Ad

আল কোরআনের ১১৪ সূরার ১০০০ আয়াত, তাফসিরে ইবনে কাছির, সিহাহ সিত্তাহ ও বিবিধ হাদিসে হানাফী মাযহাবের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ (পর্ব-১৯২)

 


সূরাঃ ৪ নিসা, ৩৫ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩৫। আর যদি তোমরা উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদের আশংকা কর তাহলে তার পক্ষ থেকে (স্বামী) একজন বিচারক এবং তার পক্ষ থেকে (স্ত্রী) একজন বিচারক নির্দিষ্ট কর। যদি তারা মীমাংসার আকাংঙ্খা করে তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে সম্প্রীতি সঞ্চার করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং সর্ব বিষয়ে খবর রাখেন।

# সূরাঃ ৪ নিসা, ৩৫ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির

৩৫। এরকমই একটি বিবাদে ওসমান (রা.), ইবনে আব্বাস (রা.) ও মুয়াবিয়াকে (রা.) সালিস নিযুক্ত করেন এবং তাঁদেরকে বলেন, তোমরা যদি তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে চাও তবে সংযোগ স্থাপিত হবে, আর যদি বিচ্ছেদ ঘটাতে ইচ্ছা কর তবে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।

* মুসলিমগণও যদি তাদের পরস্পরিক বিবাদে মীমাংসার আকাংঙ্খা করে তবে আল্লাহ তাদের মধ্যেও সম্প্রীতি সঞ্চার করবেন। এমন একটি মীমাংসা ছিল আহলে সুন্নাত ওযাল জামায়াতের চার মাযহাবের ইজমা, যে চার মাযহাব সঠিক, যে কেউ এর যে কোন একটি মাযহাব মানবে সে জান্নাত প্রাপ্ত হবে। আহলে হাদিস ও সালাফী এ মীমাংসা মানে না। তাদের কথা হলো কোন মাযহাব নয় মানতে হবে কোরআন ও হাদিস। তারা চার মাযহাবের অনুসারীদেরকেই জাহান্নামী বলে।তারমানে কোরআন ও হাদিস বুঝা নিযে চার মাযহাবের মাঝে যে ঝগড়া চলছিল তারা সে ঝগড়ার মীমাংসায় চিরস্থায়ী বাধা হয়ে দাঁড়াল।

আমার নিকট তাফসিরে ইবনে কাছিরের দু’টি অনুবাদ গ্রন্থ রয়েছে। দু’টি অনুবাদে যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। আমার নিকট পুরো কোরআনের আরো দু’টি অনুবাদ গ্রন্থ রয়েছ। কোন কোন ক্ষেত্রে চারটিতে চার রকম অনুবাদ দেখা যায়। আমি যখন চারটির সমম্বয় করি তখন পঞ্চম অনুবাদ তৈরী হয়, যার সাথে আগের চারটির গরমিল থাকে। আমি মনে করি আমি যে অনুবাদ করেছি এটাই সবচেযে বিশুদ্ধ, কিন্তু অন্য অনেকে আমার অনুবাদ সবচেয়ে বিশুদ্ধ মনে নাও করতে পারে।

কোরআনের মূল আরবী। আর সব বিভিন্ন ভাষার অনুবাদ।আরবীরাও সব এক দল নয়, কারণ তাদের মধ্যে কোরআন বুঝায় বিভিন্নতা রয়েছে। কোরআনে কোন ভুল না থাকলেও এর অনুবাদ ও কোরআন বুঝায় ভুল আছে। মস্ত বড় আলেম হয়েও এ ভুল থেকে নিষ্কৃতি মিলে না। সে জন্য মস্তবড় আলেমদের মাঝেও মতভেদ আছে। অজ্ঞ জনগণ বিভিন্ন আলেমের অনুসারী হয়ে ভিন্ন ভিন্ন বহু দলে বিভক্ত হয়ে বসে আছে। এ ক্ষেত্রেও আহলে হাদিস ও সালাফী মত হলো কোন আলেমের তাকলীদ বা অনুসরন হারাম।মানতে হবে কোরআন ও হাদিস। তারমানে এ দাঁড়ালো প্রতিটি মানুষ কোরআন ও হাদিসের মস্ত মোফাসসের ও মোহাদ্দেস হবে তারপর নিজেরমত করে কোরআন ও হাদিস মানবে। আমার এক দাদা বলছিলেন, ভাই আমগাছে উঠছিলাম, বেত কাঁটার জন্য নামতে পারছিলাম না। তো বাড়ী গিয়ে দাও এনে বেতকাঁটা কেটে তারপর গাছ থেকে নামলাম।আহলে হাদিসের সমাধান হলো এমন। কেউ এখন মুসলিম হলো এরপর কুড়ি বছর সে কোরআন ও হাদিসের জ্ঞানে দক্ষ হয়ে তারপর কি নামাজ পড়বে? এ কুড়ি বছরকি তবে সে কোন ইবাদত করবে না? এমন প্রশ্নে আহলে হাদিস বলে আলেম মানতে হলে মক্কা ও মদীনার আলেম মান। বেশ তো আছরের আযান হলো, এবার আমি অযুর নিয়ম জানতে প্রথমে মক্কা যাব তারপর মদীনা যাব। সেখান থেকে অযুর নিয়ম শিখে এসে তারপর আছরের নামাজ পড়ব? আছরের নামাজোর ওয়াক্ত থাকে কতক্ষণ্?

সূরাঃ ২ বাকারা, ২৮৬ নং আয়াতের অনুবাদ-

২৮৬। আল্লাহ কারোউপর এমন কোন কষ্ট দায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। হে আমাদের প্রতিপালক যদি আমরা ভুলে যাই অথবা আমাদের ত্রুটি হয় তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।হে আমাদের প্রতিপালক এভন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।আমাদের পাপ মোছন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে জয়যুক্ত কর।

* কোন ক্ষেত্রে অপারগতায় দায় মুক্তি কোরআন দিয়ে রেখেছে। আহলে হাদিস ও সালাফী কোরআন মানলেও এ দায়মুক্তি মানে না।

সূরাঃ ১৬ নাহল, ৪৩ ও ৪৪ নং আয়তের অনুবাদ

৪৩।তোমার পূর্বে আমরা পুরুষ ভিন্ন (বার্তা বাহক) প্রেরণ করিনি। আমরা তাদের প্রতি ওহি প্রেরণ করেছিলাম।অতএব আহলে যিকরকে জিজ্ঞাস কর, যদি তোমরা না জান।

* কোন কিছু না জানলে আল্লাহ আহলে যিকর (আলেম) থেকে জানতে বলেছেন। আহল বলতে ঐ জাতীয় সবাইকে বুঝায়। আহলে যিকরের মধ্যে মতভেদ হলে কি করবে?

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।

* আহলে যিকরের (আলেম) মধ্যে মতভেদ হলে তাদের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। তারা হানাফী। তারমানে সহজ সমাধান হলো সকল বিষয়ে হানাফী আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

সহিহ বোখারী ৬৯ নং হাদিসের (ইলম অধ্যায়) অনুবাদ-

৬৯। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। হযরত নবি করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সহজ পথ অবলম্বন কর, কঠিন করে তুলও না এবং সুখবর দাও। বিরক্তি-অস্বস্তি সৃষ্টি করও না।

* হাদীসে দ্বীন সহজ বলা হয়েছে। হানাফী মাযহাব পালনের জন্য খুব সহজ। সংগত কারণে শুধুমাত্র হানাফী মাযহাব দীন। হানাফী মাযহাব ছাড়া অন্য কিছু দীন নয়।

হানাফী মাযহাব সারা বিশ্বের জন্য সহজ। কারণ হানাফী মাযহাবের সহায়ক আলেম সমাজ রয়েছে বিশ্বের সকল ভৌগলিক এলাকায়। বাংলাদেশের একজন ভিখারীর পক্ষ্যে পাসপোর্ট ভিসা করে, উড়ো জাহাজে চড়ে মক্কা-মদীনায় গিয়ে সেখানকার আলেম থেকে ওজুর নিয়ম শিখে নামাজ পড়া সম্ভব নয়। যারা মক্কা-মদীনার আলেম মানতে বলে তারা আগে সারা বিশ্বের সকল মসজিদে ইমাম হিসেবে মক্কা-মদীনার আলেম নিয়োগ প্রদান করুক। তারপর লোকদেরকে মক্কা-মদীনার আলেম মানতে বলুক।

বাতাস ছাড়া জীবন বাঁচেনা সেজন্য বিশ্বের সকল স্থানে বাতাস আছে। সঠিক নিয়মে ইবাদত করে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলেও সঠিক নিয়মে ইবাদত করার সহায়ক আলেম সমাজ প্রয়োজন। সেজন্য সঠিক নিয়মে ইবাদত করার সহায়ক হানাফী আলেম বিশ্বের সকল স্থানে আছে। এর থেকে এটা পরিস্কার বাতাসের ব্যবস্থাপক যে আল্লাহ, হানাফী মাযহাবের ব্যবস্থাপকও সেই আল্লাহ। আর আল্লাহ যে হানাফী মাযহাবের ব্যবস্থাপক সেই হানাফী মাযহাব সঠিক না হওয়ার সংগত কোন কারণ নেই।

# হানাফী মাযহাব না কমে বেড়েই চলছে।

সহিহ আল বোখারী ৪৯ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-

৪৯। হযরত ওবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাকে আবু সুফিয়ান ইবনে হরবের বরাত দিয়ে বলেছে, বাদশা হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে বলেন, আমি জিজ্ঞাস করলাম, তারা সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি বললে, তারা বাড়ছে। ঈমানের বিষয়টি পূর্ণতা লাভের সময় পর্যন্ত এরূপই হয়ে থাকে। আমি আরও জিজ্ঞাস করলাম, কেউ কি তাঁর ধর্মে প্রবেরে পর তাঁর প্রতি বিরাগ হয়ে তা’ পরিত্যাগ করছে? তুমি বললে, না। ঈমানে দীপ্তি ও সজীবতা হৃদয়ের সাথে মিশে গেলে এরূপই হয়ে থাকে। তাঁর প্রতি কেউ অসন্তুষ্ট হয় না।

* মুসলিমদের মধ্যে শুধুমাত্র হানাফী সংখ্যায় বেড়ে এরমধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ক্রমাগত বেড়ে এখন মোট মুসলিমের প্রায় ৮০% হানাফী্। অহানাফীদের অনেক দল এর মধ্যে বিলুপ্ত হযেছে। আহলুল হাদিসের অনুসারীরা ১০০% থেকে কমে ১% এর কম হয়ে গেছে। এদলটি বিলুপ্তির পথে রয়েছ্। কিন্তু হানাফী কখনো না কমে সব সময় বেড়েই চলছে। সংগত কারণে সহিহ আল বোখারী ৪৯ নং হাদিস হানাফীদেরকে ১০০% সঠিক সাব্যস্ত করে।

সহিহ আল বোখারী ৫৯ নং হাদিসের (ইলম অধ্যায়) অনুবাদ-

৫৯।হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন একটি বৃক্ষ আছে যার পাতা ঝরে পড়ে না আর তা’ হলো মুসলমানদের দৃষ্টান্ত। তোমরা বলত, সেটা কি গাছ? সাহাবীরা বনের বৃক্ষরাজি নিয়ে ভাবনায় লিপ্ত হলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমার মনে হলো, ওটা খেজুর গাছ। কিন্তু আমি তা’ বলতে লজ্জা বোধ করলাম। সাহাবীরা বলেন, তা’ কি গাছ, আপনিই বলে দিন। তিনি বললেন, সেটা খেজুর গাছ।

* মুসলিমের দৃষ্টান্ত পাতা না ঝরা খেজুর গাছের মত। তো পাতা না ঝরা এ দৃষ্টান্ত হানাফী মাযহাবে বিদ্যমান। কারণ শুরু থেকে আজ অবধি তেরশ বছরের বেশী সময ধরে হানাফরিা মুসলিমদের মাঝে তাদের দুই তৃতীয়াংশের বেশী সংখ্যা গরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। সংগত কারণে সহিহ আর বোখারী ৫৯ নং হাদিস শুধুমাত্র হানাফীদেরকে সঠিক এবং অহানাফী সকল মুসলিম দলকে পথভ্রষ্ট সাব্যস্ত করে।

সূরাঃ ১১০ নাসর, ১ নং থেকে ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

১। যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে।

২। আর তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবে।

৩। তখন তুমি তোমার রবের হামদ এর তাসবিহ পাঠ করবে, আর তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই তিনি তো তওবা কবুলকারী।

* আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসার পর মহানবি (সা.) মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখেছেন।হানাফী মাযহাব গঠিত হওয়ার পর থেকে মহানবির (সা.) উম্মতগণ দেখছে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসার পর মানুষ দলে দলে হানাফী মাযহাবে প্রবেশ করছে। সংগত কারণে হানাফী মাযহাব গঠিত হওয়ার পর থেকে হানাফী মাযহাব আল্লাহর দীন সাব্যস্ত হয়।

সহিহ মুসলিম, ৬৩৩৯ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৬৩৩৯।হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। যদি দীন আসমানের দূরবর্তী সুরাইয়া নক্ষত্ররাজির কাছে থাকত, তবে পারস্যের যে কোন ব্যক্তি তা’ নিয়ে আসত; অথবা তিনি বলেছেন, কোন পারসিক সন্তান তা’ অর্জন করত।

সহিহ মুসলিম, ৬৩৪০ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৬৩৪০। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবি করিমের (সা.) নিকট বসা ছিলাম। তখন তাঁর উপর সূরা জুমুয়া অবতীর্ণ হল। যখন তিনি এ আয়াত পড়লেন, ‘ওয়া আখারিনা মিনহু লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম - আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি’ তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এরা কারা? নবি করিম (সা.) তার কোন জবাব দিলেন না। এমন কি সে একবার অথবা দু’ বার কিংবা তিনবার তাঁকে জিজ্ঞাস করল। রাবী বলেন, তখন আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রা.) ছিলেন। রাবী বলেন, নবি করিম (সা.) তাঁর হাত সালমানের (রা.) উপর রাখলেন, এরপর বললেন, যদি ঈমান সূরাইয়া তারকার কাছে থাকত তাহলে অবশ্যই তার গোত্রের লোকেরা সেখান পর্যন্ত পৌঁছত।

* দীন ও ঈমান যদি চলে যায় সুরাইয়া নক্ষত্রে তবে রাসূল (সা.) ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকি আর স্বস্থানে বসে থাকে? সংগত কারণে দীন ও ঈমানের সাথে রাসূল (সা.) ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত চলে গিয়ে ছিল সুরাইয়া নক্ষত্রে। এরপর যারা সুরাইয়া নক্ষত্র থেকে দীন ও ঈমান ফিরিয়ে আনলো রাসূল (সা.) ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত তাদের নিকটই পাওয়ার কথা। তাদের নিকট ছাড়া অন্য কোথাও রাসূল (সা.) ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত পাওয়ার কথা নয়।

হাদিস অনুযায়ী সুরাইয়া নক্ষত্র থেকে দীন ও ঈমান যারা ফিরিয়ে এনেছেন তাদের তালিকায় যোগ হওয়ার মত এযাৎ শুধু একটি নাম পাওয়া গেছে তিনি ইমাম আবু হানিফা (র.)। তিনি সুরাইয়া নক্ষত্রে হারান দীন ও ঈমান ফিরিয়ে এনে সবার পালনযোগ্য করে উপস্থাপনের জন্য তাঁর শিক্ষার্থী ইমাম আবু ইউসুফকে (র.) দায়িত্ব দিয়েছেন। আর ইমাম আবু ইউসুফ (র.) তা’ সংশোধনের ব্যাবস্থা করে তা’ সবার পালনযোগ্য করে উপস্থাপন করেছেন। ফলে সেই দীন ও ঈমানের অনুসারী হয়েছেন তখনকার মুসলিম বিশ্ব আমির আব্বাসীয় খলিফাগণ। কাজেই আমিরের অনুসরন ফরজ হিসেবে এখন হানাফী মাযহাবের অনুসারী হওয়া সব মুসলিমের জন্য ফরজ।

হাদিস ও হাদিসে থাকা আয়াত অনুযায়ী আব্বাসীয় আমিরদের আগের আমিরদের সময়কার দীন ও ঈমান হারিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাওয়া দীন ও ঈমান যারা ফিরিয়ে এনেছেন তাদের থেকে দীন ও ঈমান যারা গ্রহণ করেনি তারা পথভ্রষ্ট।

সহিহ মুসলিম, ১০২ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-

১০২। হযরত তামিমদারী (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি করিম (সা.) বলেছেন, কল্যাণ কামনাই দীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন, আল্লাহ, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের।

* আল্লাহর কল্যাণ কামনা তাঁর বান্দা বৃদ্ধি করা। কিতাবের কল্যাণ কামনা এর পাঠক বৃদ্ধি করা। রাসূলের (সা.) কল্যাণ কামনা তাঁর উম্মত বৃদ্ধিকরা। মুসলিম শাসকের কল্যাণ কামনা তাদের শাসন সুদৃঢ় করণে দায়িত্ব পালন করা। মুসলিম জনগণের কল্যাণ কামনা তাদের জন্য মুসলিম শাসনের ব্যবস্থা করা। কারণ অনেক অমুসলিম শাসনে মুসলিমদের কষ্টের শেষ থাকে না। দীনের এমন সকল বৈশিষ্টে শুধুমাত্র হানাফী মাযহাব দীন সাব্যস্ত হয়। কারণ হানাফী মোট মুসলিমের প্রায় ৮০%। সংগত কারণে এটা প্রমাণ হয যে তারাই আল্লাহর বান্দা, কোরআনের পাঠক ও নবির (সা.) উম্মত অধিক বৃদ্ধি করেছে। হানাফী মুসলিমদের মাঝে অধিক অঞ্চল শাসন করছে বিধায় এটা প্রমাণ হয় যে তারাই মুসলিম শাসকদের শাসন সুসংহত করায় অধিক কাজ করছে এবং মুসলিম জনগণকে তারা অধিক মুসলিম শাসন উপহার দিচ্ছে। সংগত কারণে উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় হানাফী ছাড়া মুসলিমদের অন্য কোন দল সঠিক নয়।

সহিহ মুসলিম, ২৭০ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-

২৭০। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইসলাম আগুন্তকের মত অপরিচিত অবস্থায় শুরু হয়েছিল। আবার আগুন্তকের মতই অপরিচিত অবস্থায় প্রত্যবর্তন করবে। এই গরিবদের জন্য মুবারকবাদ।

* নবির (সা.) দেশে এখন যারা আগন্তক তাদের মাঝে ইসলাম এখন আগন্তক অবস্থায় বিদ্যমান। নবির (সা.) দেশে যে সব আগন্তকের মাঝে ইসলাম আগন্তক অবস্থায় বিদ্যমান তারা হানাফী, তারা গরিব বিধায় নবির (সা.) দেশে কাজ করে খেতে এসছে। তাদের উদ্দেশ্যে মহানবি (সা.) বলেছেন, এই গরিবদের জন্য মুবারকবাদ।

সহিহ মুসলিম, ৪২৭ নং হাদিসের (পবিত্রতা অধ্যায়) অনুবাদ-

৪২৭। হযরত আবু মালেক আর-আশ’আরী (রা.)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ওজন দন্ডের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে এবং ‘সুবহানাল্লাহ ওযাল হামদুলিল্লাহ’ আসমান জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পূর্ণ করে দেবে। ‘সালাত বা নামাজ’ হলো একটি উজ্জল জ্যোতি। ‘সদকা’ হচ্ছে নিদর্শন। ‘সবর’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর ‘আল – কোরআন’ হচ্ছে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিলস্বরূপ। মূলত সকল মানুষ প্রত্যেক সকালে নিজেকে আমলের বিনিময়ে বিক্রি করে।তার আমল দ্বারা সে নিজেকে আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্ত করে অথবা তার ধ্বংস সাধন করে।

* আল কোরআনের দলিল দিয়ে হানাফী ছাড়া অন্য কোন মানব সম্প্রদায়কে সঠিক প্রমাণ করা যায় না।

সহিহ মুসলিম, ৪৮১৬ নং হাদিসের (কিতাবুল ইমারাহ) অনুবাদ-

৪৮১৬। হযরত সাওবান (রা.)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। এমনকি এভাবে আল্লাহর আদেশ অর্থাৎ কিয়ামত এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটি থাকবে।

* গঠিত হওয়ার হওয়ার পরে হানাফী যেমনটা দুই তৃতীয়াংশের বেশী সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিল তেরশ বছর পরেও তারা দুই তৃতীয়াংশের বেশী সংখ্যা গরিষ্ঠ অবস্থায় বিদ্যমান। কেউ তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে তাদের কোন ক্ষতি করতে পারছে না।

সহিহ আবু দাউদ, ৪২০৬ নং হাদিসের (ফিতনা-ফ্যাসাদ অধ্যায়) অনুবাদ-

৪২০৬। হযরত আবু মালেক আশয়ারী (র.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তিন ধরনের ফিতনা থেকে বাঁচিয়েছেন। যথাঃ ১। তোমাদের নবি তোমাদের জন্য বদদোয়া করবেন না, যাতে তোমরা এক সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে।২। বাতিলের অনুসারীরা কখনোই হকের অনুসারীদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। এবং ৩। তোমরা সবাই একসাথে পথভ্রষ্ট হবে না।

* হানাফীদের গঠিত হওয়ার পর থেকে তেরশ বছরের বেশী সময় ধরে অহানাফীরা হানাফীদের উপর জয়ী হতে পারেনি। সংগতকারণে সহিহ আবু দাউদ, ৪২০৬ নং হাদিস হানাফীদেরকে হক এবং অহানাফীদেরকে বাতিল সাব্যস্ত করে।

সহিহ আবু দাউদ, ৩৬০২ নং হাদিসের (জ্ঞান-বিজ্ঞান অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৬০২। কাছীর ইবনে কায়েস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি দামেশকের মসজিদে আবু দারদার (রা.) কাছে বসে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলে, হে আবু দারদা (রা.) আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) শহর মদীনা থেকে আপনার কাছে একটা হাদিস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি আপনি উক্ত হাদিসটি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। এছাড়া আর কোন কারণে আমি এখানে আসিনি। তখন আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোন পথ অতিক্রম করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথ অতিক্রম করান। আর ফেরেশতারা ত্বলেবে এলেম বা জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেন এবং আলেমের জন্য আসমান ও জমিনের সব কিছুই ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানিতে বসবাসকারী মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আবেদের উপর আলেমের ফজিলত এরূপ যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদের ফজিলত সকল তারকা রাজির উপর। আর আলেমগণ হলেন নবিদের ওয়ারিছ এবং নবিগণ দীনার ও দিরহাম মীরাছ হিসেবে রেখে যান না; বরং তাঁরা রেখে যান ইলম।কাজেই যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করল সে প্রচুর সম্পদের মালিক হলো।

* আলেমগণ হলেন নবিগণের সরাসরি ওয়ারিশ। কারণ নবিগণ না থাকা অবস্থায় আলেমগণ সরাসরি নবিগণের দায়িত্ব পালন করছেন। নবিগণের সরাসরি ওয়ারিশের বেশীরভাগ হেদায়াত প্রাপ্ত ছিলেন।নবিগণের সরাসরি ওয়ারিশের অল্প কিছু সংখ্যক পথভ্রষ্ট ছিলেন। সংগত কারণে আলেমদের বেশীরভাগ হানাফী আলেম হেদায়াত প্রাপ্ত এবং কম সংখ্যক অহানাফী আলেম পথভ্রষ্ট।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।

* যেহেতু মতভেদ হলে মহানবি (সা.)উম্মতের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে বলেছেন সেহেতু তাঁর উম্মতের সর্ববৃহৎ দল পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না, এ বিষযে স্বয়ং মহানবি (সা.) নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। সংগত কারণে মহানবির (সা.) উম্মতের সর্ববৃহৎ দল হানাফী দল হিসাবে ১০০% হেদায়াত প্রাপ্ত দল সাব্যস্ত হয।তবে ব্যক্তিগতভাবে যে ইবাদতে অমনোযোগী তার সে দায় তার ব্যক্তিগত।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৩০ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

২৩০। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার থেকে একটি হাদিস শুনে অতঃপর তা’ অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয় আল্লাহ তাকে হাস্যোজ্জল ও আনন্দময় করে দেবেন। কেননা এমন কতক ফিকাহ বাহক রয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে ফকীহ নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী অধিকতর জ্ঞানী হয়ে থাকে।

* মহানবি (সা.) প্রদত্ত সূত্র মতে, ‘ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী অধিকতর জ্ঞানী হয়ে থাকে’ এমন শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাসে শুধুই একজন। তিনি ইমাম আবু ইউসুফ (র.)। কারণ তাঁর খেলাফতের প্রধান বিচারপতির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা উভয় ছিল। কিন্তু তাঁর ফিকাহ শিক্ষাদানকারী ইমাম আবু হানিফার (র.) খেলাফতের প্রধান বিচার পতির যোগ্যতা থাকলেও তাঁর এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি খেলাফতের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ পেলেও তিনি সে পদে বিচারক হিসেবে যোগদান করেননি। অন্য যাদেরকে লোকেরা ফকিহ বলে তাদের কোন শিক্ষার্থীর প্রধান বিচারপতি পদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা কিছুই ছিল না। কথায় বলে গাছ তোর কি নাম ফলে পরিচয়। কোন গাছে আম ফল ধরতে দেখলে সে গাছকে অবশ্যই আমগাছ বলা যায়। সংগত কারণে ইমাম আবু হানিফার (র.) চেয়ে তাঁর শিক্ষার্থীর অধিকতর জ্ঞান দেখে তাঁকে অবশ্যই ফিকাহ শিক্ষাদানকারী তথা ফকিহ সাব্যস্ত করা যায়। তো অন্য লোকদেরকে লোকেরা ফকিহ বলে কিসের ভিত্তিতে? তাদের কোন শিক্ষার্থী তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী হয়েছিল কি? সংগত কারণে ইসলামের একমাত্র ফকিহ ইমাম আবু হানিফা (র.) বিধায় শুধুমাত্র তাঁর অনুসারীরা রয়েছে ইসলামের সঠিক পথে।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৭৭৬ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অনুবাদ-

২৭৭৬। আনাস ইবনে মালেকের (রা.) খালা এবং মহানবির (সা.) দুধ খালা উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! কে আপনাকে হাসালো? তিনি বললেন, আমার উম্মতের কতক লোককে আমার নিকট এমন অবস্থায় পেশ করা হয়েছে যে, তারা এই সমূদ্রের উপর সওয়ার হয়েছে, যেমনভাবে বাদশাহ সিংহাসনে আরোহন করে। উম্মু হারাম বললেন, তিনি তাঁরজন্য দোয়া করলেন। এরপর পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর প্রথম বারের ন্যায় জাগ্রত হলেন। তারপর উম্মু হারাম (রা.) অনুরূপ বললেন, রাসূলও (সা.) প্রথমবারের অনুরূপ জবাব দিলেন। উম্মু হারাম (রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। আনাস (রা.) বলেন, অতঃপর তিনি তাঁর স্বামী উবাদা ইবনে সামিতের (রা.) সাথে বের হলেন জিহাদ করার জন্য, যখন মুসলিমগণ মু’আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের সাথে সর্ব প্রথম নৌযুদ্ধে রওয়ানা করে। অতঃপর তারা জিহাদ থেকে ফিরে এসে সিরিয়ায় অবতরণ করলেন তখন সওয়ার হওয়ার জন্য তাঁর কাছে একটা জন্তুযান আনা হলো। জন্তুযানটি তাকে ফেলে দিল। এতেই তিনি ইন্তিকাল করলেন।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৭৭৮ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অনুবাদ-

২৭৭৮। হযরত আবু উমামা (রা.)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি যে, নৌ-পথের যুদ্ধের একজন শহীদ স্থলপথে দুইজন শহীদের সমান, আর নৌ যুদ্ধে যার মাথা ঘুরবে সে সেই ব্যক্তির মত স্থলপথে যে নিহত হয়। আর দুই ঢেউয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব অতিক্রমকারী আল্লাহর আনুগত্যে পৃথিবী সফরকারীর সমান। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে সকলের জান কবয করার দায়িত্ব প্রদান করেছেন, নৌ যুদ্ধের শহীদের জান ব্যতীত। কেননা আল্লাহ নিজেই তাদের রুহ নিয়ে নেন। স্থলপথের শহীদের সকল গুনাহ তিনি ক্ষমা করে দেন ঋণ ব্যতীত, আর নৌ যুদ্ধের শহীদের সকল গুনাহ এবং ঋণও তিনি ক্ষমা করে দেন।

* নৌ-যুদ্ধে শত শত বছর সমূদ্রে রাজত্ব করেছে অটোমান হানাফীরা। সংগত কারণে তারা আল্লাহর বিশেষ বান্দা হিসেবে সাব্যস্ত।

সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১৭৭ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অুনবাদ-

৩১৭৭। হযরত আবু হুরায়রা (রা.)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে হিন্দুস্থানের যুদ্ধের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি তা’ পেলে তাতে আমার জান মাল উৎসর্গ করব। আর আমি যদি নিহত হই তবে মর্যাদাবান শহীদ বলে গণ্য হব, আর যদি প্রত্যাবর্তন করি, তাহলে আমি আবু হুরায়রা হব আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত।

সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১৭৮ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অুনবাদ-

৩১৭৮। হযরত রাসূলুল্লাহর (সা.)গোলাম সাওবান (রা.)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন আমার উম্মতের দু’টি দল, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জাহান্নাম হতে নাজাত দান করেছেন, একদল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদ করবে আর একদল যারা ঈসা ইবনে মরিয়মের সাথে থাকবে।

* তরাইনের দ্বিতীয় ও পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ হয়েছে আফগান হানাফী ও ভারতীয় হিন্দুদের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধ। যা হানাফীদেরকে মহানবির (সা.) উম্মত সাবৗ্যস্ত করে। ভারতে সামনে হিন্দুদের সাথে যুদ্ধ হলেও তাও হানাফীদের সাথেই হবে। সংগত কারণে সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১৭৭ নং হাদিস ও সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১৭৮ নং হাদিস দ্বারা অহানাফী কোন দলকে সঠিক সাব্যস্ত করার কোন সুযোগ নেই।

সহিহ তিরমিযী, ১৯৮ নং হাদিসের (নামাজ অধ্যায়) অনুবাদ-

১৯৮। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইমাম হচ্ছে যামিন এবং মোয়াজ্জিন হলো আমানতদার। হে আল্লাহ! ইমামকে সৎপথ দেখাও এবং মুয়াযযিনকে ক্ষমা কর।

* মহানবি (সা.) আল্লাহর দরবারে ইমামদের সৎপথ প্রাপ্তির দোয়া করেছেন। তাঁর দোয়া অনুযায়ী বেশী সংখ্যক ইমাম সৎপথ পাবেন। কারণ ইমামগণ আলেম। আর আলেমগণ নবিগণের (আ.) সরাসরি ওয়ারিশ। আর নবিগণের বেশী সংখ্যক সরাসরি ওয়ারিশ সৎপথ প্রাপ্ত; যেমন আদমের (আ.) একজন সরাসরি ওয়ারিশ ছাড়া আর সবাই সৎপথ প্রাপ্ত, নূহের (আ.) দুজন সরাসরি ওয়ারিশ ছাড়া আর সবাই সৎপথ প্রাপ্ত, লুতের (আ.)একজন সরাসরি ওয়ারিশ ছাড়া আর সবাই সৎপথ প্রাপ্ত।এভাবে সকল নবির পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তাঁদের সরাসরি ওয়ারিশদের বেশী সংখ্যক সৎপথ প্রাপ্ত এবং কমসংখ্যক সরাসরি ওয়ারিশ সৎপথ প্রাপ্ত নয়।সংগত কারণে ইমামগণের বেশী সংখ্যক হানাফী সৎপথ প্রাপ্ত এবং তাদের বিরোধী কম সংখ্যক ইমাম সৎপথ প্রাপ্ত নয় বা তারা পথভ্রষ্ট।সংগত কারণে সহিহ তিরমিযী, ১৯৮ নং হাদিস হানাফীদেরকে ১০০% সঠিক এবং অহানাফীদেরকে পথভ্রষ্ট প্রমাণ করে।

এ ক্ষেত্রে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো তিন মাযহাবের অবস্থা তবে কি? তাদের অবস্থা হলো যে সব বিষয়ে তারা হানাফীদের সাথে একমত সে সব বিষয়ে তারা পথপ্রাপ্ত এবং যে সব বিষয়ে তারা হানাফীদের সাথে মতভেদ করে সে সব বিষয়ে তারা পথভ্রষ্ট। তো তারা যতটা পথপ্রাপ্ত তাতে তাদের ইমামতিতে নামাজ পড়া যায়। মরার পর তারা কোথায় যাবে এটাও একটা প্রশ্ন। তো তাদের ভুলের চেয়ে শুদ্ধটা অধিক বলে অনুমিত হিসেবে আল্লাহ ক্ষমা করলে তাদের জান্নাত প্রাপ্তি অসম্ভব নয় বলেই মনে হয়। কিন্তু হানাফীদের সাথে মতভেদ করে ফিতনা সৃষ্টির দায়ে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নাম দিলেও কিছু করার থাকবে না।

সহিহ তিরমিযী, ২১১৩ নং হাদিসের(কলহ ও বিপর্যয় অধ্যায়) অনুবাদ-

২১১৩। হযরত ইবনে ওমর(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ আমার উম্মতকে অথবা মোহাম্মাদের (সা.)উম্মতকে কখনো গোমরাহীর উপর একত্র করবেন না। আর জামায়াতের উপর আল্লাহর হাত বিস্তৃত। যে ব্যক্তি মুসলিম সমাজ থেকে পৃথক হয়ে গেছে সে পৃথকভাবেই জাহান্নামে যাবে।

সহিহ তিরমিযী, ২৬১৭ নং হাদিসের (ইলম সম্পর্কে অধ্যায়) অনুবাদ-

২৬১৭। হযরত আবু হোরায়রা (রা.)থেকে বর্ণিত। নবি করিম (সা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, শিঘ্রই মানুষ উটে চড়ে ইলম তালাশের উদ্ধেশ্যে দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে।কিন্তু তারা মদীনার আলেমদের চেয়ে বিজ্ঞ আলেম আর কোথাও খুঁজে পাবে না।

* হযরত আলী (রা.) মদীনা থেকে চার হাজার সাহাবা ও তাবেঈ আলেম কুফায় নিয়ে এসেছেন। তাদের মাযহাব হানাফী মাযহাব।

সহিহ তিরমিযী, ২৬১৮ নং হাদিসের (ইলম সম্পর্কে অধ্যায়) অনুবাদ-

২৬১৮। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একজন ফকীহ শয়তানের মোকাবেলায় হাজার আবেদ অপেক্ষা বিপজ্জনক।

* এক হাজার আব্দুল কাদের জিলানী (র.) থেকে একজন আবু হানিফা (র.) শয়তানের মোকাবেলায় অধিক বিপজ্জনক।সংগত কারণে আব্দুল কাদের জিলানী (র.) হানাফী মাযহাবের সমালোচনা করে থাকলে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

সহিহ তিরমিযী, ৩৬৫৭ নং হাদিসের [ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৩৬৫৭। হযরত হুবশী ইবনে জুনাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,আলী আমার থেকে এবং আমি আলীর থেকে। আমার কোন কাজ হয় আমি নিজেই সম্পন্ন করি অথবা আমার পক্ষ থেকে তা’ আলীই সম্পন্ন করে।

* মহানবির (সা.) পক্ষ খেকে হযরত আলী (রা.) কুফায় ইসলাম নিয়ে এসেছেন। সেই ইসলামই এখন হানাফী মাযহাব।

সহিহ তিরমিযী, ৩৬৬১ নং হাদিসের [ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৩৬৬১। হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি প্রজ্ঞার ঘর এবং আলী তার দরজা।

* মহানবির (সা.) প্রজ্ঞা আলী (রা.) নামক দরজা দিয়ে কুফায় প্রকাশ পেয়েছে। সেই প্রজ্ঞায় গঠিত হয়েছে হানাফী মাযহাব।

সহিহ তিরমিযী, ৩৬৬৪ নং হাদিসের [ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৩৬৬৪।হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন. তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আলীকে (রা.) কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে কথাবার্তা বললেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি তার সাথে চুপিসারে কথাবলিনি, বরং আল্লাহ তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন।

* আল্লাহ চুপিসারে হযরত আলীকে (রা.) কুফায় ইসলাম নিয়ে আসতে বলেছেন। নতুবা তিনি ছাড়া অন্য কেউ কুফায় ইসলাম কেন আনেননি? তারা আনেননি, কারন তাদেরকে আল্লাহ তেমন কথা বলেননি। আর সেই ইসলা্মই হানাফী ইসলাম।

সহিহ তিরমিযী, ৩৬৬৮ নং হাদিসের [ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৩৬৬৮। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন. নবি করিম (সা.) আলীকে (রা.) বলেন, তুমি আমার নিকট মর্যাদায় মুসা(আ.) এর জন্য হারূনের (আ.) মত। তবে আমার পরে কোন নবি নাই।

* মহানবির পর নবি থাকলে একজন নবি হিসেবেই হযরত আলী (রা.) কুফায় ইসলাম প্রচার করতেন। সংগত কারণে কুফার হানাফী ইসলাম নবির মত একজনের প্রচারিত ইসলাম সাব্যস্ত হয়।

Post a Comment

0 Comments