Ad

উত্তম বিদয়াত সাওয়াবের কাজ

 




সূরাঃ ২ বাকারা ১১৭ নং আয়াতের বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ-

১১৭। বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়া ইযা কাযা আমরান ফাইন্নামা ইয়াকুলু লাহু কুন, ফা ইয়াকুন

- আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর বাদী (দৃষ্টান্ত বিহীন নতুন স্রষ্টা) এবং যখন তিনি কোন কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন তখন উহার জন্য শুধু বলেন ‘হও’ আর উহা হয়ে যায়।

* বিদয়াত হলো দৃষ্টান্ত বিহীন নতুন সৃষ্টি, আর আল্লাহ হলেন বাদি বা দৃষ্টান্ত বিহীন নতুন স্রষ্টা। সংগত কারণে বিদয়াত আল্লাহর কাজ। আল্লাহর কাজ অধম হতে পরে না। সংগত কারণে আল্লাহর কাজ উত্তম বিদয়াত। সংগত কারণে আল্লাহর কাজ হিসাবে উত্তম বিদয়াত পাপকাজ হতে পারে না।

সূরাঃ ৬ আনয়াম ১০১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-

১০১।বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, আন্না ইয়াকুনু লাহু অলাদুন ওয়ালামতাকুল্লাহু সাহিবাতুন, ওয়া খালাকা কুল্লা সাইয়িন, ওয়াহুয়া বিকুল্লি সাইয়িন আলিম

- আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর বাদী (দৃষ্টান্ত বিহীন নতুন স্রষ্টা), তাঁর সন্তান হবে কিরূপে? তাঁর তো কোন স্ত্রী নেই। তিনিই তো সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবগত।

* কোনটি বিদয়াত তা’ তিনি জানেন যিনি প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত। যে সকল পুরাতন বিষয়ে অবগত নয় সে কি করে বলে কোনটা বিদয়াত বা নতুন? এটা বিদয়াত, সেটা বিদয়াত বলে যারা চিৎকার দেয় খোঁজ নিলে জানা যাবে তারা্ আসলে অনেক পুরাতন বিষয় সম্পর্কে জানে না বলে পুরাতনকেই নতুন বা বিদয়াত বলে চিৎকার করে মানুষকে ভুল পথ দেখায়। যেমন মীলাদ বা জন্মের আলোচনা স্বয়ং আল্লাহ করেছেন। যেমন কোরআনে হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত ইসমাঈল (আ.), হযরত মুসা (আ.), হযরত ইয়াহইয়া (আ.), হযরত মরিয়ম (আ.) ও হযরত ঈসার (আ.) জন্মের আলোচনা আছে। তাহলে মিথ্যাবাদীরা মীলাদ বা জন্মের আলোচনাকে বিদয়াত বলে কেমন করে? মীলাদ বা জন্মের আলোচনা কোরআনে থাকায় কোরআন তেলাওয়াতের সাথেই তো এটা হয়ে যায়। তাহলে মীলাদ থেকে কেউ বিভাবে দূরে থাকবে?

# কোনটি বিদয়াত এবং কোনটি বিদয়াত নয়। কোনটি উত্তম বিদয়াত এবং কোনটি অধম বিদয়াত। কোন বিদয়াতে সাওয়াব ও কোন বিদয়াতে পাপ সে রায় দিবে আহলে যিকর (আলেম)।

# আলেম

সূরাঃ ১৬ নাহল, ৪৩ ও ৪৪ নং আয়তের অনুবাদ

৪৩।তোমার পূর্বে আমরা পুরুষ ভিন্ন (বার্তা বাহক) প্রেরণ করিনি। আমরা তাদের প্রতি ওহি প্রেরণ করেছিলাম।অতএব আহলে যিকরকে জিজ্ঞাস কর, যদি তোমরা না জান।

* আলেমগণকে আহলে যিকির বলে। কোন কিছু না জানলে তাঁদের কাছ থেকে জানা ফরজ।

সহিহ আবু দাউদ, ৩৬০২ নং হাদিসের (জ্ঞান-বিজ্ঞান অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৬০২। কাছীর ইবনে কায়েস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি দামেশকের মসজিদে আবু দারদার (রা.) কাছে বসে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলে, হে আবু দারদা (রা.) আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) শহর মদীনা থেকে আপনার কাছে একটা হাদিস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি আপনি উক্ত হাদিসটি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। এছাড়া আর কোন কারণে আমি এখানে আসিনি। তখন আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোন পথ অতিক্রম করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথ অতিক্রম করান। আর ফেরেশতারা ত্বলেবে এলেম বা জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেন এবং আলেমের জন্য আসমান ও জমিনের সব কিছুই ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানিতে বসবাসকারী মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আবেদের উপর আলেমের ফজিলত এরূপ যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদের ফজিলত সকল তারকা রাজির উপর। আর আলেমগণ হলেন নবিদের ওয়ারিছ এবং নবিগণ দীনার ও দিরহাম মীরাছ হিসেবে রেখে যান না; বরং তাঁরা রেখে যান ইলম।কাজেই যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করল সে প্রচুর সম্পদের মালিক হলো।

* কোন কিছু না জানলে আল্লাহ আলেমগণের নিকট থেকে সেই জিনিস জেনে নেওয়া ফরজ করায় এবং আলেমগণ নবিগণের ওয়ারিশ হওয়ায় তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।সংগত কারণে কতিপয় আলেম কোন কিছুকে বিদয়াত বলে চিৎকার দিলেও তা’ বিদয়াত হিসাবে সাব্যস্ত হবে না।

সূরাঃ ৪৬ আহকাফ ৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-

৯। কুল মা কুনতু বিদআম মিনার রাছুলি ওয়ামা আদরী মা ইয়াফআলু বি ওয়ালাকুম, ইন আত্তাবিউ ইল্লা মা ইউহা ইলাইয়া ওয়ামা আনা ইল্লা নাযিরুম মুবিন

-বল, আমি কোন বিদঈ (দৃষ্টান্ত বিহীন নতুন) রাসূল নই। আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে, আমি আমার প্রতি যা ওহী করা হয় কেবল তারই অনুসরন করি। আর আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।

* বিদঈ রাসূল হলো সেই সব মিথ্যাবাদী যাদের নবি বা রাসূল হওয়ার কোন প্রমাণ নেই। এমন ত্রিশ জন মিথ্যাবাদী আসবে বলে মহানবি (সা.) বলেছেন। তাদের একজন ছিল মুসায়লামা কাজ্জাব। ইমামার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী মুসায়লামা ও তার দলকে বিনাশ করে। এসব মিথ্যাবাদীর আল্লাহর নামে মিথ্যাচার হলো জঘণ্য বিদয়াত। যা মহাপাপ।

সহিহ আবু দাউদ, ৩৫৪৮ নং হাদিসের (বিচার অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৫৪৮। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাফে (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মে সালামার (রা.) নিকট থেকে শুনেছি, যিনি মহানবি (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, দু’ ব্যক্তি মীরাছ এবং পুরাতন জিনিসের ব্যাপারে মামলা নিয়ে উপস্থিত হয়। তখন মহানবি (সা.) বলেন, আমি তোমাদের এ মোকদ্দমায় আমার ইচ্ছা অনুযায়ী সমাধান দেব, যার সম্পর্কে আমার নিকট কোন বিধান অবতীর্ণ হয়নি।

* তখনও কোরআনের সব বিধান অবতীর্ণ হয়নি বিধায় রাসূল (সা.) নিজ বিবেচনায় সমাধান দেওয়ার কথা বলেছেন। এটা উত্তম বিদয়াত।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৩১৪ নং হাদিসের (আহকাম অধ্যায়) অনুবাদ-

২৩১৪।হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছেন, বিচারক যখন ইজতিহাদ করে বিচার করে এবং তার সে ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য হবে দু’টি পুরুস্কার। আর সে যখন ইজতিহাদ করে বিচার করতে গিয়ে ভুল করে, তখন তার জন্য হবে একটি পুরুস্কার।

* ইজতিহাদ উত্তম বিদয়াত, যা দীনের জ্ঞান হাজির হওয়ার পর বাতিল হয়।

সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু, তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা’ ব্যতীত, আর যা মূর্তি ফুজার বেদির উপর বলি দেওয়া হয় তা এবং জুয়ার তীরদ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা,এ সব পাপ কাজ। আজ কাফেরগণ তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে; সুতরাং তাদেরকে ভয় করবে না, শুধু আমাকে ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম। তবে কেহ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তখন আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

* দীন পূর্ণাঙ্গ, কিন্তু দীনের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আছে কয় জনের? কিন্তু প্রয়োজন তো সারতে হবে। তখন ইজতিহাদী উত্তম বিদয়াত ছাড়া কি উপায় থাকে?

সূরাঃ ২ বাকারা, ২৮৬ নং আয়াতের অনুবাদ-

২৮৬। আল্লাহ কারোউপর এমন কোন কষ্ট দায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। হে আমাদের প্রতিপালক যদি আমরা ভুলে যাই অথবা আমাদের ত্রুটি হয় তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।হে আমাদের প্রতিপালক এভন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।আমাদের পাপ মোছন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে জয়যুক্ত কর।

* নিরুপায় ক্ষেত্রে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা নেই।

সহিহ আবু দাউদ, ৪৫৫৪ নং হাদিসের অনুবাদ-

৪৫৫৪। হজরত হাজার ইবনে হাজার(র.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা ইয়াবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) এর কাছে যাই, যাঁর সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়, ‘তাদের জন্য কোন অসিুবিধা নেই,যারা আপনার কাছে এ জন্য আসে যে আপনি তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করবেন। আপনি বলুন আমি তো তোমাদের জন্য কোন বাহন পাই না’।

রাবী বলেন, আমরা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালামকরি এবং বলি,আমরা আপনাকে দেখার জন্য, আপনার সেবার জন্য এবং আপনার কাছ থেকে কিছু সংগ্রহকরার জন্য এসেছি। তখন তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সাথে নামাজ আদায়ের পর,আমাদের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, যাতেআমাদের চোখ অশ্রু ভারাক্রান্ত হয় এবং অন্তর ভীত-সন্ত্রস্তহয়। আমাদের মধ্যে একজন বললেন,হে আল্লাহর রাসূল! মনেহচ্ছে এটা আপনার বিদায়ী ভাষণ,কাজেই আপনি আমাদেরকে আরোকিছু অসিয়ত করেন। তখন তিনি (সা.)বলেন, আমিতোমাদেরকে তাকওয়া অবলম্বনের জন্য বলছি এবং শুনা ও মানার জন্যও,যদিও তোমাদের আমির হাবশী গোলাম হয়। কেননা তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে বেঁচে থাকবে, তারা বহু মতবিরোধদেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমাদের উচিৎহবে আমার ও আমার খুলাফায়ে-রাশেদার সুন্নতের অনুসরন করা। যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী। তোমরা তাদের দৃঢ়ভাবে অনুসরন করবে।তোমরা বিদয়াতের অনুসরন করা ও অনুকরণকরা হতে দূরে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন কথাই বিদয়াত এবং প্রত্যেক বিদয়াতই পথভ্রষ্টতা।

* ‘প্রত্যেক বিদয়াতই পথভ্রষ্টতা’ কিন্তু যে বিষয়ে মহানবি (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদা যুক্ত তা’ পথভ্রষ্টতা নয়। আর তা’ হলো উত্তম বিদযাত।

সহিহ মুসলিম ২২২৯ নং হাদিসের (দানের ফজিলত)অনুবাদ-

২২২৯। হযরত মুনযির ইবনে জারির (র.) কর্তৃক তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ভোরের দিকে রাসূলুল্লাহর কাছে হাজির ছিলাম, এসময় তাঁর কাছে পাদুকা বিহীন, ব্রতহীন, গলায় চামড়ার আবা পরিহিত এবং নিজেদের তরবারী ঝুলন্ত অবস্থায় একদল লোক আগমন করে। এদের অধিকাংশ কিংবা সকলেই মুদার সম্প্রদায়ের লোক ছিল। অভাব অনটনে তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মুখমন্ডল পরিবর্তিত ও বিষণ্ন হয়ে যায়। তিনি ভিতরে প্রবেশ করেন এবং বেরিয়ে এসে বিলালকে (রা.) আযান দিতে নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রা.) আযান ও ইকামত দিলেন। নামায শেষ করে তিনি উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে আয়াতপাঠ করেন, ‘হে মানব জাতি! তোমরা নিজেদের রবকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র লোক থেকে সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের হেফাজতকারী (সূরাঃ ৪ নিসা আয়াত নং ১)’। এরপর তিনি সূরা হাসরের শেষ দিকের এ আয়াতপাঠ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতের জন্য কি সঞ্চয় করেছে সে দিকে লক্ষ্য করে(সূরাঃ ৫৯ হাসর, ১৮ নং আয়াত)’।এরপর উপস্থিত লোকদের কেউ তার দিনার, কেউ দিরহাম, কেউ কাপড়, কেউ এক সা আটা ও কেউ এক সা খেজুর দান করল। অবশেষে তিনি বললেন, অন্ততঃ এক টুকরো খেজুর হলেও নিয়ে আস। বর্ণনাকারী বলেন, আনসার সম্পদায়ের এক ব্যক্তি একটি বিরাট থলি নিয়ে আসেন। এরভারে তার হাত অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছিল কিংবা অবশ হয়ে গেল। রাবী আরো বলেন,এরপর লোকেরা সারিবদ্ধভাবে একেরপর এক দান করতে থাকলে খাদ্য ও কাপড়ের দু’টি স্তুপহয়ে যায়।রাসূলুল্লাহর চেহারা মুবারকে খাঁটি সোনার মত উজ্জ্বল ভাব প্রকাশিত হলো।এরপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন উত্তম প্রথা বা কাজের প্রজচলন করে সে তার এ কাজে সাওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা’ করবে তারাও এর বিনিময়েও সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। আর যে ব্যক্তি ইসলামের পরিপন্থী কোন খারাপ প্রথা বা কাজের প্রচলন করবে, তাকে তার এ কাজের বোঝা বহন করতে হবে। এর পর যারা তাকে অনুসরন করে এ কাজ করবে তাদের সম পরিমাণ বোঝাও তাকে বহন করতে হবে। কিন্তু এতে তাদের অপরাধ ও শাস্তি কোন অংশেই কমবে না।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২০৭ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

২০৭। আবু জুহায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের প্রচলন করে তদুনুসারে আমল করা হয়, তবে তার জন্য একাজের পুরস্কার রয়েছে এবং অন্য যারা এক কাজ করবে, তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও ঐ ব্যক্তি পাবে। অথচ তাদের পুরস্কারে কোন হ্রাস করা হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজের প্রচলন করে এবং তদনুযায়ী কাজ করা হয়, তবে এক কাজের পাপ তার হবে এবং যারা এ কাজ করবে, তাদের পাপের সমপরিমাণ গুনাহও তার হবে, অথচ এতে তাদের গুনাহের পরিমাণ কিছুতেই হ্রাস করা হবে না।

* মহানবি (সা.) উত্তম বিদয়াতকে সাওয়াবের কাজ বলেছেন।

সূরাঃ ২, বাকারা। ১০৬ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০৬। আমরা কোন আয়াত মানসুখ বা রহিত করলে অথবা ভুলে যেতে দিলে তা’হতে উত্তম বা তার সমতুল্য কোন আয়াত আমরা প্রদান করে থাকি।তুমি কি জান না যে আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।

সহিহ মুসলিম, ৬৬৯ নং হাদিসের (কিতাবুল হায়েয) অনুবাদ-

৬৬৯। হযরত আবুল আলা ইবনে শিখখীর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কোন কোন হাদিস একটি আরেকটিকে রহিত করে, যেমন কোরআনের কোন কোন আয়াত কোন কোন আয়াতকে রহিত করে।

* ‘প্রত্যেক বিদয়াতই পথভ্রষ্টতা’ এ বিধান থেকে সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২০৭ নং ও সহিহ মুসলিম ২২২৯ নং হাদিস দ্বারা ‘উত্তম বিদয়াত’ মানসুখ বা রহিত হয়ে ‘উত্তম বিদয়াত’ সাওয়াবের কাজ সাব্যস্ত হয়েছে। এটাই বুঝেছেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)।

সহিহ মুসলিম, ৪৫৮১ নং হাদিসের (কিতাবুল ইমারাহ) অনুবাদ-

৪৫৮১। হযরত ইবনে ওমর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন,আমার পিতা যখন আহত হলেন তখন আমি তাঁর কাছে গিয়ে হাজির হলাম। লোকজন তাঁর প্রশংসা করে বলল, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন! তিনি তখন বললেন, আমি আশাবাদী ও সন্ত্রস্ত। তখন লোকেরা বলল, আপনি কাউকে খলিফা মনোনীত করে যান। তখন তিনি বললেন, আমি কি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায়ই তোমাদের বোঝা বহন করব? আমার আকাংখা খিলাফতের ব্যাপারে আমার ভাগ্যে কেবল নিস্কৃতি জুটুক। আমার উপর কোন অভিযোগও অর্পিত না হোক, আর আমি লাভবানও না হই। আমি যদি কাউকে খলিফা মনোনীত করি (তবে তার দৃষ্টান্ত আছে) কেননা, আমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন তিনি [আবু বকর (রা.)] খলীফা মনোনীত করে গিয়েছেন। আর যদি আমি তোমাদের (খলীফা মনোনীত করা ছাড়াই) ছেড়ে যাই, তাহলে আমার উত্তম (অনুসরনীয়) যিনি ছিলেন [রাসূলুল্লাহ (সা.)] তোমাদের (খলীফা মনোনীত করা ছাড়াই) ছেড়ে গিয়েছেন। রাবী বলেন, তিনি যখন রাসূলুল্লাহর (সা.) এর কথা উল্লেখ করেন তখনই আমি বুঝে নেই যে, তিনি কাউকে খলীফা মনোনীত করবেন না।

* খলিফা মনোনীত করার উত্তম বিদয়াত চালু করেছেন খোলাফায়ে রাশেদার প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)।

সহিহ বোখারী ১৮৭০ নং হাদিসের (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ) অনুবাদ-

১৮৭০। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমানের সাথে এবং ছাওয়াবের আশায় (নামাযে) দাঁড়ায় তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ইবনে শেহাব বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল করলেন এবং হকুমও এ অবস্থায়ই রয়ে গেল। তারপর আবু বকর (রা.) এর সম্পূর্ণ খেলাফত আমল এবং ওমরের (রা.) খেলাফত আমলের প্রথম ভাগ এ অবস্থায়ই কেটে গেল। (এ সময়) সকলেই একা একা তারাবীহ পড়ত।ইবনে শিহাব ওরওয়াহ ইবনে জোবায়ের থেকে বর্ণনা করেছেন,আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল কারী বলেছেন, আমি রমযানের এক রাতে ওমর ইবনে খাত্তাবের সাথে মসজিদের দিকে বের হলাম। ;দেখলাম,বিভিন্ন অবস্থায় বহুলোক একা একা নামায পড়ছে।তখন হজরত ওমর (রা.) বললেন,আমার মনেহয় এদের সকলকে একজন কারীর সাথে জামাতভুক্ত করে দিলে সর্বাপেক্ষা ভাল হবে।অতঃপর তিনি তাই করার মনস্থ করলেন এবং তাদেরকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.) এর পিছনে জামাতভুক্ত করে দিলেন। এরপর আমি দ্বিতীয় রাতে আবার তাঁর সাথে নামাজে বের হলাম। দেখলাম, লোকেরা তাদের ইমামের সাথে নামাজ পড়ছে। ওমর (রা.) বললেন এটি একটি উত্তম বিদয়াত। রাতের যে অংশে লোকেরা নিদ্রা যায়, তা যে অংশে তারা ইবাদত করে তদপেক্ষা উত্তম।অর্থাৎ রাতের প্রথমভাগ অপেক্ষা শেষ ভাগের নামায অধিক উত্তম। এটিই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন।

* ঘোষণা দিয়ে উত্তম বিদয়াত চালু করেছেন খোলাফায়ে রাশেদার দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)।

সহিহ বোখারী ৮৬৩ নং হাদিসের (কিতাবুল জুমুয়া) অনুবাদ-

৮৬৩। হজরত সায়েব ইবনে ইয়াযিদ (রা.)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.), আবু বকর (রা.) ও ওমরের (রা.) সময়ে ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন তখন প্রথম আযান দেয়া হত। অনন্তর যখন ওসমানের (রা.) খেলাফতের সময় আসে এবং লোকসংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায় তখন ওসমান (রা.) জুমুয়ার দিনে তৃতীয় আযানের নির্দেশ দেন এবং জাওরা হতে আযান দেয়া হতে থাকে। তারপর এ রেওয়াজ চলতে থাকে।

* খোলাফায়ে রাশেদার তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রা.) জুমুয়ার নামাজে একটি বাড়তি আযানের উত্তম বিদয়াত চালু করেন।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।

* উম্মতের সর্ববৃহৎ দল যে বিদয়াতের সাথে সম্পৃক্ত সে বিদয়াত উত্তম বিদয়াত।

সহিহ মুসলিম, ৮৩ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-

৮৩। হযরত তারিক ইবনে শিহাব বলেন, মারওয়ান ঈদের দিন নামায়ের পূর্বে খুতবা দেওেয়ার বিদয়াতী প্রথার প্রচলন করেন। এসময় এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, ‘খুতবার আগে নামায সম্পন্ন করুন’।মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিবর্তন করা হলো। সাথে সাথে আবু সাঈদ খুদরী (রা.) উঠে বলেন, এ ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গর্হিত কাজহতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে পরিবর্তন করে, তার সে ক্ষমতা না থাকলে মুখ দ্বারা এর পরিবর্তন করবে। আর সে সাধ্যও না থাকলে,তখন অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে, এক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে ঈমানের দূর্বলতম পরিচয়।

* মারওয়ানের কাজ ছিল অধম বিদয়াত। কারণ এতে কোন কল্যাণ ছিল না।

# ইসলামের অতিজ্ঞানী খারেজীরা উত্তম বিদয়াতের বিরোধীতা করে।

# খারেজী

সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৪১০৩ নং হাদিসের (হত্যা বৈধ হওয়া সম্পর্কে অধ্যায়) অনুবাদ-

৪১০৩।হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রা.) রাসূলুল্লাহর (সা.) নিকট ইয়ামন থেকে কিছু মাটি মিশানো স্বর্ণ পাঠান, তিনি তা’ আকাবা ইবনে হাবিস হানযালী (রা.), মুজাশি গোত্রের এক ব্যক্তি, উয়ায়না ইবনে বাদর আল ফাজারী, আলকামা ইবনে উছালা আমিরী এবং বনু কিলাবের এক ব্যক্তির মধ্যে বন্টন করে দেন। এরপর তিনি যায়দ খাইলতায়ী এবং নাবহান গোত্রেরএক ব্যক্তিকে দেন।এতে কুরাইশ এবং আনসারী লোক ক্রোধান্বিত হয়। তারা বলে আপনি নিজেদের নেতাদের দিলেন, আমাদের দিলেন না। তিনি বলেন যেহেতু তারা নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাদের মন রক্ষার্থে দিলাম। আর তোমরাতো পূর্বে মুসলিম হয়েছ। এমন সময় এক ব্যক্তি আসলো যার চোখ কোটরাগত এবং গলা ফুলা ছিল এবং ঘন দাড়ি বিশিষ্ট মাথা মুড়ানো ছিল। সে বলল হে মোহাম্মদ (সা.)আল্লাহকে ভয় কর। তিনি বললেন, যদি আমিই আল্লাহর নাফরমানি করি, তবে কে আর তাঁর অনুসরন করবে? আল্লাহ তা’আলা আমাকে বিশ্ববাসীর মধ্যে আমির রূপে সৃষ্টি করেছেন, আর তোমরা আমার মর্যাদা রক্ষা কর না। এমন সময় লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে হত্যা করতে নিষেধ করেন। যখন সে ব্যক্তি চলে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তার বংশে এমন কিছু লোক জন্ম নিবে, তারা কোরআন পড়বে, কিন্তু কোরআন তাদের গলার নীচে নামবে না, তারা তাদের দীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর জন্তুর শরীর ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা মুসলিমদেরকে হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজকদের ছেড়ে দেবে। আমি যদি তাদেরকে পাই, তবে তাদেরকে এমনভাবে হত্যা করব, যেমন আদ জাতীয় লোকদেরকে হত্যা করা হয়েছে।

সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৪১০৪ নং হাদিসের (হত্যা বৈধ হওয়া সম্পর্কে অধ্যায়) অনুবাদ-

৪১০৪। হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, শেষ যুগে এমন কিছু লোক জন্ম নিবে যারা হবে অল্প বয়স্ক এবং জ্ঞানহীন। প্রকাশ্যে তারা উত্তম কথা বলবে, কিন্তু ঈমান তাদের গলার নীচে যাবে না। তারা দীন হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে,যেমন তীর লক্ষ্য ভেদ করে যায়। তোমরা তাদেরকে পেলে তাদেরকে হত্যা করবে। কেননা, তাদের হত্যা করা হলে কিয়ামতের দিন এর প্রতিদান পাওয়া যাবে।

সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৪১০৫ নং হাদিসের (হত্যা বৈধ হওয়া সম্পর্কে অধ্যায়) অনুবাদ-

৪১০৫। হযরত শরীক ইবনে শিহাব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার আকাঙ্খা ছিল যে, আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) কোন সাহাবীর সাথে সাক্ষাত করবো এবং খারেজীদের ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাস করবো। ঘটনা চক্রে ঈদের দিন আবু বরযা আসলামীকে (রা.) তাঁর কয়েকজন সাথীর সাথে দেখলাম। আমি জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কি খারেজীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহর (সা.) নিকট কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি নিজের কানে শুনেছি, চক্ষে দেখেছি। একদা রাসূলুল্লাহর (সা.) নিকট কিছু মাল আসে। তিনি তাঁর ডান দিকের এবং বাম দিকের লোকদের মধ্যে বন্টন করে দেন এবং যারা তাঁর পিছনে ছিল, তিনি তাদেরকে কিছুই দিলেন না। তখন তাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে মোহাম্মদ (সা.) আপনি ইনসাফের সাথে বন্টন করেননি। সে ছিল কাল রং বিশিষ্ট। মুড়ানো মাথা এবং সাদা কাপড় পরিহিত। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) অতিশয় রাগান্বিত হয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমরা কাউকে আমার পর আমার থেকে অধিক ইনসাফকারী দেখতে পাবে না। অতঃপর তিনি বললেন, শেষ যুগে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব হবে, মনে হয় ঐ ব্যক্তি ঐ সকল লোকের মধ্যে হবে। তারা কোরআন তেলাওয়াত করবে, কিন্তু কোরআন তাদের গলার নীচে ঢুকবে না।তারা ইসলাম হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার হতে বের হয়ে যায়। তাদের চিহ্ন হলো তাদের মাথা মুড়ানো থাকবে। তারা এভাবে প্রকাশ পেতে থাকবে এবং তাদের শেষ দলটি দাজ্জালের সাথে বের হবে। যদি তোমরা তাদের পাও, তবে তাদেরকে হত্যা করবে। কেননা, তারা সৃষ্টির মধ্যে সবচাইতে অধম।

* খারেজীরা দীন বিষয়ে অত্যাধীক কড়াকড়ি করে।সেজন্য তারা মহানবিরও (সা.) ভুল ধরেছে। তারা খোলাফায়ে রাশেদার চতুর্থ খলিফা হযরত আলীকে (আ.) কাফির ফতোয় দিয়ে হত্যা করে ফেলেছে। যিনি রাজধানী মদীনা থেকে কুফায় স্থানান্তরের উত্তম বিদয়াতে যুক্ত ছিলেন। প্রখম উমাইয়া খলিফা হযরত মুয়াবিয়া (রা.) রাজধানী দামেস্কে স্থাপন করেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) রাজধানী মক্কায় স্থাপন করেন। তাঁরা সুন্নত হিসাবে রাজধানী মদীনায় বজায় রাখেননি।

# খারেজী মতে কবিরা গুনাহে কেউ কাফির সাব্যস্ত হয়। সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মতে কবিরা গুনাহ ঈমান সংক্রান্ত হলে কাফির হয়, তবে আমল সংক্রান্ত হলে ফাসিক হয়।

সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৪৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

৪৪। নিশ্চয়ই আমরা তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম; তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো। নবিগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল তারা ইয়াহুদীদিগকে তদনুসারে বিধান দিত, আরো বিধান দিত রব্বানীগণ, এবং বিদ্বানগণ। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল। আর তারা ছিল উহার সাক্ষী।সুতরাং মানুষকে ভয় করবে না। আমাকেই ভয় কর। আর আমার আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করবে না। আল্লাহ যা নাজিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা হুকুম প্রদান করে না তারাই কাফির।

সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৪৫ নং আয়াতের অনুবাদ-

৪৫। আমরা তাদের জন্য তাতে বিধান দিয়ে ছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম। অতঃপর কেহ উহা ক্ষমা করলে উহাতে তারই পাপ মোছন হবে। আল্লাহ যা নাজিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা হুকুম প্রদান করে না তারাই জালিম।

সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৪৬ ও ৪৭ নং আয়াতের অনুবাদ-

৪৬। মারইয়াম পুত্র ঈসাকে তার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে তাদের পশ্চাতে প্রেরণ করে ছিলাম। আর তারপূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে এবং মুত্তাকীদের জন্য পথের নির্দেশ ও উপদেশরূপে তাকে ইঞ্জিল দিয়ে ছিলাম। তাতে ছিল পথের নির্দেশ ও আলো।

৪৭।ইঞ্জিল অনুসারীগণ যেন আল্লাহ উহাতে যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ যা নাজিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা হুকুম প্রদান করে না তারাই ফাসিক।

* আল্লাহ যা নাজিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা হুকুম প্রদান করে না তারা কাফির, জালিম ও ফাসিক। কিন্তু খারেজী মতে তারা কাফির।

# খারেজীদের চারটি দল ১। ইবাদী ২। সালাফী ৩। আহলে হাদীস ৪। আহলে কোরআন। ইবাদীরা কবিরা গুনাহ বিষয়ে কড়াকড়ি করে। আহলে কোরআন কোরআন বিষয়ে কড়াকড়ি করে। সালাফী সালেহীন বিষয়ে কড়াকড়ি করে। আহলে হাদিস হাদিস বিষয়ে কড়াকড়ি করে।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-

৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের মধ্যে আমির।কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে বিরোধ দেখাদিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসুলের নিকট। ওটা উত্তম এবং পরিনামে ভাল।

সূরাঃ ৪ নিসা, ৮০ নং আয়াতের অনুবাদ-

৮০। যে লোক রাসূলের অনুসরণ করে নিশ্চয়ই সে আল্লাহরই অনুসরণ করে থাকে। আর যে ফিরে যায় আমি তার জন্য তোমাকে রক্ষকরূপে প্রেরণ করিনি।

সহিহ মুসলিম, ৪৬১৪ নং হাদিসের (কিতাবুল ইমারাহ) অনুবাদ-

৪৬১৪। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবি করিম (সা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে ব্যক্তি আমিরের আনুগত্য করে সে আমারই আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমিরের অবাধ্যতা করল সে আমারই অবাধ্যতা করল।

সহিহ মুসলিম, ৪৪৫৬ নং হাদিসের (কিতাবুল জিহাদ) অনুবাদ-

৪৪৫৬। হযরত ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার আমিরের মধ্যে এমন কোন ব্যাপার দেখে, যা সে অপছন্দকরে তবে সে যেন ধৈর্য্য অবলম্বন করে। কেননা, যে লোক জামায়াত থেকে কিঞ্চিত পরিমাণ সরে গেল এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল সে জাহেলিয়াতের মুত্যুই বরণ করল।

* ইসলামে মান্যতার বিষয় ১। আল্লাহ ২। রাসূল (সা.) ৩। আমির। তাঁদের মান্যতা কেমন কি হবে সেটা বলবেন আলেম। কিন্তু তাদের কতিপয় ১। মুনাফিক ২। অহংকারী ৩। রিয়াকার ৪। মিথ্যাবাদী।

# মোনাফেক

সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০১। মরুবসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে জান না। আমরা তাদের সম্পর্কে জানি।আমারা সিগ্র তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব। এরপর তারা মহা শাস্তির দিকে যাত্রা করবে।

* মোনাফেক শাস্তিযোগ্য অপরাধী।

# অহংকারী

সূরাঃ ২ বাকারা, ৩৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩৪। আর যখন আমি ফেরেশতাগণকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিশ ছাড়া সবাই সিজদা করেছিল; সে অমান্য করল ও অহংকার করল।সুতরাং সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়েগেল।

* অহংকারী শয়তানের দলের লোক।

# রিয়াকার

সূরাঃ ১০৭ মাউন, ৪ নং থেকে ৭ নং আয়াতের অনুবাদ-

৪। অতঃপর দূর্ভোগ সে সালাত আদায়কারীদের

৫। যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন

৬। যারা রিয়া করে বা লোকদেখানোর জন্য তা’ করে।

* রিয়াকারের ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না।

# মিথ্যাবাদী

সূরাঃ ৮৩ মুতাফফিফীন, ১০ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০। সেই দিন দুর্ভোগ হবে মিথ্যাবাদীদের।

* মিথ্যাবাদীদের জন্য দুর্ভোগ।

# সংগত কারণে আলেমগণের সর্ববৃহৎ দলের রায় সঠিক হবে। তারা হানাফী। তাদের রায় বিদযাতে হাসানা বা উত্তম বিদয়াত সাওয়াবের কাজ। সংগত কারণে কতিপয় খারেজী সে যত বড় আলেম হোক তার কথায় উত্তম বিদয়াতকে গুনাহের কাজ মনে করার কোন কারণ নেই। এসব শয়তান কথা বলতে আসলে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে।

# কোন পথভ্রষ্ট দলের সাথে কতিপয় আলেমকে দেখে প্রতারিত হওয়া কোন কাজের কথা নয়, মানতে হবে আলেমগণের সর্ববৃহৎ দল। আর তাঁরা হলেন ইমাম আলেম।

সহিহ তিরমিযী, ১৯৮ নং হাদিসের (নামাজ অধ্যায়) অনুবাদ-

১৯৮। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইমাম হচ্ছে যামিন এবং মোয়াজ্জিন হলো আমানতদার। হে আল্লাহ! ইমামকে সৎপথ দেখাও এবং মুয়াযযিনকে ক্ষমা কর।

* মহানবি (সা.) আল্লাহর দরবারে ইমামদের সৎপথ প্রাপ্তির দোয়া করেছেন। তাঁর দোয়া অনুযায়ী বেশী সংখ্যক ইমাম সৎপথ পাবেন। কারণ তাঁর দোয়া ইমামগণের অধিকাংশের ক্ষেত্রে নামঞ্জুর হওয়ার কথা নয়। ইমাম আলেমগণের সর্ব বৃহৎ দলের রায় বিদয়াতে হাসানা বা উত্তম বিদয়াত সাওয়াবের কাজ। মীলাদকেও তাঁরা সাওয়াবের কাজ হিসাবে করেন। আর মুয়াযযিনগণ মাইকে আযান দিয়ে থাকেন। মহানবি (সা.) যাদেরকে ক্ষমাকরার দোয়া করেছেন। সংগত কারণে দীনের কাজে মাইকের বিরোধীতাও সঠিক কাজ  নয়।

Post a Comment

0 Comments