Ad

ঈমানদারের সন্তানেরা ঈমানদার হলে'

 


*****************************************

[সুরা-তূর-২১, তফসীর জেনে রাখা উত্তম] 

--------------------------------------------------------------

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, 

--------------------------------------------- 

"যারা ঈমান আনে, আর তাদের সন্তান সন্ততিরা ঈমানের সাথে পিতামাতাকে অনুসরণ করে, 

আমি তাদের সাথে তাদের সন্তান সন্ততিকে মিলিত করব। 

তাদের ‘আমলের কোন কিছু থেকেই 

আমি তাদেরকে বঞ্চিত করব না। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ।"  

___________[সুরা-তূর, আয়াত-২১]________

~~~ 

২১- নং আয়াতের তাফসীর: 

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা স্বীয় ফল ও করম এবং স্নেহ ও করুণার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, 

যেসব মুমিনের সন্তানরা ঈমানের ব্যাপারে বাপ-দাদাদের অনুসারী হয়, 

কিন্তু সৎ কর্মের ব্যাপারে তাদের পিতৃপুরুষদের সমতুল্য হয় না, আল্লাহ তা'আলা 

তাদের সৎ আমলকে বাড়িয়ে দিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের 

সমপর্যায়ে পৌছিয়ে দিবেন, 

যাতে পূর্বপুরুষরা তাদের উত্তরসূরীদেরকে তাদের পার্শ্বে দেখে শান্তি লাভ করতে পারে। 

আর উত্তরসূরীরাও যেন পূর্বসূরীদের পার্শ্বে থাকতে পেরে সুখী হতে পারে। 

মুমিনদের আমল কমিয়ে দিয়ে যে, তাদের সন্তানদের আমল বাড়িয়ে দেয়া হবে তা নয়, বরং 

অনুগ্রহশীল ও অসীম  দয়ালু আল্লাহ তার পরিপূর্ণ ভাণ্ডার হতে, তা দান করবেন। 

~~~ 

এই বিষয়ের একটি মারফু হাদীসও আছে। 

অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, 

জান্নাতীরা যখন জান্নাতে চলে যাবে, 

এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে সেখানে পাবে না তখন তারা আরয করবেঃ 

“হে আল্লাহ! তারা কোথায়?” 

উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ 

“তারা তোমাদের মর্যাদায় পৌছতে পারেনি। 

তারা তখন বলবেঃ 

“হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো নিজেদের জন্যে ও সন্তানদের জন্যে নেক আমল করেছিলাম!” 

তখন মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে এদেরকেও ওদের সমমর্যাদায় পৌছিয়ে দেয়া হবে। 

~~~ 

এও বর্ণিত আছে যে, 

জান্নাতীদের যেসব সন্তান ঈমান আনয়ন করেছে তাদেরকে তো তাদের সাথে মিলিত করা হবেই, 

এমনকি তাদের যেসব সন্তান শৈশবেই মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকেও তাদের কাছে পৌছিয়ে দেয়া হবে। 

-

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত শাবী (রঃ), হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ), হযরত ইবরাহীম (রঃ), হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত আবূ সালেহ (রঃ), হযরত রাবী’ ইবনে আনাস (রঃ) এবং হযরত যহহাকও (রঃ) একথাই বলেন। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) এটাই পছন্দ করেছেন। 

~~~ 

হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, 

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ 

“নিশ্চয়ই মুমিনরা ও তাদের সন্তানরা জান্নাতে যাবে এবং 

মুশরিকরা ও তাদের সন্তানরা জাহান্নামে যাবে।” 

(হাদীসটি সংক্ষেপকৃত)

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আয়াতটি পাঠ করেন। 

(এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) 

~~~ 

এতো হলো পিতাদের আমলের বরকতে পুত্রদের মর্যাদার বর্ণনা। এখন পুত্রদের দু'আর বরকতে পিতাদের মর্যাদার বর্ণনা দেয়া হচ্ছেঃ 

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, 

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, 

"হঠাৎ করে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সৎ বান্দাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। 

তখন তারা জিজ্ঞেস করবেঃ 

“হে আল্লাহ ! আমাদের মর্যাদা এভাবে হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়ার কারণ কি?” 

আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বলবেনঃ 

“তোমাদের সন্তানরা তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, তাই আমি তোমাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছি।” 

(এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। 

এ হাদীসটির ইসনাদ সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ। 

তবে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ শব্দগুলোর দ্বারা এভাবে বর্ণিত হয়নি) 

~~~ 

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, 

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ 

“যখন আদম সন্তান মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। 

শুধু - তার তিনটি আমলের সওয়াব সে মৃত্যুর পরেও পেতে থাকে। 

(এক) সদকায়ে জারিয়াহ। 

(দুই) দ্বীনী ইলম, যার দ্বারা উপকার লাভ করা হয়। 

(তিন) সৎ সন্তান, যে মৃত ব্যক্তির জন্যে দু'আ করতে থাকে।” 

(এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

~~~

এখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, 

মুমিনদের সন্তানরা আমলহীন হলেও 

তাদের আমলের বরকতে তাদের (মুমিন) সন্তানদের মর্যাদাও 

তাদের সমপর্যায়ে আনয়ন করা হবে। 

~~~ 

আল্লাহ তাআলা তাঁর এই অনুগ্রহের বর্ণনা দেয়ার সাথে সাথেই 

নিজের আদল ও ইনসাফের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, কাউকেও অন্য কারো আমলের কারণে পাকড়াও করা হবে না, 

বরং প্রত্যেকেই নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী থাকবে। 

পিতার পাপের বোঝা পুত্রের উপর এবং পুত্রের পাপের বোঝা পিতার উপর চাপানো হবে না। 

~~~ 

যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ 

(আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ, 

তবে দক্ষিণ পার্শ্বস্থ ব্যক্তিরা নয়, তারা থাকবে উদ্যানে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করবে- অপরাধীদের সম্পর্কে।” 

(মুদাচ্ছির : ৩৮-৪১) 

____________[তফসীর ইবনে কাসির]_________

Post a Comment

0 Comments