Ad

বিতর সালাতের বিস্তারিত সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি :

বিতর সালাতের পদ্ধতিঃ বিতর শব্দের অর্থ = বেজোড়। আর বেজোড় সংখ্যা হলো ১, ৩, ৫, ইত্যাদি। আলী (রাঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিতর সালাত পড়েছেন এবং বলেছেন- “হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরা বিতর সালাত আদায় কর। কেননা আল্লাহ্‌ বিতর (একক), তিনি বিতর সালাত পছন্দ করেন। (আবু দাউদ, বিতর সালাত অধ্যায়, হাদিস নং- ১৪১৬) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিতর সালাত হিসেবে ১ রাকাত, ৩ রাকাত, ৫ রাকাত, ৭ রাকাত, এমনকি ৯ রাকাতও পড়েছেন। হাদিসটি থেকেই বুঝা যায়, বিতর সালাত একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি সালাত। বিতর সালাত আদায় করার সময়ঃ এই সালাত ইশারের পর থেকে ফযরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যাবে। তবে রাতের সর্বশেষ সালাত হিসেবে বিতর পড়তে হবে। বিতর রাতের শেষ অংশে পড়া বেশি নেকীর, তবে নিয়মিত উঠার অভ্যাস না থাকলে বা শেষ রাত্রে উঠার নিশ্চয়তা না থাকলে ঘুমানোর আগেই পড়ে ফেলতে হবে। উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশে ফযরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ারও অনেক পরে ফজরের আযান দেয়া হয়। তাই ফযরের ওয়াক্ত চিহ্নিত করে ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই বিতর পড়ে নিতে হবে। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণীত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, রাতের অর্ধেক বা দুই-তৃতীয়াংশ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্‌ তাবারাকা ওয়া তা’আলা দুনিয়ার আসমানে অবতরন করেন, অতঃপর বলেন- কোন প্রার্থনাকারী আছে কি, তার প্রার্থনা কবুল করা হবে। কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছে কি, তাকে ক্ষমা করা হবে। এভাবে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। (সহিহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের সালাত, হাদিস নং-১২৬৩) অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আশংকা করে যে, শেষ রাতে নফল পড়ার জন্য উঠতে পারবে না, তবে সে যেন রাতের প্রথমভাগেই বিতর পড়ে নেয়। আর যে শেষ রাতে কিয়াম করার আগ্রহ রাখে সে যেন রাতের শেষ সালাত হিসেবে বিতর পড়ে। কেননা শেষ রাতের সালাতে ফিরিশতাগণ উপস্থিত হন। আর এটাই উত্তম। (সহিহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের সালাত, হাদিস নং-১২৫৫) তাই বিতর শেষ রাতেই পড়া উত্তম, তবে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই তা পড়ে নিতে হবে। বিতর সালাতের রাকআত সংখ্যা ও তার পদ্ধতিঃ বিতর সালাত মূলত তাহাজ্জুদ সালাতের-ই অংশ। তাই পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিতর সালাতের সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে শেষ রাত্রি। বিভিন্ন হাদিস থেকে বুঝা যায়, বিতর সালাত ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১ ও ১৩ রাকআত পর্যন্ত পড়ার বিধান রয়েছে। তবে ১১ রাকআত পড়া সর্বোত্তম। আবূ সালামা ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রামাযান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্বলাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে এবং রমযান ছাড়া অন্যান্য সময় রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) ১১ রাকাআতের অধিক আদায় করতেন না। তিনি চার রাকা’আত করে সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই স্বলাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর তিনি ৩ রাকা’আত (বিত্‌র) স্বলাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, একদিন আমি জিজ্ঞাসা করলাম- ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি কি বিতরের আগে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না। (সহিহ বুখারী, ২য় খণ্ড, তাহাজ্জুদ অধ্যায়, হাদিস নং- ১০৮১)
___________♠♥_________
১ রাকআত বিতরের নিয়মঃ ১ রাকআত বিতরের নিয়ম হল, তাকবীর বেঁধে --> ছানা --> আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম --> বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম --> সুরা ফাতিহা --> অন্য যে কোন একটি সুরা পড়ে রুকু করা। অতঃপর রুকু থেকে সোজা হয়ে দাড়িয়ে দুটি সিজদা করে বসে তাশাহুদ, দুরুদ, মাসুর দুয়া পড়ে সালাম ফিরানো। ব্যাস, এই হল ১ রাকআত বিতরের নিয়ম। দলিলঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণীত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- বিতর হচ্ছে শেষ রাতে ১ রাকআত সালাত। (সহিহ মুসলিম, দ্বিতীয় খন্ড, মুসাফিরের সালাত অধ্যায়, হাদিস নং- ১২৪৭) আবু মিজলায হতে বর্ণীত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বিতর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলাম। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি- বিতর হচ্ছে শেষ রাতে ১ রাকআত সালাত। (সহিহ মুসলিম, দ্বিতীয় খন্ড, মুসাফিরের সালাত অধ্যায়, হাদিস নং- ১২৪৯) আবু আইয়্যুব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণীত, নাবী (সা:) বলেন, যে এক রাকআত বিতর পড়তে চায় সে এক রাকআত পড়তে পারে। (সুনান আবু দাউদঃ ১২১২) ৩ রাকআত বিতরের নিয়মঃ ৩ রাকআত বিতরের ২টি নিয়ম রয়েছে। ১ম নিয়ম হচ্ছে- দু রাকআত পড়ে সালাম ফিরানো, অতঃপর পূর্বের নিয়মের ন্যায় ১ রাকআত পড়া। এই হয়ে গেল মোট তিন রাকআত। দলিলঃ জনৈক সাহাবী রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বিতরের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাস করল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- রাতের সালাত দু দু রাকআত করে, যখন ফজর হওয়ার আশঙ্কা করবে তখন এক রাকআত বিতর পড়ে নিবে। ( সহিহ বুখারি, অধ্যায়ঃ বিতরের সালাত, হাদিসঃ ৯৩২) ২য় নিয়মটি হচ্ছে- একসাথে ৩ রাকআত পড়া। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকআত পড়ে তাশাহুদের জন্য না বসে দাড়িয়ে যাবে, এবং ৩য় রাকআত পড়ে সালাম ফিরানো। দলিলঃ আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণীত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিতর সালাতে মাঝে তাশাহুদের জন্য বসতেন না, একাধারে তিন রাকআত পড়ে শেষ রাকআতে বসতেন ও তাশাহুদ পড়েতেন। এভাবেই বিতর পড়তেন আমীরুল মুমিনীন উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) । (হাকেম) মাগরিবের মত করে বিতর পড়া নিষেধ। অর্থাৎ মাগরিবের মত করে বিতর সালাতের সময়ও ২য় রাকআতে বসে বিতর সালাতকে মাগরিবের ন্যায় করে ফেলা হারাম। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণীত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- তোমরা মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য করে তিন রাকআত বিতর পড়না; বরং ৫ রাকআত বা ৭ রাকআত বা ৯ রাকআত কিংবা ১১ রাকআত দ্বারা বিতর পড়। (দারা কুতনী, ইবনে হিব্বান) শাইখ আলবানী (রঃ) বলেন, তিন রাকআত বিতর ২ তাশাহুদে পড়লেই তা মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য হয়। ৩ রাকআতে তিনটি সুরা দিয়ে বিতর পড়া সুন্নাত। সুরা ৩টি হচ্ছে, ১ম রাকআতে সুরা আ’লা, ২য় রাকআতে সুরা কাফিরুন, ৩য় রাকআতে সুরা ইখলাস। (সুনানে নাসাঈ, কিয়ামুল লাইল অধ্যায়, হাদিস নং- ১২১৩) কেউ এই তিনটি সুরা না পারলে কোন সমস্যা নেই, অন্য যে কোন সুরা দিয়ে পড়লেও হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। দুয়া কুনুতঃ কুনুত না জানলে আমাদের দেশের সুরা ইখলাস ৩বার পড়ার বিধান ভিত্তিহীন। কুনুত দুইভাবে পড়া যায়, রুকুর আগে অথবা রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাড়িয়ে। উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশে কুনুত পড়ার আগে আল্লাহু আকবার বলে হাত তুলে তাকবীর দেয়ার যে নিয়ম এই নিয়ম রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে প্রমানিত না। তাই এটি বিদআত। আল্লাহু আকবার বলে হাত না তুলে বরং কিরাতের পরে সরাসরি দুয়া কুনুত পড়তে হবে। কুনুত পড়ার সময় মুনাজাত করার মতো হাত তুলে কুনুত পড়া মুস্তাহাব। (আল মুগনী, ২/৫৮৪) ।

Post a Comment

0 Comments