Ad

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অস্তিত্ব, ইজ্জত ও সিফাত সমৃদ্ধ গুণবাচক নামের গুণাবলী কি_?এবং তার অস্তিত্বের প্রমাণ আলোচনা করা হলো





🌷বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম 🌷
🌷আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহ🌷
💠💠
🍀🍀🍀আলহামদুলিল্লাহ!!!,আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। সম্মানীত হাজেরীন এ কেরাম।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অস্তিত্ব,এবং তার সিফাত সমৃদ্ধ গুণবাচক নামগুলি বিশালতা,
একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছাড়া দুনিয়াতে অন্য কোনো বস্তু,অন্য কোনো সৃষ্টি বা অন্য কিছুর সাথে সমতুল্য বিহীন এক বিধান। যা কেবল একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার ইজ্জত, সম্মান,প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা বহন করে । তাই তিনি সমস্ত সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক এবং আর্শিল আযিমের মালিক ও রক্ষা কর্তা।মোটকথা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কোনো কিছু ওয়াজিবুল অজুদ বা অনাদি অনন্ত নয়।তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইজ্জত স্বীয় মুখাপেক্ষীহীনতার বিষয়ে নিজেই সাক্ষ্য প্রদান করে ইরশাদ করেছেন,,
🔹(ক) হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহপাকের নিকট অভাবী, আর আল্লাহপাক অভাবশূন্য ও প্রশংসিত।
[সূরা:- ফাতির,, আয়াত:- ১৫।]
🔹(খ) যে সত্তা নিজ অস্তিত্বে ওয়াজিবুল অজুদ তিনি তার নামসমূহ গুণাবলি ও সকল দিক বিবেচনায় ওয়াজিবুল অজুদ বা অনাদি অনন্ত। আর এটি স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণিত যে, তিনিই একমাত্র চিরন্তন সত্তা।
[শরহে ফিকহে আকবর:- পৃ. ১৫-১৬।]
🔹(গ) এ প্রসঙ্গে ইমাম খরীরী (রহ:) রহমতুল্লাহ আলাইহি বলেছেন,, ওয়াজিবুল অজুদ এমন সত্তা, যার তুলনা, উপমা নেই। অনন্ত অসীমকাল পর্যন্ত তিনি বর্তমান থাকবেন। তার অনুপস্থিতি বা নশ্বরতা পরিপূর্ণভাবেই অসম্ভব। তিনি নিজেই তার জাত ও সিফাতের অস্তিত্বদানকারী।
[গ্রন্থ নিরবাস :- পৃ. ১০৭।]
☘☘☘আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দু’ধরনের নাম আছে।
🔹(১) জাতি বা সত্তাগত নাম আল্লাহ। এ নামটিই সত্তাগত মৌলিক নাম।
🔹(২) সিফাতি বা গুণবাচক নাম। হাদিস শরীফে তার ৯৯টি সিফাতি বা গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই ৯৯টি নাম আল্লাহপাকের সকল সিফাতি কামালের মূল ও ভিত্তি। তবে এর অর্থ কিন্তু ও নয় যে, তার কেবলমাত্র এ ৯৯টি নামই আছে।
এছাড়া আল্লাহপাকের আর কোনো নাম নেই। বরং ওগুলো ছাড়া তার আরো অগণিত নাম আছে, যার কিছু কিছু নাম আল-কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন যুলফাদল, যিল মায়ারিজ, যিত ত্বাওল, মালিক, আকরাম, ক্বাহির, ফাতির প্রভৃতি।
মহান আল্লাহর একাধিক নামের ঘোষণা তিনি নিজেই প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
🔹(ক) আল্লাহপাকের অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে,"তোমরা তাকে ওই নামসমূহের দ্বারা ডাক"।
[সুরা:- আ’রাফ,, আয়াত:- ১৮০।]
🔹(খ) হযরত আবু হুরায়রা (রা:) রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,, রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "আল্লাহপাকের ৯৯টি গুণবাচক নাম আছে। যে এ নামগুলো গণনা করে রাখবে বা আয়ত্তে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশাধিকার পাবে"। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক বেজোড়, তিনি বেজোড় পছন্দ করেন।
[সহীহ মুসলিম : খন্ড ২, পৃ. ৩৪২।]
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সিফাতে কুদরাতের অধিকারী। অর্থাৎ তিনি বন্ধনমুক্ত সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী। কোনো বস্তুই তার ক্ষমতার বাইরে নয়। বরং সকল কিছুর ওপর তিনি ক্ষমতাশালী। তিনি সকল প্রকার অক্ষমতা ও অপারগতার ঊর্ধ্বে। তার নিকট অক্ষমতার কোনো নাম চিহ্নও নেই।
এ প্রসঙ্গে, আল্লাহপাক নিজেই ঘোষণা করেছেন,
🔹(ক) হে নবী, আপনি বলুন, "তিনি (আল্লাহ) তোমাদের ঊর্ধ্ব হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি প্রেরণে সক্ষম"।
[সূরা:- আনআম,, আয়াত:- ৩৫।]
আরো ইরশাদ হয়েছে, "হ্যাঁ, তিনি মানুষের সকল জোড়া যথাযথ স্থাপন করে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় সৃষ্টি করতে ক্ষমতা রাখেন"।
[সূরা:-কিয়ামাহ,,আয়াত:- ০৪।]
🔹(খ) "তিনি তার চিরন্তন ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। তিনি সৃষ্টি বস্তুর ক্ষমতার মতো ক্ষমতাধর নন। বরং চিরস্থায়ী অবিনশ্বর ক্ষমতায় ক্ষমতাশালী। তিনি চিরঞ্জীব, মহা নিয়ন্ত্রণকারী বা সকল কিছুর ধারক"।
[শরহু ফিকহে আকবার : পৃ. ১৬।]
🔹(গ) আল্লাহপাকের কুদরত আছে, এর অর্থ হলো, কিছু করা বা না করার ব্যাপারে তিনি স্বাধীন। সকল আহলুস সুন্নাহ এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা স্বীয় কুদরতে কার্য-সম্পাদন করেন। তিনি ইচ্ছা করলে করেন, তিনি ইচ্ছা না করলে করেন না।
[গ্রন্থ:-মুয়ামুল কালাম।]
মহাবিশ্বের কঠিন বাস্তবতার নিরেখেই আমরা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস রাখতে বাধ্য।
আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বে বিশ্বাস — আল্লাহ আছেন, ছিলেন, থাকবেন। হৃদয়ের গভীরে কঠিনভাবে এ-বিশ্বাস পোষণ করার নামই আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস। এ-বিশ্বাস কোনো অলীক ধারণা প্রসূত নয় বরং এর পক্ষে রয়েছে অসংখ্য দলীল। উদাহরণত আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিজগৎ, ও এতে সক্রিয় নিখুঁত পরিচালনা পদ্ধতি আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব নির্দেশক একটি বড় প্রমাণ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অস্তিত্বের প্রচুর নিদর্শন পেশ করেছেন। মানবজাতির কাছে যেন আল্লাহর অস্তিত্ব একেবারসন্দেহাতীতভাবে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হয়, সে জন্য তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নিদর্শনের পাশাপাশি সহজ ও সর্বজনবোধ্য বেশকিছু নিদর্শনের কথাও উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে একাধিক বর্ণনাভঙ্গি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন কোথাও বলা হয়েছে, ‘ইন্না ফি খালকিস সামাওয়াতি..."তথা আসমান ও জমিন সৃষ্টির মধ্যে... বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে"। আর কোথাও বলা হয়েছে,"ওয়া মিন আয়াতিহি" অর্থাৎ তাঁর নিদর্শনের মধ্য থেকে...অর্থাৎ তার পরিচালিত নিদর্শন,একমাত্র তার নির্দেশিত ভাবেই
পরিচালনা করা হয় এবং তা বুদ্ধিমানরাই উপলব্ধি করেন।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে নিজ পরিচয় দিয়েছেন এভাবে_,,
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ.
🔹"আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁরই। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তার কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে বা পিছনে যা কিছু রয়েছে, তিনি তার সবই জানেন। তাঁর জ্ঞান-সীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না-তবে যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর আসন (সার্বভৌম ক্ষমতা) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান"।🔹
[সূরা:- বাকারা,, আয়াত:- ২৫৪]
আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও এককতায় বিশ্বাসের পাশাপাশি তার সমস্ত নাম ও সিফাত (গুণমঞ্জরি) এর প্রতি বিশ্বাস সমান গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুরআন ও রাসূল (সাঃ) সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামের বিশুদ্ধ সুন্নাহয়, আল্লাহ তাআলার যেসব নাম ও সিফাতের কথা এসেছে সে সবের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই মর্মে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো অপব্যাখ্যা, নিষ্ক্রিয়করণ, আকৃতি ও উপমা প্রদান ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে কঠিনভাবে।
অতএব, সম্মানীত হাজেরীন এ কেরাম,,আমার মতো এই খুদ্রজ্ঞানের পরিসরে,, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অস্তিত্ব, ইজ্জত, সম্মান মহিমা,সিফাতের গুণাবলী এবং তার আরশের অস্তিত্ব বর্ণনা করা সম্ভবপর নয়।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সকল
কে প্রবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বুঝার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।

Post a Comment

0 Comments