আল্লাহ তাআ’লার বড়ত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে একটি আয়াত ও তাফসীর
উৎস গ্রন্থঃ কিতাবুত তাওহীদ
৬৭-তম অধ্যায়ঃ মানুষ আল্লাহ তাআ’লার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা নিরুপণে অক্ষম।
লেখকঃ শায়খুল ইসলাম মুহা’ম্মাদ বিন আব্দুল ওহহাব রহি’মাহুল্লাহ।
(১) আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেছেন,
অর্থঃ তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা নিরুপণ করতে পারেনি। কেয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে। সুরা যুমারঃ আয়াত ৬৭।
(২) আ’ব্দুল্লাহ ইবনে মাসউ’দ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন আলেম আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললো, “হে মুহা’ম্মদ! আমরা (তাওরাত কিতাবে) দেখতে পাই যে, আল্লাহ তাআ’লা সমস্ত আকাশ মন্ডলীকে এক আঙ্গুলে, সমস্ত যমীনকে এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজিকে এক আঙ্গুলে, পানি এক আঙ্গুলে ভূতলের সমস্ত জিনিসকে এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে এক আঙ্গুলে রেখে বলবেন, “আমিই সম্রাট।”
এ কথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদী আলেমের কথার সমর্থনে এমনভাবে হেসে দিলেন যে, তাঁর দাঁত মোবারক দেখা যাচ্ছিল। অতপর তিনি উপরের এই আয়াতটুকু পড়লেন। “তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা নিরুপণ করতে পারেনি। কেয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে।” সুরা যুমারঃ ৬৭।
সহীহ মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত আছে, পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি আল্লাহর এক হাতে থাকবে, তারপর আল্লাহ এগুলোকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলবেন, “আমি রাজাধিরাজ, আমিই আল্লাহ।”
সহীহ বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, “সমস্ত আকাশ মন্ডলীকে আল্লাহ এক আঙ্গুলে রাখবেন। পানি এবং ভূতলে যা কিছু আছে তা এক আঙ্গুলে রাখবেন। আরেক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত সৃষ্টি।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
আ’ব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা থেকে বর্ণিত মারফু হাদীসে আছে, “কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা সমস্ত আকাশমন্ডলীকে ভাঁজ করবেন। অতঃপর সাত তবক যমীনকে ভাঁজ করবেন এবং এগুলোকে বাম হাতে নিবেন। তারপর বলবেন, “আমি হচ্ছি রাজাধিরাজ। আজ অত্যাচারীরা কোথায়? আজ অংহকারীরা কোথায়?” সহীহ মুসলিম।
(৩) আ’ব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “সাত তবক আসমান ও যমীন আল্লাহ তাআ’লার হাতের তালুতে ঠিক যেন তোমাদের কারো হাতে এটা সরিষার দানার মত ছোট্ট।”
(৪) ইবনে যায়েদ বলেন, “আমার পিতা আমাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কুরসীর মধ্যে সপ্তাকাশের অবস্থান ঠিক যেন, একটি ঢালের মধ্যে নিক্ষিপ্ত সাতটি দিরহামের (মুদ্রার) মত।” তিনি বলেন, আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেছেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি, “আরশের মধ্যে কুরসীর অবস্থান হচ্ছে ঠিক ভূপৃষ্ঠের কোন উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকা একটি আংটির মত।”
(৫) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “দুনিয়ার আকাশ এবং এর পরবর্তী আকাশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ। আর এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের। এমনিভাবে সপ্তম আকাশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। একইভাবে কুরসী এবং পানির মাঝখানে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের। আরশ হচ্ছে পানির উপরে। আর আল্লাহ তাআ’লা আরশের উপরে রয়েছেন। কিন্তু (এতো দূরে থাকলেও) তোমাদের আমলের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নেই।”
(৬) আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমরা কি জানো, আসমান ও যমীনের মধ্যে দূরত্ব কত?” আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, “আসমান ও যমীনের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। প্রতিটি আকাশের ঘনত্বও (পুরু ও মোটা) পাঁচশ বছরের পথ। সপ্তমাকাশ ও আরশের মধ্যখানে রয়েছে একটি সাগর। যার উপরিভাগ ও তলদেশের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। আল্লাহ তাআ’লা এর উপরে সমুন্নত রয়েছেন। আদম সন্তানের কোন কর্মকাণ্ডই তাঁর অজানা নয়।” সুনানে আবু দাউদ।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
(১) “কেয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী আল্লাহর হাতের মুঠোতে থাকবে।” এই আয়াতের তাফসীর।
(২) এই অধ্যায়ে আলোচিত জ্ঞান ও এতদ-সংশিষ্ট জ্ঞানের চর্চা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের ইহুদীদের মধ্যেও বিদ্যমান ছিলো। তারা এই জ্ঞানকে অস্বীকারও করতো না।
(৩) ইহুদী পন্ডিত ব্যক্তি যখন কেয়ামতের দিনে আল্লাহর ক্ষমতা সংক্রান্ত কথা বললো, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তার কথাকে সত্যায়িত করলেন এবং এর সমর্থনে ক্বুরআনের আয়াতও নাযিল হলো।
(৪) ইহুদী পন্ডিত কর্তৃক আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কিত মহাজ্ঞানের কথা উল্লেখ করা হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাসির উদ্রেক হওয়ার রহস্য।
(৫) আল্লাহ তাআ’লার দুই হাত মোবারকের সুস্পষ্ট উল্লেখিত হয়েছে। আকাশ মন্ডলী তাঁর ডান হাতে, আর সমগ্র যমীন তাঁর অপর হাতে নিবদ্ধ থাকবে।
(৬) অপর হাতকে বাম হাত বলে নামকরণ করার সুস্পষ্ট ঘোষণা।
(৭) কেয়ামতের দিন অত্যাচারী এবং অহংকারীদের প্রতি আল্লাহর শাস্তির উল্লেখ।
(৮) আকাশের তুলনায় আরশের বিশালতার উল্লেখ।
(৯) “তোমাদের কারো হাতে একটা সরিষা দানার মত”, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের এই কথার তাৎপর্য।
(১০) কুরসীর তুলনায় আরশের বিশালতার উল্লেখ।
(১১) কুরসী এবং পানি থেকে আরশ সম্পূর্ণ আলাদা।
(১২) প্রতিটি আকাশের মধ্যে দূরত্ব ও ব্যবধানের উল্লেখ।
(১৩) সপ্তমাকাশ ও কুরসীর মধ্যে ব্যবধান।
(১৪) কুরসী এবং পানির মধ্যে দূরত্ব।
(১৫) আরশের অবস্থান পানির উপর।
(১৬) আল্লাহ তাআ’লা আরশের উপরে সমুন্নত।
(১৭) আকাশ ও যমীনের দূরত্বের উল্লেখ।
(১৮) প্রতিটি আকাশের ঘনত্ব (পুরো) পাঁচশ বছরের পথ।
(১৯) আকাশমন্ডলীর উপরে যে সমুদ্র রয়েছে, তার উর্ধ্বদেশ ও তলদেশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ।
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও পেইজ থেকে নেয়া
0 Comments