Ad

নামাজে সুতরার গুরুত্ব এবং কয়েকটি জরুরী মাসআলা 🕋

 


🕋 নামাজ পড়ার জন্য কোনো বস্তুর আড়ালে দাঁড়ালে তাকে সুতরা বলা হয়।


 সুতরা আরবি শব্দ। অর্থ পর্দা। নামাজের সময় দৃষ্টি রাখতে হয় দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার স্থানে, বসা অবস্থায় কোলে। সম্পূর্ণ মনোযোগ রাখতে হয় আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির প্রতি। 


নামাজের সামনে দিয়ে মানুষ চলাচল করলে নামাজি ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত ধ্যান নষ্ট হয়। মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়। অনিচ্ছায় দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরে যায়। সামনে দিয়ে মানুষের চলাচলের এ ক্ষতি থেকে নামাজকে হেফাজতের জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়বে তখন সুতরার পেছনে দাঁড়াবে।' -আবু দাউদ :৬৯৮।


নবী করিম (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, 'তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে যেন সুতরা ব্যবহার করে। যদিও একটি তীর দিয়ে হয়। -মুসনাদে আবু ইয়ালা :১/৪২২।


হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঈদের দিন নামাজের উদ্দেশে বের হলেন তখন তার নির্দেশমতো তার সামনে একটি ছোট বর্শা রাখা হলো। তিনি ওই তীরের পেছনে নামাজ আদায় করলেন আর অন্যরা তার পেছনে নামাজ আদায় করলেন। তিনি সফরে (পথঘাটে) এমনটিই করতেন। -সহিহ বোখারি :৪৯৫।


নামাজের সামনে সুতরা থাকলে সুতরার বাইরে দিয়ে অন্যের চলাচল দ্বারা নামাজের ক্ষতি হবে না এবং চলাচলকারীদের কোনো গুনাহ হবে না। তাই খোলা মাঠ, পথের পাশ, বড় মসজিদের ভেতর, বাসাবাড়ি, দরজার কাছে নামাজে দাঁড়ালে সুতরা ব্যবহার করা উচিত। এসব স্থানে সুতরা ছাড়া নামাজে দাঁড়ালে অন্যদের জন্য ব্যাপারটা কষ্টকর হয়। যেহেতু নামাজের সামনে দিয়ে চলাচল করা শক্ত গুনাহ, সেহেতু এ গুনাহ থেকে বাঁচতে তাদের অনেকটুকু জায়গা ঘুরে যেতে হয়। নচেৎ নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্যদের অপেক্ষা করতে হয়। অথচ একটি সুতরা ব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।


দেয়ালের পেছনে, পিলার বা খুঁটির পেছনে নামাজ পড়লে যেহেতু সামনে দিয়ে কারও চলাচলের কোনো সম্ভাবনা থাকে না, সেহেতু সেখানে আলাদা সুতরা ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে সেখানে দাঁড়াতে হবে দেয়াল বা পিলারের কাছে।


 হজরত সাহাল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের স্থান আর দেয়ালের মাঝে একটি ছাগল চলাচলের মতো দূরত্ব থাকত। _মুসনাদে আহমাদ :১৬৫৯০।


অনুরূপভাবে যে স্থানে মানুষ চলাচলের সম্ভাবনা নেই সে স্থানে সুতরার প্রয়োজন নেই। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোলা মাঠে নামাজ আদায় করলেন তখন তার সামনে কিছুই ছিল না (মুসনাদে আহমাদ :১৯৬৫)।


 অর্থাৎ তিনি কোনো সুতরা ব্যবহার করেননি।


    🕋 সুতরা দেওয়ার গুরুত্ব 🕋


নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নামাযীর সামনে সুতরা দেয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল সাঃ এর একটি হাদীস দ্বারা সুষ্পষ্টরূপে সুতরার গুরুত্ব বুঝা যায়- হাদীসটি হল-


عن أبي هريرة قال قال النبي صلى الله عليه و سلم ( لو يعلم أحدكم ما له في أن يمر بين يدي أخيه معترضا في الصلاة . كان لأن يقيم مائة عام خير له من الخطوة التي خطاها (سنن ابن ماجه، كتاب الصلاة، باب المرور بين يدى المصلى، رقم الحديث-946)


অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি কোন নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করে সে যদি জানতো [এর শাস্তি কতটা ভয়াবহ], তাহলে তার কাছে একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে হতো নামাযীর সামনে দিয়ে এ পদক্ষেপের তুলনায়। 


 1.সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯৪৬,


2. কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১৯২৫২।


অন্য হাদীসে এসেছে-


قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَىِ الْمُصَلِّى مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ ». قَالَ أَبُو النَّضْرِ لاَ أَدْرِى قَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ شَهْرًا أَوْ سَنَةً (سنن ابى داود، كتاب الصلاة، باب مَا يُنْهَى عَنْهُ مِنَ الْمُرُورِ بَيْنَ يَدَىِ الْمُصَلِّى، رقم الحديث-701)


অনুবাদ-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কীরূপ শাস্তি-ভোগের আশংকা রয়েছে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করতো।


হযরত আবুন নাযর বলেন-আমার জানা নেই, হাদীসে চল্লিশের কী অর্থ, চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ চছর?


1.সুনানে আব দাউদ, হাদীস নং-৭০১,


2. সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩৩৬,


3. সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৪১৭,


4. সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং- ৩২৬৪, 


5.সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৮৩২,


6. সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৩৬৬,


7. সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৮৮, 


8.সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৬০,


9. মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১৩৯১,


10. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৫৪০,


11. মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৭৮২,


12. মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-২৪২,


13. মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৫২৬।


        🕋 সুতরা কেমন হবে?🕋


সুতরার নূ্ন্যতম পরিমাণ হলো উচ্চতায় এক হাত আর প্রস্থে এক আঙুল। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুতরার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বলেছিলেন, সুতরা হবে হাওদার পেছনের লাঠির মতো। হাদীস শরীফে এসেছেঃ-


قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا جَعَلْتَ بَيْنَ يَدَيْكَ مِثْلَ مُؤَخَّرَةِ الرَّحْلِ فَلاَ يَضُرُّكَ مَنْ مَرَّ بَيْنَ يَدَيْكَ (سنن ابى داود، كتاب الصلاة، باب ما يستر المصلى، رقم الحديث-685)


অনুবাদ-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যদি নামাযীর সামনে হাওদার পিছনের লাঠির সমান কিছু রাখে, তাহলে তার সামনে দিয়ে যারা অতিক্রম হয়, তাদের কোন সমস্যা নেই।


 {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৬৮৫,


 সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯৪০,


 সুনানে বায়হাকী, হাদীস নং-৯৫৪, 


সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৩৫,


 সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৮২১,


 সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৩৭৯,


 সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৮৪৩,


 সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৩৯,


মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১৩৯৭, 


মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৬৩০,


 মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৩৮৮,


 মুসদানুল বাজ্জার, হাদীস নং-৯৩৯}


এ হাদীসের আলোকে ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন, সুতরা হতে হবে কমপক্ষে এক হাত লম্বা। আর মোটা হবে আঙ্গুল পরিমাণ। যদি এক হাত লম্বা ও আঙ্গুল পরিমাণ মোটা লাঠি হয়, তাহলেই সেটি সুতরা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এমন বস্তু নামাযীর সামনে থাকলে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ আছে। নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমের গোনাহ হবে না।


এ হাদীস থেকে একথাও বুঝা যায় যে, সুতরা দিয়ে নামায পড়াই উত্তম যদি সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার সম্ভাবনা থাকে।


🕋 সুতরা কতটুকু দূরত্বে দিতে হবে?🕋


সুতরা নামাযী ব্যক্তির সিজদার স্থান থেকে অল্প একটু সামনে রাখলেই যথেষ্ট।


সুতরা না থাকলে অন্যরা কতটুকু দূরত্ব দিয়ে অতিক্রম করতে পারবে?


যদি মসজিদে নামায পড়ে, আর মসজিদে ছোট হয়, তাহলে সামনে দিয়ে অতিক্রম বিলকুল করতে পারবে না। চাই যত দূরত্ব দিয়েই অতিক্রম করুক না কেন।  কিন্তু যদি মসজিদে বড় হয়, বা ময়দানে নামায পড়ে, তাহলে নামাযী ব্যক্তি নামাযে দাড়িয়ে সেজদার স্থানের দিকে তাকালে যতদূর পর্যন্ত দেখতে পায়, ততটুকু দূরুত্বের বাহির দিয়ে অতিক্রম করবে। আর এর পরিমাণ হল-তিন কাতার সম পরিমাণ। যেটা প্রায় ৪/৫গজ। আর যদি কোন ষ্টেশনে নামায পড়ে, তাহলে সেজদার স্থান বাদ দিয়ে সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ হবে। {ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/১৭৮}


( ومرور مار في الصحراء أو في مسجد كبير بموضع سجوده ) في الأصح ( أو ) مروره ( بين يديه )__ ( في ) بيت و ( مسجد ) صغير ، الخ ( وإن أثم المار ) (رد المحتار-كتاب الصلاة، باب مايفسد الصلاة-2/398


অনুবাদ-ময়দান বা বড় মসজিদে সেজদার স্থান ছাড়া সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে কোন সমস্যা নেই। তবে বাড়ি বা ছোট মসজিদে হলে গোনাহ হবে। {ফাতওয়ায়ে শামী-২/৩৯৮, মাজমাউল আনহুর-১/১৮৩, আল বাহরুর রায়েক-২/১৫}


🕋 নামাজরতদের সামনে দিয়ে চলাচলের বিধান 🕋


কেউ যদি সুতরা ছাড়াই নামাজে দাঁড়ায় তখন চলাচলের সুবিধার্থে আমাদের সমাজে তিনটি ভুল রেওয়াজ আছে। যথা_


🔰১. নামাজির সামনে রুমাল, গামছা ইত্যাদি কাপড় ধরে রেখে তার বাইরে দিয়ে চলাচল করা হয়। এটি একটি ভুল কাজ। এভাবে রুমাল ধরে নামাজির সামনে দিয়ে যাতায়াত করা যাবে না। কেননা, সুতরা সংক্রান্ত হাদিসগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে সহজেই প্রতীয়মান, সুতরা হবে এমন বস্তু যা মানুষের ধরে রাখা ব্যতীতই উঁচু হয়ে থাকতে পারে।


🔰 ২. চলাচলকারী নিজেই নামাজির সামনে সুতরা রেখে চলাচল করে। এটাও অনুচিত কাজ। কেননা, সুতরা সংক্রান্ত হাদিসগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে বোঝা যায়, সুতরা রাখাটা নামাজির কাজ। 


শরিয়ত নামাজিকে নির্দেশ দিয়েছে নামাজ শুরু করার আগে নিজের সামনে সুতরা রাখতে। চলাচলকারীকে নামাজির সামনে সুতরা রেখে চলাচলের উৎসাহ বা অনুমতি শরিয়ত দেয়নি। 


বরং চলাচলকারীকে স্পষ্ট ভাষায় উৎসাহিত করেছে অপেক্ষা করতে। যদিও অপেক্ষার সময় দীর্ঘক্ষণ হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নামাজির সামনে চলাচলকারী যদি এর ক্ষতি সম্পর্কে জানত, তবে নামাজিকে অতিক্রম না করে চলি্লশ (দিন-মাস-বছর) অপেক্ষা করা তার জন্য সহজ হতো। -সহিহ বোখারি :৫১০।


হাদিসে নবীজি নামাজ শুরু করার আগে সুতরা সামনে রেখে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা জেনে নেয়া উচিত।


এ ক্ষেত্রে নামাজির কয়েক অবস্থা হতে পারে।


☑ নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষিদ্ধ এবং তা অত্যন্ত বড় গুনাহের কাজ।


রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানতে পারত এতে কীরূপ শাস্তি-ভোগের আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে ৪০ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করত।’


বর্ণনাকারী আবুন নাযর বলেন, আমার জানা নেই, হাদিসে ৪০ দ্বারা কী উদ্দেশ্য, ৪০ দিন, ৪০ মাস, নাকি ৪০ বছর! -সহীহ বুখারী, হাদিস : ৫১০; সহীহ মুসলিম, হাদিস : ৫০৭।


☑ মসজিদ যদি বড় হয় অর্থাৎ মসজিদের প্রশস্ততা চল্লিশ হাতের বেশি হয় তাহলে উক্ত মসজিদে নামাজরত ব্যক্তির দুই কাতার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে। পক্ষান্তরে চল্লিশ হাতের চেয়ে ছোট মসজিদ হয়, সেক্ষেত্রে নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে ‘সুতরা ( প্রতিবন্ধক) ব্যতীত’ অতিক্রম করা জায়েজ হবে না। সুতরা সামনে রেখেই প্রয়োজনে অতিক্রম করতে পারবে। 


1.ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৪; 


2.ফতোয়ায়ে শামী ১/৬৩৭; 


3.আল-বাহরুর রায়েক ২/১৭।


☑  তবে নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে যদি অন্যদের যাতায়াতের সম্ভাবনা থাকে তাহলে নামাজ শুরু করার পূর্বেই সামনে ‘সুতরা’ রেখে নামাজ আরম্ভ করা সুন্নত। আর সুতরার, সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো, “এক হাত হওয়া।” এক হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.)কে সুতরার পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, হাওদার লাঠির মতো। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫০০।


☑ মাঝে মাঝে মসজিদে কিছু মুসল্লিকে দেখা যায়, তারা দ্রুত বের হওয়ার জন্য নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে রুমাল বা হাতে থাকা জায়নামাজ সুতরা হিসেবে ব্যবহার করে হাঁটতে থাকে। এই ধরনের ‘চলমান সুতরা’ নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার জন্য সুতরা হিসেবে যথেষ্ট নয়। তাই এর থেকে বিরত থাকতে হবে।


1,বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯; 


2.শরহুল মুনিয়াহ পৃ. ৩৬৭।


☑ কেউ যদি অজ্ঞতাবশত নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে তাকে হাত দিয়ে কিংবা একটু উচ্চস্বরে তাসবিহ পড়ে সতর্ক করাও জায়েজ আছে। তবে নামাজি ব্যক্তির জন্য এমন না করাই উত্তম। তবে হ্যাঁ, তার সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার আশঙ্কা থাকলে নামাজ শুরু করার পূর্বেই সুতরা সামনে রাখা সুন্নত।


1.আলবাহরুর রায়েক ২/১৮;


2. আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৩;


3. ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৫;


4. বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯।


☑ অনেক সময় দেখা যায়, কোনো মুসল্লি নামাজরত ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করে এরপর আরেক জনের সামনে সুতরা রাখে। এইভাবে সে একাধিক ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে মসজিদ থেকে বের হয়। এইভাবে অতিক্রম করা নাজায়েজ নয়। তবে এতে নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ বিনষ্ট হতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করা থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য এরূপভাবে অতিক্রম করলেও অতিক্রমকারীর গুনাহ হবে না। তবে নামাজি ব্যক্তির উচিত মানুষ যাতায়াতের স্থানে সুতরা সামনে রেখেই নামাজে দাঁড়ানো।


1. ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; 


2.ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৩১


🔰 ৩. কারও পেছনে নামাজি থাকলে প্রয়োজন থাকলেও সে উঠে আসে না। অপেক্ষা করে অথবা আরেকজনকে দিয়ে সুতরা রেখে পরে উঠে আসে। এটা একটি অপ্রয়োজনীয় কাজ। কেননা, হাদিসে নামাজির সামনে দিয়ে চলাচল, যাতায়াত, অতিক্রমকে নিষেধ করা হয়েছে। উঠে আসাকে নিষেধ করা হয়নি। তাই কারও পেছনে নামাজি থাকলে উঠে চলে আসতে কোনো অসুবিধা নেই


 যেহেতু এর দ্বারা নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিষয় পাওয়া যায় না। সে আস্তে করে স্বীয় স্থান থেকে উঠে চলে যাবে।


এ বিষয়টির দলিল হযরত আয়শা রাঃ এর নিম্নোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। হাদীসটি হল-


عن عائشة . قال الأعمش وحدثني مسلم عن مسروق عن عائشة  : ذكر عندها ما يقطع الصلاة الكلب والحمار والمرأة فقالت شبهتمونا بالحمر والكلاب والله لقد رأيت النبي صلى الله عليه و سلم يصلي وإني على السرير بينه وبين القبلة مضطجعة فتبدو لي الحاجة فأكره أن أجلس فأوذي النبي صلى الله عليه و سلم فأنسل من عند رجليه


 [ ر 486 ](صحيح البخارى-كتاب الصلاة، أبواب سترة المصلي،باب من قال لا يقطع الصلاة شيء، رقم الحيديث-493، 514)


অনুবাদ-হযরত মাসরুক আয়শা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন তাকে এই হাদিস শুনানো হল যে, “গাধা ও কুকুর এবং মহিলাদের কারণে নামায ভেঙ্গে যায়” তখন তিনি বললেন যে, “তোমরা আমরা নারী জাতিকে গাধা ও কুকুরের সমতূল্য বানিয়ে দিলে? অথচ আমি নবীজী সা. এর সামনে কিবলার দিকে জানাযার মত শুয়ে থাকতাম। আর নবীজী নামায পড়তেন (তাহাজ্জুদ)। তখন আমার পা ছড়ানো দরকার হলে আমার পা নবীজী সাঃ এর সিজদার স্থানে চলে যেত। (ঘর অন্ধকার থাকার দরুন) যখন তিনি সিজদার জন্য বসতে চাইতেন, তখন আমার পায়ে খোঁচা দিতেন। তখন আমি পা গুটিয়ে নিতাম। (বুখারী শরীফ-হাদিস নং-৪৯২,৫১৪)।


এছাড়াও দেখা যেতে পারে-


ইমাদাদুল ফাতওয়া-১/৭৯২


ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/১৭৮-১৭৯


নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে নামাযরত ব্যক্তি কিভাবে বাঁধা দিবে?


পুরুষরা তাকবীর দিয়ে, বা কেরাত পড়তে থাকলে কেরাত একটু জোরে পড়ে, আর মহিলারা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের উপরিভাগে বাড়ি দিয়ে তালির মত আওয়াজ করে নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে বাঁধা দিবে।


عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ وَالتَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ (سنن ابى داود، كتاب الصلاة، باب التَّصْفِيقِ فِى الصَّلاَةِ، رقم الحديث-940


অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তাসবীহ হল পুরুষদের জন্য, আর তাসফীক তথা মৃদু তালি হল মহিলাদের জন্য।


 {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৯৪০,


 সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১০৩৪,


 সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১১৪৫,


 সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৯৮২}


وفى رد المحتار– سمع اسم الله تعالى فقال جل جلاله أو النبي صلى الله عليه وسلم فصلى عليه ، أو قراءة الإمام فقال صدق الله ورسوله تفسد إن قصد جوابه الخ وقيد بقصد الجواب لأنه لو لم يرد جوابه بل أراد إعلامه بأنه في الصلاة لا تفسد اتفاقا  (رد المحتار، كتباب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة-2/381


দেখুন –ফাতওয়ায়ে শামী-২/৩৮১


আল্লাহ তাআলা যেভাবে নামাযে আদায় করলে সবচেয়ে খুশি ও সন্তুষ্ট হন সেভাবে আমাদেরকে নামায আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

Post a Comment

0 Comments