আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সম্মানিত বন্ধু, আজ দাড়ি নিয়ে অত্যন্ত চমৎকার একটি লেখা আপনাদের উপহার দিব। আমার মতে এ বিষয়ে এটি একটি অনন্য প্রব্ন্ধ। লিখেছেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও দাঈ শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী। অনুগ্রহ পূর্বক প্রবন্ধটি পুরোটুকু পড়ুন। দুয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে দ্বীনের কথা জানা ও মানার তাওফীক দান করেন। অতএব, কথা না বাড়িয়ে চলুন বিষয়টি পড়ার চেষ্টা করি।
দাড়ি আল্লাহর একটি মহান ও বড় নেয়ামত। দাড়ি দ্বারা তিনি পুরুষকে অনুগৃহীত করেছেন এবং নারী জাতি থেকে তাকে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত করেছেন।
দাড়ি শুধুমাত্র মুখমণ্ডলের উপর কয়েকটি কেশ গুচ্ছই নয়; বরং ইহা ইসলামের বাহ্যিক বড় একটি নিদর্শন। দাড়ি ছেড়ে রেখে এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ্ বলেন:
ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
“এই কারণে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই পরিচয়।” (সূরা হজ্জ- ৩২)
দাড়ি মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসৃত নীতির একটি অন্যতম পরিচয়। তিনি দাড়ি ছেড়ে দিতে ও লম্বা করতে আদেশ করেছেন।
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, দাড়ির প্রতি এত গুরুত্ব ও তার প্রতি সম্মানের নির্দেশ থাকা স্বত্বেও অধিকাংশ মুসলমান বিষয়টিকে অতি নগণ্য ও তুচ্ছ মনে করে। যেন ঘৃণা ভরে প্রতিদিন তা ছেঁচে ফেলতে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারা মুণ্ডন করে না তারা আরেক স্টাইলে তার সাথে খেলা-ধুলা করে। কেউ শুধুমাত্র থুতনির উপর ছোট ছোট করে রাখে আবার কেউ খুবই হালকা করে কাল একটি রেখার মত করে রাখে। কেউ আবার দাড়িকে গোঁফের সাথে মিলিয়ে দিয়ে গোলাকৃতি করে রাখে।
এই চিত্রগুলো দেখলে একদিকে যেমন দুঃখ লাগে অন্য দিকে তা যেন হাস্যেরও পাত্র। যে মুসলমানকে দাড়ি ছেড়ে দিতে আদেশ করা হয়েছে, দাড়িকে সম্মান করতে বলা হয়েছে সেই মুসলমান তো দূরের কথা কোন বিবেকবানের পক্ষেও এরকম আচরণ করা শোভনীয় নয়। বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা যে আকৃতিতে দাড়িকে সৃষ্টি করেছেন সে অবস্থাতেই তা নিজ মুখমণ্ডলে অবশিষ্ট রেখে ইসলামী শিষ্টাচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী এরকম সভ্য মানুষের সংখ্যা আজ খুবই বিরল। (লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্)
মনীষীদের নিকট দাড়ির মূল্য ও সম্মান:
আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সমস্ত নবী ও রাসূলের বৈশিষ্ট্য ছিল দাড়ি রাখা। অনুরূপভাবে ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহেদীন সকলেই দাড়ি রেখেছেন। এমন কোন বর্ণনা বা ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, তাঁদের মধ্যে কেউ দাড়ি কেটেছেন বা মুণ্ডন করেছেন; বরং কারো দাড়ি না গজালে তার জন্য তাঁরা আফসোস করেছেন। সাহাবী ক্বায়স বিন সা’দ (রা:) দাড়ি বিহীন লোক ছিলেন। তাঁর সম্প্রদায় আনসাররা বললেন, হায় দাড়ি যদি বাজারে কিনে পাওয়া যেত তবে আমরা তাঁর জন্য দাড়ি কিনে নিতাম।”
প্রখ্যাত তাবেঈ আহনাফ বিন কায়স একজন বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী লোক ছিলেন। তিনি সৃষ্টিগত দিক থেকে খোঁড়া ও এক চোখ অন্ধ ছিলেন। তাঁর দাড়িও উঠে নি। অথচ তিনি ছিলেন নিজ গোত্রের নেতা। লোকরা বলল, “বিশ হাজার দীনার খরচ করেও যদি যদি দাড়ি কিনে পাওয়া যেত তবে আমরা তাঁর জন্য তা খরিদ করতাম।” কি আশ্চর্য! লোকেরা তাঁর পা বা চোখের ত্রুটিকে ত্রুটি মনে করল না। কিন্তু তারা দাড়ি না থাকাটাকে অপছন্দ করল। কেননা তাঁরা দাড়িকে মনে করতেন পৌরুষত্বের পরিচয়, মুসলিমের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের পূর্ণতার প্রতীক। তাঁরা দাড়ি বাঁচাতে গিয়ে এবং তার সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে নিজের গর্দান দিয়ে দেয়াকে সহজ মনে করতেন।
কিন্তু আফসোস! মুসলমানদের অবস্থা দেখে তারা দাড়ির প্রতি এতই রুষ্ট যে, অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে হলেও তার বিরুদ্ধে যেন অঘোষিত লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। হাজার টাকা খরচ করেও যদি এমন হত যে আর কখনো মুখে দাড়ি গজাবে না, তারা সে পথেই অগ্রসর হতো। (নাঊযুবিল্লাহ্)
দাড়ি মুণ্ডন হারাম হওয়ার দলীল:
আল্লাহ বলেন,
وَلَآَمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ
“(শয়তান বলে) আমি অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, তারা তখন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দিবে।” (সূরা নিসাঃ ১১৯)
দাড়ি মুণ্ডন করা বা কর্তন করা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার শামিল। আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দশটি জিনিস স্বভাবজাত। তম্মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেন: গোঁফ কর্তন করা ও দাড়ি ছেড়ে দেয়া।” (মুসলিম) অতএব গোঁফ লম্বা করা আর দাড়ি কেটে ফেলা সুস্থ স্বভাব বিরোধী কাজ।
ইবনে ওমার (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ
“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি ছেড়ে দাও এবং গোঁফ ছোট কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ
“গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর আর এর মাধ্যমে অগ্নি পূজকদের বিরোধিতা কর।” (মুসলিম)
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যাবতীয় বিষয়ে মু*শরিক-হিন্দু, ই*হুদী-খৃ*ষ্টান ও অগ্নি পূজকদের বিরোধিতা করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব। এ জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যারা কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ, আহমাদ হাদীছ সহীহ)
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন,
مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا
“যে ব্যক্তি গোঁফ কাটে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (তিরমিযী, নাসাঈ, হাদীছ সহীহ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ ওয়াজিব বা আবশ্যকতার দাবী রাখে।
অন্য দিকে দাড়ি মুণ্ডন করার মাধ্যমে নিজেকে নারীদের কাতারে শামিল করা হয়। কেননা নারীরা দাড়ি বিহীন। কোন নারী যদি পুরুষের আকৃতি ধারণ করে এবং কোন পুরুষ যদি নারীর আকৃতি ধারণ করে তবে তারা লা’নত প্রাপ্ত। ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষকে এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারীনী নারীকে অভিশাপ করেছেন।” (ছহীহ আবু দাউদ, তিরমিযী)
দাড়ি রাখা ওয়াজিব না সুন্নত?
এ নিয়ে মানুষ মতবিরোধ করলেও দাড়ি রাখা যে ওয়াজিব সেটাই প্রণিধানযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ি রেখেছেন বলেই ইহা নবীজীর সুন্নত বলে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা নবীজী দাড়ি নিজে রেখেছেন এবং তা রাখার জন্যে নির্দেশও দিয়েছেন। আর আল্লাহ্ তা’আলা যেমন ফরয করেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তেমনি ফরয বা ওয়াজিব করেন। তার কারণ হচ্ছে নবীজী কখনো নিজের কল্পনা প্রসূত কোন কথা বলতেন না। আল্লাহ্ তাঁর নিকট যা ওহী করতেন তিনি তাই বলতেন। (সূরা নজমঃ ৩,৪) তাছাড়া নবীজী দাড়ির বিষয়ে যে সকল আদেশ সূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার বিপরীতে এমন কোন হাদীছ খুঁজে পাওয়া যাবে না যা দ্বারা দাড়িকে সুন্নত বা মুস্তাহাব সাব্যস্ত করা যাবে।
তিরমিযীতে একটি হাদীছে বলা হয়েছে: كان يأخذ من لحيته من عرضها وطولها নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৈর্ঘ্য ও প্রস্ত দিক থেকে তাঁর দাড়ি কাটতেন।” এ হাদীছটি মওযু বা জাল যার কোন ভিত্তি নেই। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর নিজেই একথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। (দ্রঃ ছহীহ তিরমিযীঃ হা/২৭৬২)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম।
ইমাম কুরতুবী (র:) বলেন, দাড়ি মুণ্ডন, উঠানো বা কর্তন করা কোনটাই জায়েজ নয়।
শায়খ বিন বায (র:) বলেন, দাড়িকে সংরক্ষণ করা, পরিপূর্ণ রাখা ও তা ছেড়ে দেয়া ফরয। এই ফরযের প্রতি অবহেলা করা জায়েজ নয়।
শাইখ ইবনে উসাইমীন (র:) বলেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব, উহা মুণ্ডন করা হারাম বা কাবীরা গুনাহ।
প্রসিদ্ধ চার মাজহাবের ফিকাহ বিদগণও দাড়ি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।
হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দুররে মুখতারে (২য় খণ্ড/৪৫৯ পৃঃ) বলা হয়েছে: পুরুষের জন্য দাড়ি কর্তন করা হারাম।
নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ি এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ি সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হি*ন্দুস্থানের ই*হুদী ও কা*ফের-মু*শরেকদের কাজ।”
মালিকী মাজহাব মতে দাড়ি কাটা হারাম। (আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী ৮ম খণ্ড ৮৯ পৃঃ)
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ি কর্তন করা হারাম।
শাফেঈ মাজহাবের আলেম আযরাঈ বলেন: সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। (হাওয়াশী শারওয়ানী ৯ম খণ্ড ৩৭৬ পৃঃ)
হাম্বলী মাজহাবের বিদ্বানগণও দাড়ি মুণ্ডনকে হারাম বলেছেন। (ইনসাফ, শরহে মুন্তাহা)
অতএব দাড়ি মুণ্ডন করা বড় পাপ। এ থেকে তওবা করা আবশ্যক। অবশ্য দাড়ি মুণ্ডন করা ও কেটে ছোট করার পাপ এক সমান নয়। যদিও উভয়টিই পাপের কাজ।
দাড়ি মুণ্ডণ করা কবীরা গুনাহ: অনেক মানুষ দাড়ি মুণ্ডন করাটাকে খুবই ছোট ও তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু ইহা মুণ্ডন করা কোন সময় সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কেননা এটা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম। আর প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে তওবা না করলে হতে পারে দাড়ি মুন্ডনকারী আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلا الْمُجَاهِرِينَ
“আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
দাড়ি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণ: কোন মানুষ যদি দাড়িকে অপছন্দ করে বা তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে অথবা দাড়িওয়ালা মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তবে সম্ভাবনা আছে একারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কুফরীতে লিপ্ত হবে এবং মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা নবী (ছা:) যা নিয়ে এসেছেন তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা বা ব্যঙ্গ করা বা তা ঘৃণা ও অপছন্দ করা ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। আল্লাহ্ বলেন
, ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ
“এই কারণে যে, তারা এমন বস্তুর অনুসরণ করেছে যার প্রতি আল্লাহ্ রাগান্বিত। আর তারা তাঁর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করেছে। ফলে তিনি তাদের আমলগুলো বরবাদ করে দিয়েছেন।” (সূরা মুহাম্মাদঃ ২৮)
সাবধান মুসলমান! নিজের আমল বরবাদ করবেন না বা অজ্ঞতা বশত: ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না।
প্রিয় ভাই! সালাত সিয়াম ও অন্যান্য ওয়াজিব বিষয়ে আপনি যেমন আপনার পালনকর্তার আনুগত্য করেছেন। কেন এই বিষয়টিতে তাঁর নাফরমানী করছেন? উভয় বিষয়ের আদেশকারী রব কি একজনই নয়? কোথায় আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন? কোথায় ঈমানের বলিষ্ঠতা ও সত্যতা? শরীয়তের বিধান নিয়ে কেন এই ছিনিমিনি খেলা?
পুরুষের সৌন্দর্য দাড়ি; মুণ্ডনতে নয়। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে নারী জাতী থেকে আলাদা ও বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত করেছেন। পৌরুষত্বের পরিচয় দাড়ি প্রদান করে তার সৌন্দর্যকে প্রস্ফুটিত করেছেন। কিভাবে মানুষ তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে পরিবর্তন করে নিজেকে নারী জাতীর সাথে সাদৃশ্য করতে চায়? ইসলামের শত্রুদের সাথে নিজেকে মিলিত করতে চায়? আর ধারণা করে যে, এতেই রয়েছে অতিরিক্ত সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব!? দাড়ি মুণ্ডন না করলে বা না কাটলে যেন পুরুষের সৌন্দর্যই ফুটে উঠে না। পুরুষকে দাড়ি দিয়ে যেন আল্লাহ ভুল করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) তাই সেই ভুল শোধরাতে তারা যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
আল্লাহ্ বলেন:
أأنْتُم أعْلَمُ أمِ اللهُ
“তোমরাই কি বেশী জ্ঞান রাখ না আল্লাহ্ অধিক জ্ঞান রাখেন?” (সূরা বাকারাঃ ১৪০)
দাড়ি বিহীন পুরুষ যদি অধিক সুন্দর হত তবে তা করতে আল্লাহ্ অপারগ ছিলেন না। কিন্তু তিনি এর মাধ্যমে পুরুষকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করতে চেয়েছেন। পার্থক্য করেছেন নারীদের থেকে।
সম্মানিত ভাই! আপনার এই কাজে দুনিয়াবী কোন উপকার আছে কি? পাবেন কি আখেরাতে কোন ছওয়াব-নেকী? কেন আপনি নিজেকে আল্লাহর ক্রোধের সম্মুখীন করছেন? কেন আপনি প্রতিদিন একটি অযথা পরিশ্রমে নিজেকে ক্লান্ত করছেন? কেন সময় ও অর্থের অপচয় করছেন?
হে আল্লাহ্ তুমি আমাদের সবাইকে তোমার সন্তুষ্টি মূলক কাজ করার তাওফীক দাও এবং যে কাজে তোমার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ রয়েছে তা থেকে আমাদেরকে বিরত রাখ। আমীন॥
লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল
সম্পাদক: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,
সৌদি আরব।☘
0 Comments