Ad

রিযিক বাড়ে যে ১৪টি আমলে!





মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু, এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়, যখন তিনি মায়ের পেটে শিশু অবস্থায় থাকেন তখনই। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে রিযিকের জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহের চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।
:
:
আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
.
“তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর দেওয়া রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটেই তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।”
[সুরা আল-মুলকঃ ১৫]
:
:
• আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
:
____________
.
প্রথম আমল- তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা
_
.
আল্লাহর ভয় তথা তাক্বওয়া অবলম্বন করা, অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করা এবং হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
:
:
আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন-
.
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দিবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।” [সুরা আত-তালাকঃ ২-৩]
:
:
সুতরাং, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে এবং তাঁর আনুগত্য করবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয়, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনের চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত উপার্জন বর্জনের মধ্য দিয়ে।
:
____________
.
দ্বিতীয় আমল- তাওবা ও ইস্তেগফার করা
_
অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআ’লা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসুল নূহ আ’লাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,
.
“আর আমি (নূহ) বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।” [সুরা নূহঃ ১০-১২]
:
:
একটি হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আ’নহুমা কর্তৃক বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
.
“যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।”
.
[আবু দাউদঃ ১৫২০, ইবন মাজাঃ ৩৮১৯, তাবরানীঃ ৬২৯১] (শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুলাহ বলেন- “সনদগত দিক থেকে এই হাদীসটি জয়িফ বা দুর্বল, কিন্তু এই হাদীসের মর্ম ও বক্তব্য সহীহ বা সঠিক। কুরআনের আয়াত ও হাদীসে এই বক্তব্যের সমর্থন বিদ্যমান।”
.
এই হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন- “সর্বোপরি হাদীসটি তারগীব ও তারহীব তথা, মানুষকে আখিরাতের আগ্রহ বা ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। কারণ, এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহে একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়।” [ফাতাওয়া নূর আলাদ-দারবি, হাদীসের ব্যাখ্যা ও তার হুকুম।]
:
:
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
.
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-
.
“যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।”
.
[বায়হাকীঃ ৬৩৬, হাকেম, মুস্তাদরাকঃ ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত]
:
____________
..
তৃতীয় আমল- আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
_
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন-
.
আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত,
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেছেন-
.
“যে ব্যক্তি কামনা করে যে, তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, তাহলে সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।”
.
[বুখারীঃ ৫৯৮৫, মুসলিমঃ ৪৬৩৯]
:
____________
.
চতৃর্থ আমলঃ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরূদ পড়া
_
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা’ব রাদিআল্লাহু আ’নহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন-
.
আমি জিজ্ঞেস করলাম- হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দুয়ার মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব?
.
তিনি (সাঃ) বললেন- তুমি যতটুকু চাও।
কা’ব বলেন- আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ।
তিনি (সাঃ) বললেন- তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি আরো বেশি দরুদ পড়, তা তোমার জন্য উত্তম হবে।
আমি বললাম- অর্ধেক?
.
তিনি (সাঃ) বললেন- তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি আরো বেশি পড়, তা তোমার জন্য উত্তম হবে।
কা’ব বলেন- আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ?
তিনি (সাঃ) বললেন- তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে।
.
আমি বললাম- আমার দুয়ার পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব।
তিনি (সাঃ) বললেন- তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
.
[তিরমিযীঃ ২৬৪৫, হাকেম, মুস্তাদরাকঃ ৭৬৭৭। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি ‘হাসান সহীহ’]
:
____________
.
পঞ্চম আমলঃ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
_
আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি।
:
:
আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেছেন-
.
“(হে নবী!) আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।” [সুরা আস-সাবাঃ ৩৯]
:
____________
.
ষষ্ঠ আমলঃ বারবার হজ-উমরা করা
_
হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারী ব্যক্তির অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়।
:
:
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিআল্লাহু আ’নহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
.
“তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক। কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।”
.
[তিরমিযীঃ ৮১৫, নাসাঈঃ ২৬৩১]
:
____________
.
সপ্তম আমলঃ দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা
_
মুসআ’ব ইবন সা’দ রাদিআল্লাহু আ’নহু একবার যুদ্ধ জয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন- তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান।
.
সেই প্রেক্ষিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- “তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।” [সহীহ বুখারীঃ২৮৯৬]
:
____________
..
অষ্টম আমলঃ ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়া
_
আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আ’নহু কর্তৃক।
:
:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
.
"হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।”
.
[তিরমিযীঃ ২৬৫৪, মুসনাদ আহমদঃ ৮৬৮১, ইবন মাজাঃ ৪১০৭]
:
____________
.
নবম আমলঃ আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
_
আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে।
:
:
আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
.
“আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসাঃ ১০০]
.
[এই আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আ’নহুমা বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।]
:
____________
..
দশম আমলঃ আল্লাহর পথে জিহাদ
_
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্যে জিহাদ করলে এর দ্বারা সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন-
.
ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
.
“আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।”
.
[মুসনাদ আহমদঃ ৫৬৬৭; বায়হাকীঃ ১১৫৪, শুআ’বুল ঈমানঃ ১৯৭৮৩]
:
____________
.
একাদশ আমলঃ আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
_
সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন, তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর প্রশংসা করা। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়।
:
:
আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন-
.
“আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।” [সুরা ইবরাহীমঃ ৭]
.
[আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।]
:
____________
..
দ্বাদশ আমলঃ বিয়ে করা
_
আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে।
:
:
আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন-
.
“আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।” [সুরা আন-নূরঃ ৩২]
:
:
উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আ’নহুমা বলতেন-
.
“ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর, যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ, স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।”
:
____________
.
ত্রয়োদশ আমল: অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দুয়া করা
_
রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দুয়া করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তাআ’লাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান।
:
:
আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
.
“আর তোমাদের রব বলেছেন, “তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।” [সুরা আল-মু’মিনঃ ৬০]
:
:
এ আয়াতে আল্লাহ দুয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যতক্ষণ না দুয়া কবুলে জন্য কোনো বাঁধা বা অন্তরায় না হয়। যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাম পোশাক পরা ইত্যাদি এবং, দুয়া কবুলের জন্যে খানিক বিলম্বিতকরণ।
:
:
আল্লাহর কাছে এইভাবে দুয়া করা যেতে পারে-
.
“হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র, প্রশস্ত রিজিক চাই। হে সেই সত্তা, যার দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কোন কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন। আর আপনার দয়া দিয়ে আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।”
:
:
অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে।
:
:
আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আ’নহু কর্তৃক বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
.
“যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরীকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন।”
.
[তিরমিযীঃ ২৮৯৬, মুসনাদ আহমদঃ ৪২১৮]
:
____________
.
চতুর্দশ আমলঃ গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দ্বীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা
_
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দ্বীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা, এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয়, যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমান করা যায়।
.
তবে, সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবেঃ আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
.
“বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।” [সুরা আল-আ’লাঃ ১৬-১৭]
:
:
আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য, তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমনঃ হাদীসে এসেছে আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ’স রাদিআল্লাহু আ’নহুম থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
.
“সেই ব্যক্তি প্রকৃত সফল, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন।”
.
[মুসলিমঃ ২৪৭৩, তিরমিযীঃ ২৩৪৮, আহমদঃ ৬৫৭২]
:
:
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি - তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন।
আমীন!
সংগৃহীত (তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও)
শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইন শা আল্লাহ !

Post a Comment

0 Comments