Ad

বিতর নামাজে দোয়া কুনুত পড়া কি ওয়াজিব? মুখস্থ না থাকলে কি পড়বো? বিতরের সঠিক দুয়া কুনুত কোনটি?



আলহামদুলিল্লাহ।

১. বিতিরের নামাযে কোন একটি কাগজ কিংবা পুস্তিকা থেকে দেখে দেখে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে কোন অসুবিধা নেই; যাতে করে আপনি দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন। মুখস্থ হয়ে গেলে আর বই দেখা লাগবে না; আপনি মুখস্থ থেকে দোয়া করতে পারবেন; যেমন যে ব্যক্তির কুরআনের বেশি কিছু মুখস্থ নেই নফল নামাযে তার জন্য কুরআন মাজিদ দেখে পড়া জায়েয আছে।

________________

শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: তারাবীর নামাযে কুরআন মাজিদ দেখে পড়ার হুকুম কি? এবং এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর দলিল কি?

উত্তরে তিনি বলেন: রমযানে কিয়ামুল লাইলের নামাযে কুরআন মাজিদ দেখে পড়তে কোন বাধা নেই। কারণ এতে করে মুসল্লিদেরকে সম্পূর্ণ কুরআন শরিফ শুনানো যেতে পারে। এবং যেহেতু কুরআন-সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে নামাযে কুরআন তেলাওয়াতের বিধান সাব্যস্ত হয়েছে; যা মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) দেখে পড়া ও মুখস্থ থেকে পড়া উভয়টিকে অন্তর্ভূক্ত করে। আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে,
তিনি তাঁর আযাদকৃত দাস যাকওয়ানকে কিয়ামে রমযানে তাঁর ইমামতি করার নির্দেশ দিতেন এবং সে মুসহাফ দেখে দেখে কুরআন পড়ত। [ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে এ উক্তিটি নিশ্চয়তাজ্ঞাপক ভাষায় সংকলন করেছেন]

[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৫)]
______________

২. বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোন দোয়াও করতে পারেন এবং হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কুরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে এমন কিছু আয়াত পড়েন সেটাও জায়েয আছে।
ইমাম নববী বলেন: জেনে রাখুন, অগ্রগণ্য মাযহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যাবে। তবে, হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম। [ইমাম নববীর ‘আল-আযকার, পৃষ্ঠা-৫০]

৩. প্রশ্নকারী ভাই যা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি দোয়ায়ে কুনুতের পরিবর্তে কুরআন পড়তেন নিঃসন্দেহে এটা করা ঠিক হয়নি। কারণ কুনুতের উদ্দেশ্য হচ্ছে- দোয়া করা। তাই যেসব আয়াতে দোয়া আছে সেসব আয়াত পড়া ও সেগুলো দিয়ে কুনুত করা জায়েয হবে। যেমন ধরুন আল্লাহ তাআলার বাণী:
{رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ } [آل عمران: 8]
(অনুবাদ: হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।) [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮]

৪. প্রশ্নকারী ভাই উল্লেখ করেছেন যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ফরয; এ কথা সহিহ নয়। বরং দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। তাই মুসল্লি যদি দোয়ায়ে কুনুত নাও পড়েন নামায সহিহ হবে।

শাইখ বিন বায (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল- যে ব্যক্তি বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে আর ছেড়েও দেয়,এমন আমল কি সলফে সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে?

উত্তরে তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি পালন করা সুন্নত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন বিন আলী (রাঃ) কে বিতিরের নামাযের ‘দোয়ায়ে কুনুত’ শিখাতেন। তিনি দোয়ায়ে কুনুত কখনও কখনও বাদ দেয়া কিংবা নিয়মিত পড়া কোন নির্দেশ দেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, উভয়টি করা জায়েয। উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি যখন মসজিদে নববীতে সাহাবীদের ইমামতি করতেন তখন তিনি কোন কোন রাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়তেন না; সম্ভবত তিনি এটা এ জন্য করতেন যাতে করে মানুষ জানতে পারে যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব নয়।

রমযান মাসে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার হুকুম কি? দোয়ায়ে কুনুত বাদ দেয়া কি জায়েয?

জবাবে তিনি বলেন: বিতির নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। যদি কখনও কখনও বাদ দেয় এতে কোন অসুবিধা নেই।

আল্লাহই তাওফিকদাতা।

[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৯)]

#বিতরের সঠিক দুয়া কুনুত কোনটি?
==========================
বিতর নামাযে দুআ কুনুত বাধ্যতামূলক নয়। বরং তা বিতর নামাযের মতই সুন্নাত। দেখুনঃ আবু দাউদ, হাদীছ নং- ১৪২৫, তিরমিজী হাদীছ নং- ৪৬৪। (আল্লাহই ভাল জানেন।)

না জানলে শিখে নিবেন, এত সুন্দর একটি দুয়া বাদ দেয়া উচিত না।

বিতর সালাতে দুআ কুনুতঃ
اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، إنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَ لاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ، وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ-

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদায়িত , ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিকলি ফীমা ‘আ‘ত্বাইত, ওয়া ক্বিনী শাররা মা ক্বাযাইত; ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়া লা ইয়ুক্বযা ‘আলাইক, ইন্নাহূ লা ইয়াযিল্লু মাঁও ওয়া-লাইত, ওয়া লা ইয়া‘ইয্ঝু মান্ ‘আ-দাইত, তাবা-রকতা রববানা ওয়া তা‘আ-লাইত, ওয়া সাল্লাল্লা-হু ‘আলান্ নাবী’।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও। যাদেরকে তুমি মাফ করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে মাফ করে দাও। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যে ফায়সালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হ’তে আমাকে বাঁচাও। কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হয় না। আর তুমি যার সাথে দুশমনী কর, সে কোনদিন সম্মানিত হ’তে পারে না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ। আল্লাহ তাঁর নবীর উপরে রহমত বর্ষণ করুন’।

[সুনানু আরবা‘আহ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৭৩ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ইরওয়া হা/৪২৯, ২/১৭২।]

Post a Comment

0 Comments