদের পরের নিকৃষ্ট যুগে গঠিত দল সমূহ মুসলিমদের নিকৃষ্ট দল। যারা ইসলামে শুধূ দলাদলি উপহার দিয়ে মুসলিমদের বিরক্তির কারণ হয়েছে।
সহিহ মুসলিম, ৬৩৩৯ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-
৬৩৩৯।হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। যদি দীন আসমানের দূরবর্তী সুরাইয়া নক্ষত্ররাজির কাছে থাকত, তবে পারস্যের যে কোন ব্যক্তি তা’ নিয়ে আসত; অথবা তিনি বলেছেন, কোন পারসিক সন্তান তা’ অর্জন করত।
সহিহ মুসলিম, ৬৩৪০ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-
৬৩৪০। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবি করিমের (সা.) নিকট বসা ছিলাম। তখন তাঁর উপর সূরা জুমুয়া অবতীর্ণ হল। যখন তিনি এ আয়াত পড়লেন, ‘ওয়া আখারিনা মিনহু লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম - আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি’ তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এরা কারা? নবি করিম (সা.) তার কোন জবাব দিলেন না। এমন কি সে একবার অথবা দু’ বার কিংবা তিনবার তাঁকে জিজ্ঞাস করল। রাবী বলেন, তখন আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রা.) ছিলেন। রাবী বলেন, নবি করিম (সা.) তাঁর হাত সালমানের (রা.) উপর রাখলেন, এরপর বললেন, যদি ঈমান সূরাইয়া তারকার কাছে থাকত তাহলে অবশ্যই তার গোত্রের লোকেরা সেখান পর্যন্ত পৌঁছত।
হাদিস অনুযায়ী সুরাইয়া নক্ষত্র থেকে দীন ও ঈমান যারা ফিরিয়ে এনেছেন তাদের তালিকায় যোগ হওয়ার মত এযাৎ শুধু একটি নাম পাওয়া গেছে তিনি ইমাম আবু হানিফা (র.)। তিনি সুরাইয়া নক্ষত্রে হারান দীন ও ঈমান ফিরিয়ে এনে সবার পালনযোগ্য করে উপস্থাপনের জন্য তাঁর শিক্ষার্থী ইমাম আবু ইউসুফকে (র.) দায়িত্ব দিয়েছেন। আর ইমাম আবু ইউসুফ (র.) তা’ সংশোধনের ব্যাবস্থা করে তা’ সবার পালনযোগ্য করে উপস্থাপন করেছেন। ফলে সেই দীন ও ঈমানের অনুসারী হয়েছেন তখনকার মুসলিম বিশ্ব আমির আব্বাসীয় খলিফাগণ। কাজেই আমিরের অনুসরন ফরজ হিসেবে এখন হানাফী মাযহাবের অনুসারী হওয়া সব মুসলিমের জন্য ফরজ।
হাদিস ও হাদিসে থাকা আয়াত অনুযায়ী আব্বাসীয় আমিরদের আগের আমিরদের সময়কার দীন ও ঈমান হারিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাওয়া দীন ও ঈমান যারা ফিরিয়ে এনেছেন তাদের থেকে দীন ও ঈমান যারা গ্রহণ করেনি তারা পথভ্রষ্ট।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৩০ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-
২৩০। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার থেকে একটি হাদিস শুনে অতঃপর তা’ অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয় আল্লাহ তাকে হাস্যোজ্জল ও আনন্দময় করে দেবেন। কেননা এমন কতক ফিকাহ বাহক রয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে ফকীহ নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী অধিকতর জ্ঞানী হয়ে থাকে।
* মহানবি (সা.) প্রদত্ত সূত্র মতে, ‘ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী অধিকতর জ্ঞানী হয়ে থাকে’ এমন শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাসে শুধুই একজন। তিনি ইমাম আবু ইউসুফ (র.)। কারণ তাঁর খেলাফতের প্রধান বিচারপতির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা উভয় ছিল। কিন্তু তাঁর ফিকাহ শিক্ষাদানকারী ইমাম আবু হানিফার (র.) খেলাফতের প্রধান বিচার পতির যোগ্যতা থাকলেও তাঁর এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি খেলাফতের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ পেলেও তিনি সে পদে বিচারক হিসেবে যোগদান করেননি। অন্য যাদেরকে লোকেরা ফকিহ বলে তাদের কোন শিক্ষার্থীর প্রধান বিচারপতি পদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা কিছুই ছিল না। কথায় বলে গাছ তোর কি নাম ফলে পরিচয়। কোন গাছে আম ফল ধরতে দেখলে সে গাছকে অবশ্যই আমগাছ বলা যায়। সংগত কারণে ইমাম আবু হানিফার (র.) চেয়ে তাঁর শিক্ষার্থীর অধিকতর জ্ঞান দেখে তাঁকে অবশ্যই ফিকাহ শিক্ষাদানকারী তথা ফকিহ সাব্যস্ত করা যায়। তো অন্য লোকদেরকে লোকেরা ফকিহ বলে কিসের ভিত্তিতে? তাদের কোন শিক্ষার্থী তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী হয়েছিল কি? সংগত কারণে ইসলামের একমাত্র ফকিহ ইমাম আবু হানিফা (র.) বিধায় শুধুমাত্র তাঁর অনুসারীরা রয়েছে ইসলামের সঠিক পথে।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৮০ নং হাদিসের (পবিত্রতা ও তার পন্থাসমূহ অধ্যায়) অনুবাদ-
২৮০। আবু মালিক আশ’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পরিপূর্ণভাবে ওযু করা ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাল্লা পূর্ণ করে দেয়। ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ জমিন ও আসমান সমূহ পরিপূর্ণ করে দেয়। নামাজ হলো নূর। যকাত হলো দলিল এবং সবর হলো নূর। আর কোরআন হলো তোমার পক্ষে ও বিপক্ষে প্রমাণ। প্রতিটি মানুষ ভোরবেলায় উপনীত হয়, এরপর সে নিজেকে বিক্রি করে। এভাবে সে নিজেকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে।
* অহানাফীরা মুসলিমদের সঠিক দল হয়ে থাকলে কোরআন দিয়ে তারা তাদের সঠিকতার প্রমাণ উপস্থাপন করুক। মূখস্ত কেউ নিজেদেরকে সঠিক দাবী করলে তাদেরকে কিভাবে সঠিক মানা যায়? হানাফীরা আল কোরআনের সকল সূরার এক হাজার আয়াত দিয়ে তাদের সঠিকতার প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে। আর সেজন্যই মুসলিমরা হানাফী মাযহাবের প্রতি এতটা আকৃষ্ট।
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।
# সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় আসেন। যোহরের নামাজের পর তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আহলে কিতাব তাদের ধর্মের ব্যাপারে মতানৈক্য সৃষ্টি করে ৭২ দল হয়ে গেছে। আর আমার এ উম্মতের ৭৩ দল হয়ে যাবে।অর্থাৎ সবাই প্রবৃত্তির অধীন হয়ে পড়বে।কিন্তু আরো একটি দল রয়েছে এবং আমার উম্মতের মাঝে এমন লোকও হবে যাদের শিরায় শিরায় কূপ্রবৃত্তি এমনভাবে প্রবেশ করবে যেমন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শিরায় শিরায় বিষক্রিয়া পৌঁছে যায়। হে আরববাসী! তোমরাই যদি তোমাদের নবি (সা.) কর্তৃক আনিত জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত না থাক, তবে অন্যান্য লোক তো আরও অনেক দূরে সরে পড়বে।
সূরাঃ ৬ আনআম, আয়াত নং ১৫৯ এর অনুবাদ-
১৫৯। যারা দীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়। তাদের ব্যবস্থ্যা করার দায়িত্ব আল্লাহর।আল্লাহ তাদেরকে তাদের কাজ সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন।
সূরাঃ ১০ ইউনুস, ১৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৯। মানুষ ছিল একই উম্মত। পরে উহারা মতভেদ সৃষ্টি করে।তোমার প্রতিপালকের পূর্ব-ঘোষণা না থাকলে তারা যে বিষয়ে মতভেদ ঘটায় তার মিমাংসাতো হয়েই যেত।
সূরাঃ ২৩ মুমিনূন, ৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৩। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।
সূরাঃ ৩০ রূম, ৩২ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩২। যারা নিজেদের দীনে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল।
সূরাঃ ৪৩ যুখরুফ, ৬৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৫। অতঃপর তাদের বিভিন্ন দল মতানৈক্য সৃষ্টি করলো, সুতরাং সুতরাং যালিমদের জন্য দূর্ভোগ ভয়ংকর শাস্তির দিনে।
* হানাফীরা মুসলিমদের সঠিক দল হওয়ায় তাদের সাথে মতভেদ করা ও তাদের থেকে আলাদা দল গঠন করা হারাম।
সূরাঃ ২১ আম্বিয়া, ৭৮ নং ও ৭৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৭৮। আর স্মরণ কর দাউদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করতেছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে, তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের মেষ; আমরা প্রত্যক্ষ করতেছিলাম তাদের বিচার।
৭৯। আর আমরা এ বিষয়ে সুলায়মানকে মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমরা দিয়ে ছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আমরা পর্বত ও পাখীদেরকে অধীন করে দিয়েছিলাম, উহারা দাউদের সঙ্গে আমাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো; আমরাই ছিলাম এ সমস্তের কর্তা।
সহিহ আল বোখারী, ৩১৮১ নং হাদিসের (আম্বিয়া কেরাম অধ্যায়) অনুবাদ-
৩১৮১। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছেন, ‘আমারও অন্যান্য মানুষের উদাহরণ হলো এরূপ, যেমন এক ব্যক্তি অগ্নি প্রজ্বলিত করল, তাতে ঝাঁকে ঝাঁকে কীট ও পতঙ্গ পড়তে লাগল। রসূলুল্লাহ (সা.) প্রসঙ্গত বললেন, দুজন মহিলা ছিল, তাদের দু’টি শিশু সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের শিশু সন্তানটিকে নিয়েগেল। তখন একে অপরকে বলল তোমার শিশুকে নিয়েছে।দ্বিতীয় মহিলা বলল, বাঘে নিয়েছে তোমার শিশু।তখন উভয় মহিলা দাউদের (আ.) নিকট বিচার প্রার্থী হল। হযরত দাউদ (আ.) অধিক বয়স্ক মহিলার পক্ষে রায় দিলেন। মহিলা দ্বয় বের হয়ে সুলায়মানের (আ.) নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিল। তারা তাঁকে মামলার রায় শুনাল। তখন তিনি বললেন, তুমি একটি ছোরা নিয়ে আস আমি শিশুটিকে দ্বিখন্ডিত করে উভয়ের মধ্যে বন্টন করে দেব।বয়ঃকনিষ্ঠা মহিলা বলে উঠল, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। এরূপ করবেন না। শিশুটি তারই। তখন তিনি বয়ঃকনিষ্ঠা মহিলার পক্ষে রায় প্রদান করলেন। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম ছুরি অর্থে ‘সিক্কিনুন’ শব্দ আমি আজই শুনলাম। আমরাতো ছুরিকে ‘মুদিয়াতুন’ বলতাম।
* হানাফীরা মুসলিমদের সঠিক দল বিধায় অহানাফীদের হানাফীদের সাথে বিবাদ মীমাংসায় আসা ফরজ।
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতি সঞ্চার করেছেন, ফলে তাঁর দয়ায় তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে।তোমরাতো অগ্নি কুন্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ উহা হতে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃতকরেন যাতে তোমরা সৎপথ পেতে পার।
# সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির
বেশ কয়েকটি হাদিসে এমন বর্ণিত রয়েছে- একতার সময় মানুষ ভুল ও অন্যায় থেকে রক্ষা পায়। আবার অনেক হাদিসে মতানৈক্য থেকে ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে, কিন্তু এতদ সত্ত্বেও উম্মতের মধ্যে মতপার্থক্য ও অনৈক্যের সৃষ্টি হয়ে গেছে এবং তাদের মধ্যে তেয়াত্তরটি দল হয়েগেছে, যাদের মধ্যে একটি দল মাত্র জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। এরা ঐসব লোক যারা এমন বস্তুর উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যার উপর স্বয়ং রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ (রা.) প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
* হানাফীরা মুসলিমদের সঠিক দল বিধায় তাদের সাথে একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরা ফরজ।
সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১১৫ এর অনুবাদ-
১১৫। কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্যপথ অনুসরন করে, তবে সে যে দিকে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর উহা কত মন্দ আবাস।
সূরাঃ ৬ আনআম, আয়াত নং ১৫৩ এর অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ১১ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-
১১। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবি করিমের (সা.) কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি প্রথমে একটি সরল রেখা টানলেন এবং তার ডান দিকে দুটো সরল রেখা টানলেন এবং বাঁ দিকেও দুটো সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি রেখার মধ্যবর্তী স্থানে হাত রেখে বললেন, এটা আল্লাহর রাস্তা। এরপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, ‘আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভ
0 Comments