Ad

মানুষের মাঝে সবচাইতে উত্তম কারা




🔘(১) সমস্ত জিন ও মানুষের মাঝে সবচাইতে উত্তম হচ্ছে যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে। মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে তারাই হচ্ছে সৃষ্টির মাঝে সবচাইতে উত্তম।” সুরা আল-বাইয়্যিনাহঃ ৭।

🔘(২) যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, তাদের মাঝে যার তাক্বওয়া (আল্লাহ ভীতি) যত বেশি, অর্থাৎ যারা পাপ কাজ যত কম করে ও নেক আমল বেশি করে, আল্লাহর কাছে সে তত বেশি উত্তম। মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তোমরাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত, যে ব্যক্তি অধিক মুত্ত্বাক্বী।” সুরা আল-হুজুরাতঃ ১৩।

🔘(৩) মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কিংবা নিজে কুপ্রবৃত্তির প্ররোচনায় পাপ কাজ করে ফেলে। কিন্তু পাপ কাজ করে ফেললে যারা তোওবা করে এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নেয়, আল্লাহর কাছে এমন ব্যক্তিই হচ্ছে সবচাইতে উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে সেরা হচ্ছে তারাই, যারা তোওবাকারী।” ইবনে মাজাহঃ ৪২৫১।

🔘(৪) মুত্ত্বাক্বী ব্যক্তিদের মাঝে যারা আলেম, তাদের মর্যাদা অন্য সবার চাইতে বেশি। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় অনেক উঁচু করবেন।” সুরা মুজাদালাঃ ১১।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আলেমগণ হচ্ছে নবীদের ওয়ারিস (ঊত্তরাধিকারী)।” আবু দাউদঃ ৩৬৪১, দারেমীঃ ৩৪২, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী রাহি’মাহুল্লাহ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবেদ (ইবাদতকারী ব্যক্তির) উপরে ঠিক সেইরূপ, যেরূপ আমার মর্যাদা তোমাদের উপর।” তিরমিযী।

🔘(৫) পূত-পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ, যার অন্তরে কোন গুনাহ নাই, এমন মানুষেরা মহান আল্লাহর কাছে সবচাইতে উত্তম। রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো, মানুষের মাঝে কারা সবচাইতে উত্তম?” তিনি বললেন, “মানুষের মাঝে সবচাইতে উত্তম হচ্ছে যাদের জিহবা সত্যভাষী এবং যাদের অন্তর হচ্ছে ‘মাখমুন’ (বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী)।” সাহাবীরা বললেন, “(ইয়া রাসুলুল্লাহ!) সত্যভাষী মানুষ তো আমরা চিনি, কিন্তু মাখমুন (বিশুদ্ধ অন্তর) বলতে কি বুঝায়?” তিনি বললেন, “মাখমুন (বিশুদ্ধ অন্তর) হচ্ছে পূত-পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ; যার অন্তরে কোন গুনাহ নাই, নাই কোন দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মহমিকা ও কপটতা।” সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৪২১৬, শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

🔘(৬) যে ব্যক্তি নিজে ক্বুরআনুল কারীম শিক্ষা করে এবং অন্যাদেরকে শিক্ষা দেয়, এমন মানুষেরা মহান আল্লাহর কাছে সবচাইতে উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচাইতে উত্তম, যে নিজে ক্বুরআন শিখে এবং অন্যদেরকে ক্বুরআন শিক্ষা দেয়।” সহীহ বুখারীঃ ৫০২৭।

🔘(৭) মানুষের মাঝে যে ব্যক্তি সবচাইতে বেশি অন্যদেরকে সাহায্য বা উপকার করে, এমন মানুষেরা মহান আল্লাহর কাছে সবচাইতে উত্তম। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! মানুষের মাঝে আল্লাহর কাছে সবচাইতে বেশি প্রিয় কারা?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচাইতে বেশি প্রিয় হচ্ছে তারা, যারা মানুষের জন্যে সবচাইতে বেশি উপকারী ব্যক্তি।” হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আসবাহানী এবং ইবনে আবি দুনিয়া। শায়খ সাঈদ রাসলান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “হাদীসটি হাসান লি-গায়রি।”

🔘(৮) যে ব্যক্তি অন্যদেরকে ইলম শিক্ষা দেয় তার মর্যাদাঃ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতারা, আসমান-জমিনের সকল বাসিন্দা, এমনকি গর্তের মধ্যে পিঁপড়ে এবং (পানির মধ্যে) মাছ পর্যন্ত মানুষের মাঝে যারা অন্যদেরকে ই’লম শিক্ষা দেয়, তাদের জন্য মঙ্গল কামনা ও নেক দুয়া করতে থাকে।” তিরমিযীঃ ২৬৮৫, দারেমীঃ ২৮৯, হাদীসটি হাসান।

🔘(৯) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এই দুনিয়া হচ্ছে চার প্রকার মানুষের জন্য; (ক) সেই বান্দার জন্য, যাকে আল্লাহ সম্পদ ও জ্ঞান দান করেছেন। সুতরাং সে সম্পদের ব্যপারে তার রব্বকে ভয় করেছে, আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখে এবং সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহর যে হক্ক রয়েছে, সে তা আদায় করে। এই শ্রেণীর মানুষেরা মানব জাতির মধ্যে সর্বোত্তম অবস্থানে রয়েছে। (খ) সেই বান্দা, যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন; কিন্তু সম্পদ দেননি। সে হলো সঠিক নিয়তের লোক, অর্থাৎ সে বলে, “আমার যদি টাকা-পয়সা থাকতো তাহলে অমুক ব্যাক্তির (কোন সম্পদশালী দানশীল ব্যক্তির) মত কাজ করতাম।” সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব (প্রতিদান) পাবে। (প্রথম ও দ্বিতীর শ্রেণীর লোকেরা), এদের দুজনের উভয়ে সমান নেকী পাবে।” সুনানে তিরমিযী, আহমদ, হাদীসের সনদ হাসান, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ১/৯।

🔘(১০) আওয়াবীন লোকদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা দুহা বা চাশতের নামায ত্যাগ করেনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দুহার সালাত অর্থাৎ চাশতের নামায শুধুমাত্র আল্লাহর একান্ত অনুগত বান্দারাই হিফাজত করে থাকে। এটাতো আওয়াবীন (তোওবাকারীদের) নামায।” ত্বাবারানী কাবীরঃ ৭৬৮ এবং আওসাতঃ ৪০১১, ইবনু খুজাইমাঃ ১২২৪, সহীহ আত-তারগীবঃ ৬৭৩, সিলসিলা সহীহাহঃ ১৯৯৪।

আওয়াব শব্দের বহুবচন হচ্ছে আওয়াবীন। আওয়াবীন হচ্ছে ঐ সমস্ত বান্দা যারা অধিক তোওবা করার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ঝুঁকে যায়, আল্লাহর কাছে নিজেকে খুবই বিনীত করে দেয়।

🔘(১১) সমগ্র মুসলিম জাতি পূর্ববর্তী সমস্ত উম্মতের চাইতে উত্তম, কারণ তারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে, সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে। মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তোমরাই শ্রেষ্ঠতম উম্মত (জাতি)। মানবমন্ডলীর জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা সৎকার্যের আদেশ দান করবে, অসৎ কাজ (করা থেকে) নিষেধ করবে, আর আল্লাহকে বিশ্বাস করবে।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১১০।

🔘(১২) যেই মুমিনের চরিত্র যত ভালো, সে তত বেশি উত্তম। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।” তিরমিযীঃ ১১৬২, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহঃ ২৮৪।

🔘(১৩) সেই ব্যক্তি উত্তম, যেই ব্যক্তি তার কাছে স্ত্রীর কাছে উত্তম। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” তিরমিযীঃ ১১৬২, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহঃ ২৮৪।

🔘(১৪) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের পিছনে রয়েছে ধৈর্য্যের যুগ। সে সময়ে যে ব্যক্তি সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবে, সে তোমাদের সময়ের ৫০ জন শহীদের সমান নেকী পাবে।” ত্বাবারানী, আল-মুজামুল কাবীরঃ ১০২৪০, শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সহীহাহ, সহীহুল জামিঃ ২২৩৪।

🔘(১৫) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত লোকদের মাঝে সর্বোত্তম প্রজন্ম হচ্ছে সাহাবীদের যুগ, এরপরে তাবেয়ীরা, এরপরে তাবে-তাবেয়ীরা। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আমার প্রজন্ম। এরপর তাদের পরে যারা। এরপর তাদের পরে যারা।” সহীহ বুখারীঃ ৩৬৫১, মুসলিমঃ ২৫৩৩।

ইমাম নববী রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্ম হচ্ছে সম্মানিত সাহাবীরা। দ্বিতীয় প্রজন্ম হচ্ছে তাবেয়ীগণ। তৃতীয় প্রজন্ম হচ্ছে তাবে-তাবেয়ীগণ।” ইমাম নববী রচিত সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থঃ ১৬/৮৫।

হাফেয ইবনে হাজার রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “হাদীসের বাণী: “এরপর তাদের পরে যারা” অর্থাৎ তাদের পরের প্রজন্ম। তারা হচ্ছেন- তাবেয়ীগণ। “এরপর তাদের পরে যারা”। তারা হচ্ছেন তাবে-তাবেয়ীগণ।” ফাতহুল বারীঃ ৭/৬।

Post a Comment

0 Comments