Ad

মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ইসলামে কঠোর নিষিদ্ধ





মিথ্যা বলা যে কত বড় গুনাহ, তা একটি হাদিস শরিফ থেকে বোঝা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের প্রশ্ন করেছিলেন, 'সবচেয়ে বড় গুনাহ কী, আমি কি তোমাদের জানাব না?' সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা ও মাতাপিতাকে কষ্ট দেওয়া। তিনি হেলান দিয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন। এরপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান এবং মিথ্যা কথা।' (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)। কারো সম্পর্কে না জেনে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কবিরা গুনাহ। এ মিথ্যা অপবাদের জন্য ঘোষিত হয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। কেউ যদি কোনো মুমিন সতী মহিলার ওপর 'মিথ্যা অপবাদ' আরোপ করে, তবে তা প্রমাণ করতে না পারলে শরিয়তে ৮০টি বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বর্ণিত সাতটি ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহর একটি এবং তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে লানত এবং আজাবের দুঃসংবাদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, 'যে লোক কারো সম্পর্কে এমন কথা বলল, যা তার মধ্যে নেই শুধু এ উদ্দেশ্যে যে তাকে দোষী করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামে বন্দি করে রাখবেন। যতক্ষণ না তার বলা কথার সত্যতা সে প্রমাণিত করে দেবে।' (তিবরানি)। কেউ যদি অতিরঞ্জিত মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকে অথবা মিথ্যার ওপর সত্যের একটা চাদর বিছিয়ে ধোঁকার ধূম্রজাল সৃষ্টি করে, 'মিথ্যা অপবাদকারীরা' এর দ্বারা শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তোলে। অথচ মিথ্যাচার ইসলামে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এটা বড় ধরনের গুনাহ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআন মজিদে ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি ভুল কিংবা গোনাহ করে, অতঃপর কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর অপবাদ আরোপ করে, সে নিজের মাথায় বহন করে জঘন্য মিথ্যা ও প্রকাশ্য গোনাহ।' (সুরা নিসা, আয়াত ১১২)। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরিফে ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পরস্পরের গিবতে লিপ্ত না হয়। তোমাদের কেউ কি আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ কর? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১২)। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ওই লোক, যারা (আল্লাহর উদ্দেশে) ভালোবাসে ও ভালোবাসা পায়। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে অধিক ঘৃণার পাত্র ওই লোকেরা, যারা দুর্নাম রটনা করে বেড়ায় এবং ভাইদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। (এহইয়াউল উলুম, তৃতীয় খণ্ড, পঞ্চম পরিচ্ছেদ)। হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, 'উত্তম মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার কথা ও ক্ষমতা থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।' (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'আল্লাহ তায়ালা অশ্লীল বাক্যালাপকারী ও মন্দভাষী লোকদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করেন। (তিরমিজি শরিফ)। হজরত সোলায়মান (আ.)-এর অন্তিম উপদেশ আমাদের জাগ্রত করে। আল্লাহপাক ছয়টি বিষয়কে অত্যন্ত অপছন্দ করেন। যথা- ১. সার্বক্ষণিক ঊর্ধ্বমুখী দৃষ্টি। ২. মিথ্যাচারী জবান। ৩. নিরপরাধকে কষ্ট দেয় যে হাত। ৪. ওই অন্তর, যে ষড়যন্ত্র পাকায়। ৫. ওই পা, যা দ্রুত মন্দ কর্মের দিকে ছুটে যায়। ৬. ওই দুষ্ট ব্যক্তি, যে ভাইয়ে-ভাইয়ে ঝগড়া লাগিয়ে দেয় এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। দয়ার নবী (সা.) বলেছেন, মুসলমানদের কুৎসা বর্ণনা থেকে বিরত থেকো। তাদের কেউ যখন মারা যায়, তখন তার সৎ গুণাবলির কথাই শুধু আলোচনা করো। (তিবরানি)। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, তোমরা জিহ্বাকে সংযত রাখো এবং বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ো না। যখন তোমার দ্বারা কোনো প্রকার ভুল-ভ্রান্তি ও গুনাহ সংঘটিত হয়, তখন আল্লাহর কাছে ক্রন্দন করো। কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে, যার অশ্লীলতা ও রূঢ় আচরণে মানুষ তাকে এড়িয়ে চলত। (আল-হাদিস)। চোগলখুরি অর্থ- যারা এক স্থানে এক রকম কথা, আর অন্য স্থানে আরেক রকম কথা বলে অশান্তি সৃষ্টি করে। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, যারা চোগলখোর তারা কখনো বেহেশতে যাবে না। (বোখারি, মুসলিম)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আল কোরআনে বর্ণনা করেন (আপনি তার আনুগত্য করবেন না), 'যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে ফেরে।' (সুরা আল-কালাম, আয়াত ১১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, আল্লাহর জিকির ছাড়া বেশি কথা বলো না। কেননা, আল্লাহ তায়ালার স্মরণশূন্য কথাবার্তা মনকে পাষাণ করে দেয়, আর পাষাণ হৃদয় ব্যক্তি আল্লাহর থেকে সর্বাধিক দূরে। (তিরমিজি)। হুজুর (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিল, সে তার স্থান দোজখে তৈরি করল।' (তিরমিজি শরিফ)। তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, 'সে ব্যক্তির জন্যহুজুর (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিল, সে তার স্থান দোজখে তৈরি করল।' (তিরমিজি শরিফ)। তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, 'সে ব্যক্তির জন্য আফসোস, যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে।' মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমার চালচলনে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর খাটো করো।' (সুরা লোকমান, আয়াত ১৯)। 'লোকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কথা বলো না, আর গর্বভরে জমিনে হাঁটাচলা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো আত্ম অহংকারী, দাম্ভিক লোককে পছন্দ করেন না।' (সুরা লোকমান, আয়াত ১৮)। কারো কাছ থেকে উপকার আশা করি না। শুধু এতটুকু চাই যে সে যেন সর্বনাশ করে না বসে। (শেখ সাদী রহ.)। হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা কিয়ামত দিবসে নড়াচড়া করবে না, অর্থাৎ সম্পূর্ণ হিসাব নেওয়া হবে।' তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের হক মিথ্যা শপথ করে নিয়ে যেতে চায়, তখন আল্লাহ তার জন্য দোজখের অগি্নকে ওয়াজিব করে দেন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! যদি সে বস্তুটি তুচ্ছ, নগণ্য হয় তবেও কি! রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আরাক গাছের ডালের ব্যাপারে কসম খেলেও। ওই মিথ্যাবাদীর জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং জান্নাত হারাম করা হয়েছে। (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'সবচেয়ে নিম্নস্তরের জাহান্নামি ওই ব্যক্তি, যার মুখ হয় দুটি। একজনের কাছে এক মুখ নিয়ে যায় এবং অন্যজনের কাছে অন্যটি নিয়ে যায়।' (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)। হজরত আলী (রা.) বলেন, যদি কোনো লোক তোমাকে খারাপ কথা বলে, তবে তার কথার জবাব দিও না। কেননা, হতে পারে এর চেয়েও খারাপ কোনো বাক্য তার ঠোঁটের কাছেই রয়েছে। তুমি ওর কথার জবাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে তা বলতে শুরু করবে। মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম আদর্শরূপে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মান-মর্যাদার নিশ্চয়তা প্রদান করতে গিয়ে প্রিয় নবী (সা.) আল্লাহর বাণী পেশ করেন। 'হে ইমানদাররা! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারী থেকে উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারীও যেন অপর কোনো নারীকে উপহাস না করে, কেননা যাকে উপহাস করা হয়, উপহাসকারিণী অপেক্ষা সে উত্তম হতে পারে। এবং কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে, কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে-অপরের প্রতি দোষারোপ করো না। এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গুনাহ, যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই জালিম। সত্য যাচাই করার পর কোনো কথা বলা বা প্রচার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শোনে, তার সত্যতা যাচাই না করে তা-ই বলে বেড়ায়। মহান রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের সবাইকে জীবন ধ্বংসকারী এসব কালো ব্যাধি ও শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষা করে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার তৌফিক দান করেন।। আফসোস, যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে।' মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমার চালচলনে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর খাটো

Post a Comment

0 Comments