আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেলে অথবা নিজেদের প্রতি যুলম করে বসে; পরক্ষণেই আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বারবার করে না।” [৩:১৩৫]
— 'জেনেশুনে বারবার করে না' - এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর (রহ) বলেছেন । কি বলেছেন? এটা দিয়ে বুঝানো হচ্ছে- তাদের কথা, যারা গুনাহ করে সে গুনাহের মধ্যেই পড়ে থাকে না। বরং গুনাহ থেকে তওবা করে, আর আল্লাহ্র কাছে ফিরে যায়। এরপর যদি আবার গুনাহ করে, আবার আল্লাহ্র কাছে ফিরে যায়।
— হ্যাঁ সত্যি। শুধু তাই না, রাসূল (সা) অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন, যার দ্বারা প্রমাণিত হয়, এক গুনাহ বারবার করে ফেললে আল্লাহ্ ক্ষমা করেন।
রাসূল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “আমার এক বান্দা গুনাহ্ করে আর তারপর বলে, 'হে আল্লাহ্! আমার গুনাহ মাফ করে দিন।’ তারপর আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা গুনাহ্ করেছে আর এরপর বুঝতে পেরেছে, তার এক রব রয়েছেন যিনি গুনাহের জন্য ক্ষমা করতে পারেন, আবার শাস্তিও দিতে পারেন।’ সে পুনরায় গুনাহ করে আর বলে, ‘হে আমার রব! আমার গুনাহ মাফ করে দিন।’ এরপর আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা গুনাহ্ করেছে আর তারপর বুঝতে পেরেছে, তার এক রব রয়েছেন যিনি গুনাহের জন্য ক্ষমা করতে পারেন, আবার শাস্তিও দিতে পারেন।’ সে আবারো গুনাহ করে আর বলে, ‘হে আমার রব! আমার গুনাহ মাফ করে দিন।’ তারপর আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা গুনাহ্ করেছে আর এরপর বুঝতে পেরেছে, তার এক রব রয়েছেন যিনি গুনাহের জন্য ক্ষমা করতে পারেন, আবার তার বিচারও করতে পারেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। তার যা ইচ্ছা সে তা করুক।”(বুখারি)
ইমাম নববী এই হাদীসটি তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে এনেছেন 'বারবার একই গুনাহ করলেও সে গুনাহের তওবা গ্রহণ করা হয়'- এই শিরোনামে। তিনি ব্যাখ্যায় লিখেছেন, “এই হাদিস আমাদের পরিষ্কারভাবে জানায় যে, যদি একটি গুনাহ একশোবার করা হয়, হাজারবারও করা হয়, আর প্রত্যেকবার যদি তওবা করা হয়, তার তওবা গ্রহণ করা হবে। তার গুনাহ মুছে দেয়া হবে।”
সুবহানাল্লাহ........
আরো হাদিস রয়েছে। এক লোক একবার রাসূল (সা) এর কাছে এসে বলল, “হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি পাপ করেছি।”
রাসূল (সা) বললেন, “তওবা করো।”
— আমি তওবা করেছি তারপর আবার আমার দ্বারা আবার পাপ হয়ে গেছে।
— আবার তওবা করো।
— আমি পুনরায় পাপ করে ফেলেছি।
— আবার তওবা করে ফেলো।
— কিন্তু আবার পাপ করেছি।
রাসূল (সা) তখন বললেন, “তুমি তওবা করতেই থাকো। শয়তান একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়বে।” (ইবনে কাসির)
— বাহ! মনটা খুশীতে ভরে গেলো।
— এতো খুশী হবার কারণ নেই। এটা মনে করো না, আল্লাহ্ তা'আলা গুনাহ করাকে পছন্দ করেন। তিনি মোটেও গুনাহকে পছন্দ করেন না। তাই তো আমরা যাতে গুনাহ না করি এ জন্যে শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু তিনি এটাও চান না যে, তাঁর বান্দারা তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ুক। তিনি এটা পছন্দ করেন যে, গুনাহগাররা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে, তিনি ক্ষমা করে দিবেন।
“আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।” [১২:৮৭]
এ কারণেই রাসূল (সা) বলেছেন, “যদি তোমরা এমনভাবে গুনাহ করতে থাকো, যে তোমাদের গুনাহ আসমান ছুয়ে যায়, আর তারপর তওবা করো। (তবুও) তোমাদের তওবা কবুল করা হবে।” (ইবনে মাজাহ)
— কিভাবে তওবা করব?
— ইমাম নববী (রহ) তওবার তিনটি শর্তের কথা বলেছেন। “যে গুনাহের জন্য তওবা করা হচ্ছে সেটা পুরোপুরি ছেড়ে দেয়া, গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, আবার গুনাহটি না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। তওবা করার সময়ও রয়েছে। মৃত্যু এসে গেছে এ অবস্থায় তওবা করলে সে তওবা কবুল হয় না।" [তিরমিযী, আলবানী (রহ.) এর মতে সহীহ]
— কখন মৃত্যু আসবে তা তো জানা নেই।
— হ্যাঁ, তাই তওবা কালকে করব এই কথা বলারও কোন মানে নেই। তওবা এখনই করতে হবে। এখনই মানে এখনই। ইন শা আল্লাহ্, আল্লাহ্ তা'আলা ক্ষমা করবেন।
0 Comments